‘বেশি লোক পেতেই শিক্ষার্থীদের ওপর গাড়ি তুলে দিয়েছি’

রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপা দিয়ে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে জাবালে নূর বাসের চালক মাসুম বিল্লাহ। গতকাল বুধবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে সে বলে, ‘বেশি লোক ওঠানোর জন্য বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে বাসে ওঠার জন্য অপেক্ষমাণ ছাত্র-ছাত্রীদের গায়ের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দিয়েছিলাম। এটি ছিল ইচ্ছাকৃত।’

গত ৩১ জুলাই মাসুম বিল্লাহকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১ আগস্ট তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। গতকাল সাত দিনের রিমান্ড শেষ হওয়ার পর তাকে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাহনগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক কাজী শরিফুল ইসলাম। একই সঙ্গে তার জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার জন্য আবেদন জানান।

চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুজ্জামান হিরো আসামির জবানবন্দি নেওয়ার জন্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম নবীকে দায়িত্ব দেন। ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম নবী আসামিকে পর্যাপ্ত সময় দিয়ে তাঁর খাসকামরায় জবানবন্দি নেন।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, আসামি মাসুম বিল্লাহ আদালতকে বলেছে, ‘জাবালে নূরের তিনটি গাড়ি রেষারেষি করে মিরপুর থেকে কালশী ফ্লাইওভার হয়ে বিমানবন্দর সড়কে ঢুকছিল। এ সময় এমইএস বাসস্ট্যান্ডে বাসে ওঠার জন্য বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রী দাঁড়িয়ে ছিল। বেশি ভাড়া পাওয়ার আশায় আগে যাত্রী ওঠানোর জন্য তিনটি বাসের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছিলাম। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকায় ইচ্ছাকৃতভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর বাস উঠিয়ে দিই।’

চালক মাসুম বিল্লাহ আদালতকে আরো বলেছে, ঢাকা মেট্রো ব-১১-৯২৯৭ নম্বরের জাবালে নূর বাসের চালক ছিল সে। ওই বাসের নিচে চাপা পড়েই দুজন শিক্ষার্থী নিহত হয়। আরো ৮ থেকে ১০ জন আহত হয়। আহতরা গুরুতর জখম হয়েছে বলে সে জানতে পেরেছে।

মাসুম বিল্লাহ আদালতকে বলে, ২৯ জুলাই যখন এই ঘটনা ঘটে সঙ্গে সঙ্গে সে বাস থেকে নেমে পড়ে। তখন জনরোষের ভয়ে সে পালিয়ে যায়। সে আরো বলে, ‘আমার বাসের নিচে চাপা পড়েই ছাত্ররা গুরুতর জখম হয়। দুজন মারা যায়।’ আসামি মাসুম বিল্লাহকে জবানবন্দি শেষে কারাগারে পাঠানো হয়।

গত ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে এমইএস বাসস্ট্যান্ডে জাবালে নূর পরিবহনের তিনটি গাড়ির রেষারেষিতে একটি বাস শিক্ষার্থীদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে দুজন নিহত হয়। একই ঘটনায় আহত হয় আরো ১০-১৫ জন শিক্ষার্থী। দুর্ঘটনার দিন থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। এক সপ্তাহেরও বেশি সময় সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।

জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস চাপা দিয়ে হত্যা করে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মীম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল করিম রাজিবকে। ওই দিন রাতেই মীমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা দায়ের করেন।

জাবালে নূর পরিবহনের অন্য দুটি বাসের দুই চালক ও দুই হেলপারকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। গত ৬ আগস্ট তাদের রিমান্ডে নেওয়া হয়। জাবালে নূরের এক মালিককেও রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

Share