চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জের বোয়ালজুরি খাল পুন:খননে বাংলাদেশ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুর একটি প্রকল্প প্রস্তাব পেশ করে। প্রস্তাবটিতে খালটি ক্রমান্বয়ে দিন দিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে বিধায় এবং অভ্যন্তরীণ পানি সেচের মাধ্যমে এর উভয় তীরের উৎপাদনমুখী কৃষিজমিতে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশংকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বোয়ালজুরি খালটি পুন:খননের জন্যে ঐ প্রস্তাবটি প্রেরণ করে।
এতে প্রাথমিকভাবে ১০ কোটি ৪৫ লাখ টাকার প্রকল্প প্রস্তাবটি পানি সম্পদ মন্ত্রাণালয়ে ইতোমধ্যেই পাঠানো হয়েছে।
২৬ ফেব্রুয়ারি রোববার দুপুরে দায়িত্বপ্রাপ্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড,চাঁদপুরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান ভূঁইয়া সাপ্তাহিক হাজীগঞ্জকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, সারাদেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে ৬৪ জেলার অভ্যন্তরে ছোট ছোট নদী, খাল ও খাল পুন:খনন করে দ্বিগুণ খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে সরকার গুচ্ছ প্রকল্প গ্রহণ করে। এতে প্রতি উপজেলায় ৫টি করে খাল খনন বা পুন:খনন করার প্রস্তাব পাঠাতে নির্দেশনা প্রদান করে।
এর মধ্যে হাজীগঞ্জের বোয়ালজুরি খাল পুন:খনন প্রকল্প একটি। বোয়ালজুরি খালটি হাজীগঞ্জ বাজারের দক্ষিণ দিক থেকে শুরু হয়ে সুদূর কচুয়া সাচার হয়ে মতলব উপজেলা দিয়ে মেঘনা-ধনাগোদা নদীতে পতিত হয়েছে।
এর দৈর্ঘ্য ১৭ কি.মি.। হাজীগঞ্জ ,কচুয়া ও মতলব দক্ষিণ উপজেলায় বোয়ালজুরি খালটি অবস্থিত। কিন্তু এর শুরু হয় হাজীগঞ্জ বাজার সংলগ্ন লোহার পুল হতে। এর উৎপত্তি নির্ধারণ করা হয়েছে এখানে। তাই ডাকাতিয়া নদী থেকে পানি প্রবাহের কারণে এটি সচল রাখা সম্ভব। ডাকাতিয়ার পানির কারণেই এটি অস্থিত্ব ঠিকে আছে বা থাকবে ।
বোয়ালজুরি খালটি পশ্চিম-দক্ষিণে ডাকাতিয়া নদীর সাথে সংযোগ স্থাপন করে। এ খালটি নতুন করে পুন:খনন করার একমাত্র কারণ হলো পানি সেচের মাধ্যমে কৃষকদের চাষাবাদের সুবিধা কওে দেয়া। কেননা খালটি খনন করা না হলে কৃষকদের ধানের জমিতে পানি সেচের মাধ্যমে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
২০০০ সালে পানি বোর্ড কর্তৃক সার্ভে স্টাডি করে প্রতীয়মান হয়েছে যে- প্রতিবছর বিভিন্ন কারণে খালের উভয়তীর ভেঙ্গে খালের তলদেশ ভরাট, আগাছায় পরিপুর্ণতায় পানি প্রবাহ বন্ধ ও শুষ্ক মৌসুমে পানি শুকিয়ে যাওয়া এবং পলিপড়ে নাভ্যতা হ্রাস ইত্যাদি কারণে উৎপাদন মৌসুমে পর্যাপ্ত পানির অভাবে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়ে আসছে।
হাজীগঞ্জ এর এ খালটি দিন দিন ভরাট হওয়া, খালের উভয়তীর দখল, খালে কচুরিপানা জমা, বাঁধ দিয়ে মাছ ধরা এবং অসময়ে অতিবৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি আবাদির জমির উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।কোনো কোনো বছর উপজেলার বিভিন্ন বিলের পানি জমে বীজতলা তৈরি করতে না পারাও একটি কারণ। ফলে বিলম্ব হয় বোরোসহ রবি শস্যের আবাদ।
উপজেলার বিলের পানি নামার জন্য খালে পলি মাটি জমে খালের তলদেশ অনেকটা ভরাট হয়ে গেছে। মৎস্য আহরণকারীরা খালগুলোতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে মাছ আহরণ করছে। এসব কারণে বিলের পানি নদীতে নামতে পারছে না।
চাঁদপুরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান ভূঁইয়া বলেন,‘ খাল দখল,পলিজমে খাল ভরাট, খালে কচুরিপানা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে মাছ আহরণ এবং বিভিন্ন বাজার এলাকায় খালে ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখাসহ বিভিন্ন কারণে পানি প্রবাহে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই বোয়ালজুরি খালটি পুন:খনন জরুরি হয়ে পড়েছে।
এতে এ অঞ্চলের মানুষের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। বর্ষাকালে এলাকার মানুষের নৌকা যোগে উৎপন্ন ফসল পরিবহণ সহজতর ও জলাবদ্ধতা নিরসনে সঠিক সময়ে চাষাবাদ সম্ভব হবে।
১৭ কি.মি.খালটিতে দেশীয় মৎস্য উৎপাদনে আমিষের চাহিদা পুরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। শীত মৌসুমে উভয়তীরে স্থানীয় অধিবাসীগণ বিপুল পরিমাণ শাক-সবজি ও নানা রকম ফল-ফলাদি উৎপন্ন করতে পারবে।
হাঁস-মুরগি প্রতিপালনে কৃষাণ-কৃষাণীদের সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবে বোয়ালজুরি খাল। সুতরাং খালটিতে পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলে এ তিন উপজেলায় খাদ্য উৎপাদনে একটি বৈপ্লিক পরিবর্তন সূচিত হবে। এ অঞ্চলের গ্রামীণ হতদরিদ্র মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরবে। ’
আবদুল গনি,
১ মার্চ ২০২৩