দূষিত পানির ‘নদী’ কালিমা থেকে আজ ও মুক্তি মেলেনি রাজধানীর প্রাণ বুড়িগঙ্গা নদীর। নাব্যতা সংকট, কল-কারখানা, ট্যানারির দূষিত বজ্য, কিছু মানুষের অবৈধ দখল, ময়লা-আবর্জনা স্তুপ করে নদীতে ফেলায় ফলে প্রতিনিয়ত পানির দূষণ বেড়েই চলেছে।
এক সময় যে নদীতে মাছে ভরপুর ছিল, এখন সেখানে শুধু বিশাক্ত কালো পানি আর দূষিত পানির খেলা চলে প্রতিনিয়ত। মাছ তো দূরের কথা নেই পোকা-মাকড়ও।
আইন করে ও ঠেকানো যাচ্ছে না নদী দূষণ। নদী দূষণের ফলে এই বৃহত্তর নগরীর মানুষের দুঃখ, কষ্টের শেষ নেই।
পঁচা, দুর্গন্ধযুক্ত পানির কারণে বুড়িগঙ্গা পারি হওয়া জনতা বিড়ম্বনা পোহান। বুড়িগঙ্গায় জীবিকা নির্বাহের তাগিদে খেঁটে খাওয়া মানুষ, শিশু, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ সকলেই ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
দুর্গন্ধে নাক ভারি হয়ে আসলেও করার কিছুই থাকে না। দুর্গন্ধ মেনে নিয়েই তাই জীবন যুদ্ধ চালাতে হচ্ছে নৌ-যান নদী পারা-পারের যাত্রী সাধারন ও বুড়িগঙ্গা পারের জনসাধারণের।
সরজমিনে দেখা মেলে, সদ্য শিশুরাও এই দুর্গন্ধ আর দূষিত বায়ুর নদী বুড়িগঙ্গা পারি দিতে হাঁপিয়ে উঠেন।
বয়স্ক, শ্বাসকষ্ট জনিত রোগীরা বেশি বিপাকে পড়েন।
ঘুরতে গিয়ে দেখা হয়, ফরিদা বেগম একজন বয়স্কা মহিলা, বোরখা দিয়ে মুখ ঢেকে রাখলে ও পঁচা দূর্গন্ধকে ঢেকে রাখতে পারেন নি। শ্বাসকষ্ট’জনিত রোগে ভূগছেন তিনি।
তিনি বলেন, “আমি একজন হাঁপানী রোগী। সদরঘাট থেকে কেরানীগঞ্জ যামু নৌকায়।এই ময়লা পানির দুর্গন্ধে আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হয়”।
২ বছরের এক শিশুর দেখা মেলে যে কিনা এখনো কথা বলা শেখে নি।বাবা,মায়ের সাথে কেরানীগঞ্জ থেকে নৌকা যোগে বুড়িগঙ্গা পাড়ি দিয়ে সদরঘাট যাচ্ছে।দৌড়ে গেলাম সে দম্পতির কাছে।বাচ্ছাটার দিকে তাকাতেই দেখি সে কেমন যেনো হাঁপাচ্ছে।
বরিশাল থেকে ঢাকায় ঘুরতে আসেন এক দম্পতি। তাদের একমাত্র ছেলে ৫ বছরের শিশু ‘সোহান’ এই প্রথম ঢাকায় এসেছে। কীর্তনখোলা, মেঘনা, পদ্মা, ধলেশ্বরী হয়ে যখন ঢাকার মূল ঠিকানা বুড়িগঙ্গায় প্রবেশ, ঠিক তখন দুর্গন্ধে যেনো দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার যোগাড়!
অবুঝ সোহানের অবুঝ প্রশ্ন – ‘বাবা এটা কি বুড়িগঙ্গা? বুড়িগঙ্গার পানি কি কালো হয়? এ নদীর কি গন্ধই এমন?’
বিশেষ করে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে যাদের বসবাস তারা খুবই দুঃখ, কষ্টে জীবন-যাপন করছেন।
সাধারণত সারাদিন বুড়িগঙ্গায় নৌকা চালানো মাঝিরা বেশি বিপাকে পড়েন। কথা হয় বুড়িগঙ্গায় ছোট ডিঙি বাওয়া ক’জন মাঝির সাথে।
‘রাজ্জাক’ মাঝি সদরঘাট টু কেরানীগঞ্জ রুটে ডিঙি নৌকা চালান। তিনি প্রায় ১৯৭৯ সাল থেকে এই ডিঙি নৌকা বেয়ে চলেছেন। তিনি বলেন, আগের মতন অহন আর নদী নাই! নদীর চিত্রই বদলাইয়া গেছে। অহনে ছয় মাস নদী ভালা থাহে,ছয় মাস নদীর পানি কালো থাহে। দূর্গন্ধ,পঁচা পানি গ্যাসে দম বন্ধ হইয়া যায়।’
মুকবুল বলেন, নদীর পানি কমতে থাকলে’ই দূর্গন্ধ আর কালো পানি দেখে নগরবাসী।এ থেকে উত্তোরনের উপায় হিসেবে মুকবুল, রাজ্জাক, রুবেল, মনিরুলদের মতো সাধারণ, খেঁটে খাওয়া মানুষের অভিমত অচিরেই এসব বর্জ্য যাতে নদীতে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। নদীর দূষণ কমাতে নদীতে কেউ বর্জ্য ফেলে কি না সে’দিকে নজর রাখতে হবে।
এছাড়া অনেকেই নদীর কিনারায় বর্জ্য রেখে দিয়ে সেসব জমাট বাঁধিয়ে রেখেছে। সেসব বর্জ্য পদার্থ নদীর কিনারা থেকে সরিয়ে নিতে হবে। শহরের ময়লা-আবর্জনা নদীতে যাতে না আসতে পারে সেদিকে নজর রাখা।
মানুষদের সচেতন করতে হবে, বুঝাতে হবে নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে, দেশ বাঁচলে মানুষ বাঁচবে।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। আর এ ঢাকায় প্রতিদিন হাজারো মানুষের যাতায়াত। চাঁদপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলাসহ দেশের নদী কেন্দ্রিক মানুষের যাতায়াত পানিপথে। তাই লঞ্চ-স্টিমারে চেপে শত-সহস্র, জনতা আসেন রাজধানী শহরে।
এছাড়া ভ্রমণ প্রিয়সী বিদেশী পর্যটকরা ও নদী-মাতৃক এই বাংলাদেশের নদীর মিতালী দেখতে ছুটে আসেন আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে।
কিন্তু যখন একটি নদীর এমন দৃশ্য দেখেন, তখন আচমকাই চমকে উঠেন।
জনগণ সাধারণ সচেতন না হলে নদী দূষণ থামানো সম্ভব নয়।তাই সকলের উচিত নদী ও পরিবেশ দূষণ থেকে নগরীকে রক্ষা করতে নদীর প্রতি যতœশীল মনোভাব প্রকাশ করা উচিত।
ঢাকা থেকে ফিরে রিফাত কান্তি সেন
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৪: ০০ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, শুক্রবার
ডিএইচ