কুমিল্লা শহরে জন্মনেয়া উপমহাদেশের প্রখ্যাত সুরকার ও সংগীত শিল্পী শচীন দেববর্মণ এবং নবীনগরে জন্মনেয়া শাস্ত্রীয় সংগীতের আচার্য সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর পৈত্রিক বাড়ীতে জাদুঘর নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
এই দুই কিংবদন্তী সংগীতজ্ঞের ঐতিহাসিক বাড়ী দুইটি জাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যায় কি-না এ লক্ষ্যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ।
কমিটির তিন সদস্য আজ কুমিল্লা নগরীর চর্থায় অবস্থিত প্রখ্যাত সুরকার ও সংগীত শিল্পী শচীন দেববর্মণের বাড়ী পরিদর্শন করেছেন। এসময় কমিটির সদস্যগন শচীনের বাড়ী এবং বাড়ীর বড় অংশজুড়ে স্থাপিত সরকারী হাঁস-মুরগীর খামার পরিদর্শন করেন।
এসময় কমিটির আহবায়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কর্মকর্তা মোঃ সেরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে কমিটির অন্য দুই সদস্য মোহাম্মদ মনিরুল হক ও মোঃ আব্দুল কুদ্দুস এবং কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি সহকারী কমিশনার হাচিবুর রহমান পরাগ, কুমিল্লা জেলা কালচারাল অফিসার মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ, গবেষক এডভোকেট গোলাম ফারুক, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব বদরুল হুদা জেনু, ঐতিহ্য কুমিল্লার সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল, চলিচ্চিত্র মঞ্চের আহবায়ক ও বাচিক শিল্পী খায়রুল আনাম রায়হান, কুমিল্লা সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সহকারী অধ্যাপক মাসুদ মজুমদার, আবৃত্তি শিল্পী ও সংগঠক মাহতাব সোহেল, সংস্কৃতিজন সফিকুল ইসলাম ও সাম-আল-মামুন, জেলা শিল্পকলা একাডেমীর প্রতিনিধি আলমগীর হোসেন সহ কুমিল্লার সংস্কৃতি অঙ্গণের বিশিষ্টজন উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে প্রতিনিধি দল নবীনগরের শিবপুরে সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর বাড়ী পরিদর্শন করেন। এসময় নবীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজীব চৌধুরী, নবীনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) খালিদ বিন মনসুর, শিবপুর সুর সুম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) এস এম রেজাউল কবির, সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, মাছরাঙা টিভি, বাংলাদেশ বেতার ও দি টাইমস অব বাংলাদেশ এর সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল, কালের কন্ঠের আঞ্চলিক প্রতিনিধি গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু, নবীনগর প্রেসক্লাব সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব প্রতিনিধি মোহাম্মদ হোসেন শান্তি, অংকুর শিশুকিশোর সংগঠন এর সভাপতি আনিছুল হক রিপন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম আহাদ এবং স্থানীয় সাংবাদিক, হেদায়েত উল্লাহ ও জুয়েল রানা সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
দুই দিনের সরেজমিন পরিদর্শন কালে প্রতিনিধি দল কুমিল্লা জেলা প্রশাস মোঃ আমিরুল কায়ছার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেরা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম এর সাথে সাক্ষাৎ করেন।
শচীন দেব বর্মণ ১৯০৬ সালের ১ অক্টোবর কুমিল্লা জেলা শহরের এই বাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে ১৮৬২ সালে জন্মগহণ করেন।
উল্লেখ্য যে, গত ০৮ সেপ্টেম্বর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক তানজিম ওয়াহাব থেকে এক অফিস আদেশ বলা হয়েছে- ‘‘বিংশ শতাব্দীর বাংলা ও হিন্দী গানের কিংবদন্তীতুল্য ও জনপ্রিয় সঙ্গীত পরিচালক, সুরকার, গায়ক ও লোকসঙ্গীতশিল্লী শচীন দেব বর্মণ ১ অক্টোবর ১৯০৬ সালে কুমিল্লা জেলা শহরের টিপ্লেরা প্রাসাদে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব কেটেছে কুমিল্লোতেই। যদিও তাঁর পিতা ত্রিপুরার মহারাজা ছিলেন। এই প্রসাদেই তিনি তাঁর সংগীত জীবনের অনেক সময় কাটিয়েছেন এবং এখান থেকে তিনি লোকসংগীতের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। তিনি ১৯৭৫ সালের ৩১ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।’’
অফিস আদেশ আরোও বলা হয়েছে- ‘‘ভারত সরকারের পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণ ও বিশ্বভারতী থেকে দেশিকোত্তম উপাধিতে ভূষিত, বিশ্বখ্যাত সংগীতজ্ঞ, শাস্ত্রীয় সংগীতের বরপুত্র খ্যাত সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ। তাঁর জন্ম ১৮৬২ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে। ১৯৭২ সালে ৬ সেপ্টেম্বর ১১০ বছর বয়সে তিনি মারা যান। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ-এর জন্মভূমি এবং জেলা সদরে রেখে যাওয়া আরেকটি বাড়িতে স্থাপিত “সুরসম্রাট দ্য আলাউদ্দিন খাঁ সংগীতাঙ্গণ” রয়েছে।’’
অফিস আদেশ উল্লেখ করা হয়- বিশ্বখ্যাত এই দুইজন সংগীতজ্ঞ যথাক্রমে- ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ এবং শচীন দেব বর্মণ-এর ঐতিহাসিক বাড়ী সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাড়ী দুটির বর্তমান অবস্থা কী? বাড়ি দুইটির মালিকানা বা কার দখলে রয়েছে, বাড়ি দুইটির কোনো সমস্যা বা চ্যালেঞ্জ রয়েছে কি-না, জেলা প্রশাসন কোনো উদ্যোগ বা প্রকল্প গ্রহণ করেছে কি-না, বাড়ি দুইটি জাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যায় কি-না, তা তদন্ত করে দুইটির আলাদা আলাদাভাবে প্রতিবেদন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক বরবার পেশ করবেন।
পরিদর্শন শেষে ঢাকায় ফিরে এ সব বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলে জানান কমিটির আহবায়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কর্মকর্তা মোঃ সেরাজুল ইসলাম।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ২০১৩ ও ২০১৫ সালে মাছরাঙা টেলিভিশনে সংবাদ প্রচারের পর ঐতিহাসিক বাড়ী দুটি নজরে আসে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। পরে ২০১৪ সালে শচীণ কর্তার বাড়ীটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয় সরকার।
প্রতিবেদক: জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur