Home / লাইফস্টাইল / ডালিম খেলে কি সত্যিই রক্ত বাড়ে?
বেদানা খেলে কি সত্যিই রক্ত বাড়ে?

ডালিম খেলে কি সত্যিই রক্ত বাড়ে?

বাংলাদেশে অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা অতিপরিচিত একটি সমস্যা। বিশেষ করে নারীদের মধ্যে হিমোগ্লোবিন ঘাটতির হার বেশি। এমন ক্ষেত্রে খাদ্যতালিকায় ফলমূল যুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয় প্রায়শই। আর রক্ত বৃদ্ধির জন্য ডালিম খাওয়ার পরামর্শও পাওয়া যায়। কিন্তু অনেকের মনেই প্রশ্ন আসে, ডালিম খেলে কি সত্যিই শরীরে রক্ত বাড়ে? লিনা আক্তার বলেন, ‘ডালিম আক্ষরিক অর্থে রক্ত বৃদ্ধি করে না। তবে এটি রক্ত সম্পর্কিত পরিমাপ—যেমন: হিমোগ্লোবিন, হেমাটোক্রিট, আয়রনের অবস্থা ও রক্ত সঞ্চালনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘এটি রক্তে অক্সিজেন বহন ক্ষমতা বা আয়রনের মাত্রা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।’

এ বিষয়ে বুঝতে হলে প্রথমে ডালিমের পুষ্টি উপাদান ও রক্ত তৈরিতে কি ভূমিকা রাখে তা জানতে হবে। ডালিম প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও খনিজসমৃদ্ধ একটি ফল। প্রতি ১০০ গ্রাম ডালিমে থাকে—এই উপাদানগুলো শরীরের রক্ত তৈরির প্রক্রিয়ায় সহায়ক ভূমিকা রাখে।

আয়রন হিমোগ্লোবিন তৈরির মূল উপাদান। রক্তস্বল্পতার প্রধান কারণ হলো শরীরে পর্যাপ্ত আয়রন না থাকা। ডালিমে আয়রন আছে, তবে পরিমাণ মাঝারি। তাই এটি সহায়ক, কিন্তু প্রধান উৎস নয়। আয়রন হিমোগ্লোবিন তৈরিতে প্রয়োজন হয়, যা অক্সিজেন বহনে সাহায্য করে।

ভিটামিন সি খাবারের আয়রন শোষণের ক্ষমতা বাড়ায়। ডালিমের ভিটামিন সি উদ্ভিজ্জ খাদ্যের আয়রন সহজে শোষণে বিশেষ ভূমিকা রাখে। যারা পালং শাক, কলমি শাক, ডাল, বিট ইত্যাদি আয়রন উৎসের সঙ্গে ডালিম খান, তাদের শরীরে আয়রন শোষণ ক্ষমতা বাড়ে।

ফোলেট নতুন রক্তকণিকা তৈরিতে প্রয়োজনীয়। ফোলেটের ঘাটতি থাকলে শরীরে নতুন রক্তকণিকা কম তৈরি হয়। ডালিমের ফোলেট রক্ত তৈরি প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তকণিকাকে রক্ষা করে। ডালিমে থাকা পলিফেনল, এলাজিক অ্যাসিড ও অ্যান্থোসায়ানিন রেড ব্লাড সেলকে অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এতে রক্তকণিকার আয়ু বৃদ্ধি পায়।

অনেকেই মনে করেন ডালিম বা ডালিম আয়রনের সমৃদ্ধ উৎস এবং প্রতিদিন ডালিম খেলেই রক্ত বাড়ে। কিন্তু, এটি আসলে একটি প্রচলিত মিথ। ডালিমে আয়রন থাকলেও এটি নন–হিম আয়রনের উৎস। একটি ভালো নন–হিম আয়রন উৎসে অন্তত ২০ শতাংশ আয়রন থাকা প্রয়োজন। কিন্তু ডালিমে মাত্র ০.৩ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম।

তবে ডালিমের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—এটি ভিটামিন সি–এর একটি ভালো উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম ডালিমে প্রায় ১২.৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়, যা শরীরকে অন্যান্য খাবার থেকে আয়রন শোষণে সাহায্য করে। এটি আয়রনকে ফেরিক রূপান্তরিত করতে এবং আয়রনের আরও ভালো শোষণে সহায়তা করার জন্য উপকারী প্রভাব ফেলে।

আমাদের শরীর সাধারণত ব্যবহৃত আয়রনের ৩ শতাংশ শোষণ করে। এর কারণ হলো, আমাদের অন্ত্র সহজেই আয়রন শোষণ করে না। ডালিমে থাকা ভিটামিন সি-এর উচ্চ পরিমাণ আমাদের শরীরকে ফলের মধ্যে উপস্থিত আয়রন ভিটামিন সি হিসেবে শোষণ করতে পারে, যা আয়রন বিপাকের জন্য প্রয়োজন।

নিয়মিত ডালিম খেলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে, তবে নন-হিম আয়রন হিসেবে ডালিমকে আয়রনের উৎস হিসেবে এর ওপর নির্ভর করা যাবে না।

এ ছাড়া, রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত ব্যক্তির কোন খাবারে বা কী কারণে রক্তস্বল্পতা, কোন ধরনের রক্তস্বল্পতা আছে তার ওপর ভিত্তি করে ডায়েট বা চিকিৎসা করা প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, কোনো ব্যক্তি যদি নিরামিষাশী হন, তাহলে তার ভিটামিন বি১২ ঘাটতির কারণে রক্তস্বল্পতা হতে পারে। ভিটামিন বি১২ শুধুমাত্র প্রাণীজ খাবারেই পাওয়া যায়।

আবার অনেকেরই ধারনা, ডালিম লাল রংয়ের বলে এটা হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির জন্য ভালো। এটিও ভুল ধারণা। সবজি থেকেও আয়রনের মাত্রা বাড়ানো যায়। যেমন: লাউ, টমেটো, আলু ইত্যাদি।


তথ্যসূত্র: অনলাইন ডেস্ক