‘কুপিয়ে খুন করে আঙুলগুলো কেটে দেই, যা দিয়ে আমার কুমারিত্ব নষ্ট করেছে। আমাকে এখন ২৫ বছর জেলে থাকতে হবে। কিন্তু যখন আমার মনে পড়ে, লোকটি কি কি করেছে আমার সাথে, তখন আমার কৃতকর্মের জন্য এতটুকুও অনুতাপ হয় না। সেও আমাকে খুন করেছিল”।
এটা ছামিয়ার গল্প।
ছামিয়া গত বছর একটি লোককে খুন করে এখন কারাগারে আছে।
লোকটি তাকে প্রথমে ধর্ষণ করেছে, তারপর তার নগ্ন ছবি তুলে দিনের পর দিন তাকে ধর্ষণ করেছে, অর্থ আদায় করেছে এবং নানারকম দাবি পূরণ করতে বাধ্য করেছে।
একপর্যায়ে সে ছামিয়ার বোনকেও ধর্ষণ করতে চাইলে ছামিয়া তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। ছামিয়া তার ছদ্মনাম।
বিবিসি’র শেম বা ‘লজ্জা’ নামক এক ধারাবাহিক প্রতিবেদনের অংশ হিসেবে তুলে আনা হয়েছে আমালের এই গল্প।
কম বয়েসী মেয়েদের বা মহিলাদের ব্যক্তিগত নগ্ন ছবি অথবা যৌন নিপীড়নের সময় তোলা ছবি তুলে তাদেরকে ব্ল্যাকমেইল করার কিংবা অসম্মানিত করার যে প্রবণতা আজকাল ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে, সেটা নিয়েই এই ‘লজ্জা’ ধারাবাহিক।
তিউনিসিয়ার এক গ্রামে বাস করতো ছামিয়াদের পরিবার। ছামিয়ার কাজ ছিল, গরুগুলোর দেখভাল করা, তাদের জন্য ঘাস কাটা আর জলপাই কুড়নো।
লোকটি ছামিয়াদের বাড়িতে বেড়াতে আসতো। সে ছিল তার বাবার বন্ধু। ছামিয়া অবশ্য তাকে ভালো করে চিনতো না।
“তার চাচা আর আমার চাচা ছিলেন চাচাতো ভাই। তাদের দুজনার মধ্যে জমি-জমা নিয়ে গণ্ডগোল ছিল”। একদিন সে আমাদের বাড়িতে আসে। বাড়িতে কেউ ছিল না। সে আমাকে প্রথমে আজেবাজে কথা বলে। সে আমাকে তার আঙুল দিয়ে দিয়ে ধর্ষণ করে। তারপর সে আমার মুখে থুতু ছুড়ে মারে। সে আমাকে বলে, তোমার যদি নিজের মান-ইজ্জত খোয়ানোর ইচ্ছে জাগে, তাহলে এসব কথা সবাইকে বলে দিও”, বলছিল ছামিয়া।
লজ্জায় এসব কথা কাউকে বলা হয় না ছামিয়ার।
তারপর ছামিয়াকে ধারাবাহিকভাবে ধর্ষণ করতে থাকে লোকটি।
দুই সপ্তাহ পর লোকটি তার মোবাইলের ক্যামেরায় ছামিয়ার নগ্ন ছবি তোলে।
“সে আমাকে ছবিগুলো দেখায়। পুরোপুরি নগ্ন ছবি। সে আমাকে বলে, এগুলো আমি তোমার দাদীকে দেখাবো। সে কিছু বলবে না, কিন্তু ক্ষোভে-দু:খে সে মারা যাবে। এগুলো আমি তোমার বাবাকে দেখাবো, যে তোমাকে পৃথিবীর মধ্যে সবচাইতে ভালবাসে। কিন্তু তুমি আমাকে যদি টাকা দাও, তাহলে এগুলো কাউকে দেখাব না”।
এরপর ছামিয়া তাকে টাকা দিতে শুরু করে। এজন্য তাকে গাভীর দুধ চুরি করতে হতো।
এমনকি বাবার পকেট থেকে একদিন ১৭শ দিনারও চুরি করে ছামিয়া।
“সে আমাকে পেটাতো। সে আমার সাথে সব কিছু করতো। কিন্তু আমি কাউকে কিছু বলতে পারতাম না”। আমি পালিয়ে যেতে চাইতাম। কিন্তু কোথায় পালাবো আমি? আমাকে কে মেনে নেবে? আমি এমনকি বিষ খেয়েও মরতে চেয়েছি।”
রোজার মাসের এক সপ্তাহ পরে একদিন লোকটি ছামিয়ার কাছে তার চাচাতো বোনের মোবাইল নাম্বার চায়। ছামিয়া তাকে নাম্বারটি দেয়।
“আমি ছিলাম দড়ি দিয়ে বাধা একটি অক্ষম পশুর মত। সে আমাকে যা বলত, তাই আমাকে করতে হতো”।
পরে অবশ্য ছামিয়া তার চাচাত বোনকে সবকিছু জানিয়ে দেয়। সে তাকে ওই লোকটি থেকে দূরে থাকতে বলে।
কিন্তু নাছোড়বান্দা লোকটি দিনের পর দিন ছামিয়ার কাছে তার উনিশ বছর বয়েসী বোনের খবর জানতে চায়।
ছামিয়া তাকে বলে, “আমার বোন যদি একটি পতিতাও হত, তাতেও আমি তোমাকে তার কাছে ভিড়তে দিতাম না”।
জবাবে লোকটি বলত, “তুমি পছন্দ করো আর না কর, এটা হবেই। প্রয়োজন হলে জোর করে হবে”।
তখন ছামিয়া একদিন তার বোনকে গিয়ে বলি, “চল তাকে খুন করি”।
বৃহস্পতিবার রাতে ছামিয়ার বাড়িতে আসে তার চাচাত বোন। এর কিছুক্ষণ পর লোকটি আসে।
লোকটির ইচ্ছে দুই বোনের ছাথে একসঙ্গে, এক বিছানায় যৌনকর্ম করার।
“আমি তাকে বলি, চল এটা এখানেই শেষ করি। আমার ছাথে তুমি যা করেছ তার সবই ক্ষমা করে দিচ্ছি আমি। তোমাকে যে টাকা দিয়েছি তাও মাফ করে দিচ্ছি। তোমাকে দেবার আর কিছুই আমার নেই”।
তখন লোকটি জবাব দেয়, “তোমার কাছে যদি আর টাকা না থাকে তাহলে আমার বন্ধুদের হাতে তুলে দেব তোমাকে”।
“তখন আমার মাথায় খুন চাপে”, বলছিল ছামিয়া।
লোকটি রান্নাঘরের সামনে বসে ছিল।
ছামিয়া মাংস কাটার চাপাতিটি তুলে নেয় এবং লোকটির পেছনে গিয়ে তার মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করতে শুরু করে।
“কুপিয়ে তার শরীর থেকে মাথা আলাদা করে ফেলি আমি। তারপর তার হাতের আঙুলগুলো কেটে নেই, যা দিয়ে সে আমার কুমারীত্ব নষ্ট করেছিল”।
এখন আমার আর কিছুই চাইবার নেই, শুধু আল্লাহর ছাহায্য চাই আর আমার পিতা যেন আমাকে ক্ষমা করে দেন”।
ছামিয়ার বাবা তাকে বলেছে, “তুমি যদি জেল থেকে বেরিয়েও আস, তবু তোমাকে মেনে নেবো না আমি। তুমি আমাকে লজ্জিত করেছ”। (বিবিসি)
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৩:৪০ পিএম, ২৯ অক্টোবর ২০১৬, শনিবার
ডিএইচ