বাংলা নতুন বছরের শুরুতেই কালবৈশাখী ও বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনায় উৎসব রূপ নিয়েছে বিষাদে। গত বৃহস্পতিবার ভোর থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝড়-বজ্রপাতে ১০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছেন অনেকে।
কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় বজ্রপাতে দুই শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন এক নারী। গতকাল দুপুরে উপজেলার পৃথক স্থানে বজ্রপাতে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইল তাবেলারচর গ্রামের সাহাব উদ্দিন (৬০) এবং পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার গজালিয়া গ্রামের সাহাব উদ্দিন (৪৫)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, এদিন দুপুরের দিকে তাবেলারচর গ্রামে সাহাব উদ্দিন লবণ তুলতে গিয়ে হঠাৎ বজ্রপাতের কবলে পড়েন। প্রায় একই সময়ে বজ্রপাতের কবলে পড়েন সাহাব উদ্দিন নামের আরও এক ব্যক্তি। তিনি কুতুবদিয়া চ্যানেলে বালু পরিবহনের কাজ করছিলেন। পরে তাঁদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম উভয়কে মৃত ঘোষণা করেন।
কুতুবদিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ওমর হায়দার জানান, কুতুবদিয়ায় বজ্রপাতে দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন এবং এক নারী আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। নিহত ব্যক্তিদের লাশ তাঁদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় পৃথক স্থানে বজ্রপাতে তিনজন নিহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার পৃথক তিনটি স্থানে এ ঘটনা ঘটে। বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদ্মাসন সিংহ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত ব্যক্তিরা হলো বানিয়াচং সদরের তাতারি মহল্লার আক্কেল আলীর ছেলে মোহাম্মদ হুসাইন আলী (১২), জাতুকর্ণপাড়ার আব্দুর রহমানের মেয়ে ঝুমা বেগম (১২) এবং পুকড়া ইউনিয়নের এড়ালিয়া গ্রামের সামছু মিয়ার ছেলে আলমগীর মিয়া।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মলয় কুমার জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে ৯টার মধ্যে তিনটি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন নিহত হন। তাঁদের মধ্যে হুসাইন আলী হাওরে ঘাস এবং আলমগীর মিয়া ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতের কবলে পড়েন। আর গাছ থেকে পেঁপে পাড়তে গিয়ে বজ্রপাতের কবলে পড়েন ঝুমা। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁদের মৃত্যু হয়। নিহত ব্যক্তিদের
প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন পিআইও।
নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বানিয়াচং থানার ওসি মো. এমরান হোসেন।
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নাছিরপুর গ্রামে বজ্রপাতে বাবা-ছেলের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে হাওরে ধান কাটতে গিয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন মকবুল খাঁ (৫০)। এ সময় আহত হয় তাঁর দুই ছেলে মাসুদ খাঁ (৭) ও ইমন খাঁ (১১)। তাঁদের উদ্ধার করে আজমেরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মাসুদ খাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে কালবৈশাখী ঝড়ে ঘরের ওপর গাছ পড়ে ঘুমের মধ্যেই দুই শিশুসহ মায়ের মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভোরে উপজেলার পাটলী ইউনিয়নের সুলেমানপুর গ্রামে মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন পাটলী সুলেমানপুর গ্রামের হারুন মিয়ার স্ত্রী মৌসুমী বেগম (৩৫) এবং তাঁর ছেলে হোসাইন মিয়া (১) ও মেয়ে মাহিমা আক্তার (৪)।
স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, হারুন মিয়া নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার বাসিন্দা। তবে দীর্ঘদিন ধরে জগন্নাথপুর উপজেলায় পাটলী ইউনিয়নের সুলেমানপুর গ্রামে এক প্রবাসীর বাড়িতে কেয়ারটেকার হিসেবে বসবাস করে আসছেন। বৃহস্পতিবার হারুন মিয়ার স্ত্রী মৌসুমি বেগম তাঁর দুই সন্তান নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। ভোরে উপজেলার ওপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে গেলে টিনশেড ঘরের ওপর গাছ পড়ে তিনজনেরই মৃত্যু হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জগন্নাথপুর থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।