চাঁদপুরের ডিএন হাই স্কুলটি ছিল বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষক আন্দোলনের ভ্যানু

চাঁদপুরের ডি এন হাই স্কুলটি ছিল বেসরকারি স্কুল,কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষক আন্দোলনের ভ্যানু ও জেলা সদরে অবস্থানরত শিক্ষকদের মিলনস্থল। বর্তমানে এর সংযোজিত নাম দ্বারকানাথ হাই স্কুল। এখান থেকেই সকল প্রকার সভায় বাকশিস ও মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি কর্তৃক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হত। কেন্দ্রের সাথে স্কুলের টেলিফোনে যোগাযোগ হত সার্বক্ষণিক। তখন এর প্রধানশিক্ষক ছিলেন সাখাওয়াত হোসেন।

সন্ধ্যা হলেই বিভিন্ন উপজেলার স্কুল,কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকগণ আসা শুরু হত। সব নিয়েই একটি প্রাণচাঞ্চল্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হতো। রাত ১১টা পর্যন্ত চলত মান্যবর শিক্ষকদের বিচরণ, আলাপ-আলোচনা ও চা-চক্র। স্ব-স্ব শিক্ষক নেতাগণের পকেটের পয়সায় চলত শিক্ষক সংগঠন।

জেলার এমন কোনো প্রতিষ্ঠান প্রধান নেই যে মাসের কোনো না কোনো দিন বেসরকারি শিক্ষক আন্দোলনের ভ্যানু ও জেলা সদরে অবস্থানরত শিক্ষকদের মিলনস্থলে আসতে হতো। শুধু তাই নয়-শিক্ষক সমস্যা, প্রতিষ্ঠান সমস্যা, ম্যনেজিং কমিটি গঠনে নিয়মের-অনিয়ম ও অনিয়মের- নিয়ম সম্পর্কে এ্যাডভোকেসি পরামর্শ দেয়া-নেয়ার জন্যে প্রধান শিক্ষকদের আসতে হতো। মাঝে-মধ্যে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা,ক্রীড়া কর্মকর্তা, ম্যানেজিং কমিটির অনেক সদস্য, শিক্ষক সংক্রান্ত বিষয়ে সন্ধ্্যায় ডি এন হাই স্কুলে আসতে হত।

আন্দোলন মুহুর্তে ব্যানার, পোস্টার, রিফলেট, মাইক, চা-চত্রু ও টাইপিং খরচ হতো শিক্ষক নেতৃবৃন্দের উদার হস্তের বদৌলত্।ে ছিলোনা তাদের মধ্যে কোনো কৃপণতা। অনেক শিক্ষক পত্রিকা পড়ার জন্যেও চলে আসতেন। এটাও দেখা গেছে- ডিএন স্কুলের কাচাকাছি বাসা ভাড়া নিতেন।

শিক্ষক-ম্যানেজিং কমিটির অন্তদ্বন্দ্ব মিটাতে অনেক ধ্যান-দরবার করতে হতো। ডিএন স্কুলের পরের অবস্থান ছিল-গনি মডেল স্কুলটি। বশিরভাগ সিদ্ধান্ত দিতেন তৎকালীন আক্কাছ আলী রেলওয়ে একাডেমির প্রধানশিক্ষক আলী মোহাম্মদ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সাখাওয়াত হোসেন। কত ত্যাগই না ছিল শিক্ষক নেতৃবৃন্দের।

শিক্ষকতা, শিক্ষক সংগঠন আর পারিবারিক বিষয় ব্যতীত তাঁদের জীবনে অন্যকিছু ছিল না। বর্তমানে সময় ও কালের আবর্তে সব স্মৃতিই যেন মুছে যাচ্ছে। বাকশিসের বিষয়গুলো বাকশিস নেতা ড.আলমগীর কবির পাটওয়ারী,অধ্যক্ষ সাফায়াত আহমদ ভূঁইয়া,অধ্যক্ষ রুহুল আমিন,অধ্যাপক সফিউল আযম শাহাজাহান দেখতেন। তবে শিক্ষা,শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ বিচার-বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতেন-যা সকলেরই গ্রহণযোগ্য হত। নকলমুক্ত পরীক্ষাগ্রহণে সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবাায়নে তাঁরা ছিলেন অটল।

নেতৃত্ব দিতেন – দেশ, জাতি ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষার উন্নয়নের জন্যে আর নকলমুক্ত পরীক্ষা গ্রহণে ছিলেন সোচ্চার। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে ছিলেন সজাগ ও নিবেদিতপ্রাণ।

h

চাঁদপুরের বেসরকারি স্কুল, কলেজ,মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি আদায়ের কঠিন আন্দোলন-সংগ্রামে বাকশিসসহ কেন্দ্রিয় ৩৭টি শিক্ষক সংগঠনের নেতৃত্বদানকারী‘জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্টে’র ব্যানারে শিক্ষকদের রুটি-রুজি ও আত্মমর্যাদা রক্ষার আন্দোলনে সরাসরি নেতৃত্ব দেন পরবর্তী চাঁদপুরের কিংবদন্তী শিক্ষক নেতৃবৃন্দ। তৎকালীন ইস্পাতকঠিন শিক্ষক আন্দোলনের মাঠে ছিলেন বর্তমান প্রিয় শিক্ষক নেতৃবৃন্দ।

তৎকালীন বেসরকারি শিক্ষকদের মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের অন্যতম নেতা প্রধানশিক্ষক মরহুম সাখাওয়াত হোসেন ও অপরদিকে বাকশিস নেতা শিক্ষকদের দাবি আদায়ের অবিসংবাদিত নেতা অধ্যক্ষ সাফায়াৎ আহমদ ভূঁইয়ার আহবানে চাঁদপুরের ‘শিক্ষক-কর্মচারীদেরকে দাবি আদায়ের আন্দোলনের ‘ ভ্যান ু’ নামে খ্যাত ‘ডিএন উচ্চ বিদ্যালয়ে’ চাঁদপুর জেলা বাকশিসের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন অধ্যক্ষ ড. মো.আলমগীর কবির পাটওয়ারী।

১৯৯৪ সালে ড.আলমগীর পাটওয়ারী সম্মেলনের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি একদিকে বাকশিসের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ অপর দিকে তরুণাদীপ্ত নেতৃত্ব দিয়ে সকল কলেজ শিক্ষকদের একটি প্লাটফ্রমে রেখেছেন। যা আজও বিদ্যমান রয়েছে।

বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি বাকশিসের সভাপতির দায়িত্বগ্রহণ করে জেলার কলেজ শিক্ষকদের এক ও অভিন্ন ধারায় আনতে সক্ষম হন। কলেজ শিক্ষকদের আগলে রাখেন নেতৃবৃন্দ। আন্দোলনে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি চাঁদপুরে সংগঠনের জন্যে বেশ কজন নেতৃবৃন্দ সময়, অর্থ, দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন, উপদেশ দিয়ে এর গতি সঞ্চার করে রেখেছে।

কখনো আবেগজড়িত,কখনো বা জ্বালাময়ী বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদেরকে দাবি আদায়ের রাজপথের আন্দোলনে নিয়ে আসার মত দক্ষতা ও সঠিক নেতৃত্ব দানে ছিলেন অধ্যক্ষ ড.আলমগীর কবির পাটওয়ারী, অধ্যক্ষ সাফায়াৎ আহমেদ ভূঁইয়া,অধ্যক্ষ রুহুল আমিন,অধ্যক্ষ আবুল হাসানাত, অধ্যক্ষ তরিক উল্লা,অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ,অধ্যাপক মোশারফ হোসেন,অধ্যক্ষ ছালামত উল্লাহ, অধ্যক্ষ আযারুল কবির, অধ্যক্ষ মেজবাউদ্দিন, অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, অধ্যাপক জাকির হোসেন, অধ্যাপক সফিউল আযম শাহাজাহান, অধ্যাপক হাসান আলী, অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ,অধ্যাপক আলাউদ্দিন,অধ্যাপক নুরে আলম।

চাঁদপুর জেলার ৪৭টি কলেজ শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি আদায়ের জন্যে মাঠে নেতৃত্ববৃন্দ ছিলেন। বাকশিস এর পাশাপাশি শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন, জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্ট ও পরবর্তীতে শিক্ষক সংগ্রাম পরিষদ এর ব্যানারে মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রধানশিক্ষক মরহুম সাখাওয়াত হোসেন, প্রধানশিক্ষক মরহুম আলী মোহাম্মদ,মরহুম প্রধানশিক্ষক নুর হোসেন, মতলবের প্রধানশিক্ষক শহিদুল্লাহ প্রধান,শাহরাস্তির প্রধানশিক্ষক মরহুম ছিদ্দিকুর রহমান,মতলবের প্রধানশিক্ষক জয়নাল আবদীন,মরহুম প্রধানশিক্ষক বোরহান উদ্দিন, প্রধানশিক্ষক আব্বাস উদ্দিন,পংকজ বিহারী,ছায়া পোদ্দার,মোমেনা খাতুন, প্রয়াত অরুণ মজুদার,প্রধানশিক্ষক সূর্যকুমার নাথ,ফরিদগঞ্জের মরহুম সিরাজুল ইসলাম, হাজীগঞ্জের প্রধানশিক্ষক সাহাজান আলী ও সহকারী শিক্ষক মুজিবুর রহমান, প্রধানশিক্ষক মো.খোরশেদ আলম,মতলবের শিক্ষক নেতা মো.বিলাল হোসেন, কামরুজজামান হারুন, জয়নাল আবদীন, ফরিদগঞ্জের মরহুম মাও.সালাউদ্দিন,সদরের মরহুমা কানিজ বতুল চৌধুরী প্রমুখ। আমি প্রতিবেদক আবদুল গনি ছিলাম জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্টের প্রচার সম্পাদক ও পদ-পদবিহীন বাকশিসের ঘোষিত মিডিয়া পার্সন।

১৯৯৭ সালে চাঁদপুরের মাধ্যমিক শিক্ষক সংগঠনটি দু’ভাগে বিভক্ত হলেও চাঁদপুর কলেজ শিক্ষক সমিতি আজও এক ও অভিন্ন ধারায় রয়েছে। শিক্ষক আন্দোলনে আলাদা ব্যানারে ছিলেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির প্রয়াত অরুণ মজুদার,প্রধান শিক্ষক পংকজ বিহারী,জেলা আহবায়ক প্রধান শিক্ষক নঈম উদ্দিন খান,সদস্য-সচিব মোহাম্মদ হোসেন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। এ সংগঠনটিও ছিল- দেশের শিক্ষকদের দাবি আদায়ের যুগপৎ অংশীদার।

চাঁদপুরে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রাপ্তি আদায়ে যাঁদের ভূমিকায় আজ শতভাগ বেতনভাতা,বাড়ি ভাড়া ভাতা, আংশিক হলেও উৎসব ভাতা,মেডিক্যাল ভাতা, কল্যাণ তহবিল ও অবসরসুবিধা বোর্ড গঠন,অষ্টম জাতীয় স্কেলভূক্ত হতে পেরেছে। এদের বেতনের টাকায় সংসারের ব্যয়-ভার বহনের মত সিংহভাগ শিক্ষক সংগঠনের সব কিছুই বাকশিস নেতৃবৃন্দ ব্যয় করেছেন।

বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি ও জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্টের ব্যানারে জেলা ও কেন্দ্রিয় পর্যায়ের আন্দোলনে বিভিন্ন কর্মসূচির রূপরেখা প্রনয়ণে কেন্দ্রিয় কমিটির ডাকে ঢাকায় প্রতিনিধিত্ব করে বা সভায় যোগদান করে দাবি আদায়ের গতিকে তরান্বিত করতে জ¦লাময়ী বক্তৃতা প্রদান করেন। বাড়িভাড়া বৃদ্ধি ও উৎসব ভাতার দাবিতে ২০০২ সালে কেন্দ্রিয় শহিদ মিনারে অনশন ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন। ঔ অনশন ধর্মঘটে ঢাবির ভাইস চ্যাঞ্জেলর সংহতি প্রকাশ করেন।

স্বাধীনতাত্তোর স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রাপ্তি আদায়ে যাঁদের ভূমিকায় আজ শতভাগ বেতনভাতা,বাড়ি ভাড়া ভাতা, মেডিক্যাল ভাতা,কল্যাণ তহবিল গঠন ও অবসরসুবিধা, অষ্টম জাতীয় স্কেল পেয়েছি-তাদেরকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা উচিত। শিক্ষা আমাদের দেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার। এ শিক্ষার সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত দেশের শিক্ষক সমাজ। তাই এদেরকে বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। অথচ ওই শিক্ষকরা নূন্যতম বেঁচে থাকার তাগিদে স্বাধীনতার ৫৪ বছরে মাথায় এসে এ পর্যন্ত যা পেয়েছে তা আন্দোলনের মাধ্যমে আদায় করেছে।

স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পার হলেও বেসরকারি স্কুল ও কলেজ শিক্ষকদের ১শ’ ভাগ বেতন ভাতার বিষয়টি পূরণ হলে বৈষম্য রয়েই গেছে। দেশে বর্তমানে ২৬ হাজার বেসরকারি স্কুল, কলেজে পৌনে ৫ লাখ শিক্ষক কর্মচারী রয়েছে। এদের মধ্যে মাত্র ৩ শতাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠান। ফলে দেশের ৯৮% ছাত্র-ছাত্রীই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করছে।

১৯৭৩ সালে ঢালাওভাবে ৩৭ হাজার প্রাথমিক স্কুল ও শিক্ষকদের চাকুরি জাতীয়করণ করার সময় মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাকেও পর্যায়ক্রমে সরকারি করবেন বলে একটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর পরবর্তী সরকারগুলো নানাবিধকারণে তারাও প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন। অতীতের প্রতিটি সরকারের আমলে শিক্ষকরা ধর্মঘট, হরতাল, কর্মবিরতি, সমাবেশ, মহাসমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন কর্মসূচি স্মারকলিপি পেশ, আলোচনা, পর্যালোচনা, মিটিং, মিছিল, কালো ব্যাচ ধারণ, কালো পতাকা উড্ডয়ন, এমপি-মন্ত্রীদের সাথে সাক্ষাত ও ১ শ’ টাকায় ঘর বানিয়ে রাত্রি যাপন ইত্যাদি কর্মসূচিগুলো দাবি আদায়ের লক্ষ্যে পালন করছে।

অধ্যক্ষ কামরুজামান ও জয়নাল আবেদিন চৌধুরীর নেতৃত্বে দেশের স্কুল ও কলেজ শিক্ষক কর্মচারীরা এ আন্দোলন করে। এতে প্রায় ৩ মাস ধর্মঘট চলছিল। আ.ফ.ম খলিলুর রহমান ও প্রফেসর শরীফুর ইসলামের নেতৃত্বে কলেজ শিক্ষকরাও ঐ সময় ৪ মাস ধর্মঘট করে। তখন বছরে একবার স্কুল ও কলেজের শিক্ষকরা বেতন পেত মাসিক ২০ টাকা হারে একত্রে এবং কলেজের শিক্ষকরা পেত ৫০ টাকা – ৭০ টাকা। এ আন্দোলনের ফলে তৎকালীন সরকার স্কুল ও কলেজের শিক্ষকদের বেতন ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা এবং কলেজের শিক্ষকদের বেতন ৭০ টাকা-৮০ টাকায় উন্নীত করেন।

তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী প্রফেসর মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী শিক্ষার মান বাড়াতে শিক্ষকদের বেতন দু’শ টাকায় বাড়ানোর উদ্যোগ নিলেও পরবর্তীতে তা লাল ফিতার চাপে তখন থেমে যায়। এরপর ১৯৭৯ সালে তৎকালীন শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতারা দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন।

তৎকালীন মন্ত্রী আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন নির্ধারণের জন্য তখন তিনি একটি কমিটি গঠন করেন। ঐ কমিটির অন্যান্য সদস্য ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান, স্কুল শিক্ষকদের পক্ষে শিক্ষক নেতা আবদুল মান্নান, কলেজ শিক্ষকদের পক্ষে অধ্যক্ষ শহীদুল্লাহ। পরবর্তীতে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন করে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন কাঠামোতে জাতীয় স্কেলভ’ক্ত করার জোর দাবি জানান।

১৯৮০ সালের ১ জানুয়ারি শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়া-উর-রহমান বেসরকারি শিক্ষকদের দাবির প্রেক্ষিতে দেশের বেসরকারি স্কুল,কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরিদের জাতীয় স্কেলে ৫০% বেতন ভাতার প্রথা চালূ হয়। ্তখন এর নাম দেয়া হয় বেসরকারি স্কুল,কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষকদের সরকারি অনুদান। ১৯৮২ সালের জুলাই থেকে শিক্ষকগণকে ১৫% মহার্ঘ্য ভাতা দেন। যা ১৯৮৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পান।

১৯৮৩ সালের মার্চ হতে শিক্ষকদের দাবির পরিপেক্ষিতে ওই ১৫% থেকে আরো ১৫% মহার্ঘ্য ভাতা বৃদ্ধি করে ৩০% উন্নীত করেন। এরপর বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা আবার আন্দোলনে নামেন। ফলে ১৯৮৪ সালের ১ জানুয়ারি হতে সর্বপ্রথম বেসরকারি স্কুল ও কলেজ শিক্ষকদের বেতন ভাতা ঐ ৫০% এম পিও প্রথার মাধ্যমে ৩ মাস অন্তর অন্তর দেয়া শুরু করেন। শিক্ষকদের পৃথক পৃথক ইনডেক্স্র নাম্বার সেট করা হয়।

শিক্ষকদেও বেতন তখন ব্যাংকের কাঁচের দেয়াল ভেদ করে আসতে পাঁচ মাসের মাথায় পেত। আর শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রতিষ্টান প্রধান ব্যাগে করে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে স্কুলে বন্টন করতেন। এতে কিছুটা হলেও শিক্ষক-কর্মচারদের চাকুরির ভীত মজবুত হয়। কেননা স্কুল ম্যানেজিং কমিটির দাপটে অনেক শিক্ষক-কর্মচারদের চাকুরি চলে যেত কিংবা কথায় কথায় চাকুরি থেকে বাদ দেয়ার কথা বলতেন।

বাকশিস সংগঠনের নেতৃবৃন্দ পরবর্তীতে শিক্ষকদের পেশাগত মর্যাদা বৃদ্ধিতে ১৫ দফা, পরীক্ষা সংস্কারে ৭ দফা ও শিক্ষা সমাপনিতে শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে দাবি নামা পেশ করে। ৩৭টি শিক্ষক সংগঠন মিলে জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্ট গঠন করে রক্তে লেখা স্মারকলিপিতে ৮ দফাদাবি বাস্তবায়নে সরকারের কাছে পেশ করে।

পরবর্তীতে শিক্ষার সার্বিক স্বার্থে ২১ দফা পেশ করে। ২০১০ সালে সরকারের গৃহীত জাতীয় শিক্ষানীতির আলাকে স্থায়ী শিক্ষা কমিশন ও শিক্ষা আইন প্রনয়নে সংসদে পেশ করার প্রস্তাব দেয় বাকশিস। এ ছাড়াও অনুদান শব্দের পরিবর্তে বেতনের সরকারি অংশ উল্লেখ করার প্রস্তাব পেশ করে। ১৯৮৬ সালে শিক্ষকরা বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতৃত্বে আন্দোলনের অবস্থান নেন। পরে ঢাকার বিজয় স্মারণীতে মাও.এম.এ মান্নানের পরিবর্তে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদকে ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়। উদ্দেশ্য- ছিল-শিক্ষক কর্মচারীদের দাবি আদায় করা। যা শিক্ষকগণ ১৯৮৬ সালের মার্চ পর্যন্ত পান।

শিক্ষকদের দাবিতে ১৯৮৬ সালের জুলাই হতে শিক্ষক-কর্মচারীদের ১০% বেতন ভাতা বাড়িয়ে ৭০% উন্নীত করেন। যা শিক্ষকগণ ১৯৮৯ সালের জুন পর্যন্ত পান। তিনি শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্যে কল্যাণ ট্রাস্ট গঠনেরও ঘোষণা দেন।

১৯৮৯ সালের জুলাই মাসে শিক্ষকদের সরকারি বেতনভাতা ঠিক রেখে কেবলমাত্র ১০% মহার্ঘ্যভাতা প্রদান করেন। এ ছাড়াও ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারিদের প্রচলিত বেতন স্কেল পরিবর্তন করে ৭শ’ টাকার স্থলে ৮শ’ টাকায় উন্নীত করেন। এরপর সরকার ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর থেকে পুর্ববর্তী সব ঠিক রেখে ২০% আবার মহার্ঘ্য ভাতা প্রদান করেন।

১৯৯২ সালের জুলাইতে নতুন জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তভর্’ক্ত করেন। যা শিক্ষক কর্মচারীগণ ১৯৯৪ সালের জুন পর্যন্ত বেতন ভাতা পান। ১৯৭৮-’৯০ সাল পর্যন্ত চাঁদপুরে বাকশিসের প্রথম সভাপতি ছিলেন তৎকালীন পুরাণ বাজার কলেজের অধ্যক্ষ মো.তারিক উল্লা ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন অধ্যাপক মনিরুজ্জামান।

প্রেসিডেন্ট হূসাইন মোহাম্মদ এরশাদের সভায়,পল্টনের সভায় ও রাজপথে, ১৯৯৪ সালের চড়াই-উৎরাই শিক্ষক আন্দোলনের নেতৃত্বে, এসএসসি পরীক্ষা বর্জন আন্দোলন ও ধর্মঘট, প্রেস ক্লাবের সামনে সরকারি প্রেস নোট পুড়িয়ে দেবার সময়,১৯৯৭ সালের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী এএইচএম সাদেক এর আহবানে জাতীয় শিক্ষক সমাজের দাবি আদায়ের গোল টেবিল সভায় যোগদান,অনশনে রাতে শহিদ মিনারেই রাত্রি যাপন, ঢাকার প্রতিটি প্রতিনিধি সভায় অত্যন্ত গঠনমূলক বক্তৃতা দিয়ে বা দিকনির্দেশনামূলক সভায়, কেন্দ্রিয় শহিদ মিনাে অনমন পালনে, ফরহাদ মানসিংহ ভবনে আন্দোলনের রূপরেখা দাঁড় করাতে ও শিক্ষকদের দাবি দাওয়া-আদায়ে অবদান রেখেছেন চাঁদপুরের শিক্ষক নেতৃবৃন্দ।

লেখক : আবদুল গনি , শিক্ষক ,প্রাবন্ধিক ও গণমাধ্যম কর্মী , চাঁদপুর । ১ ডিসেম্বর ২০২৫।

২ ডিসেম্বর ২০২৫
এজি