চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার বর্গা চাষী সিরাজের বয়স এখন ৭০ বছর। পরের জমি বর্গা নিয়ে তাতে ধান চাষাবাদ করেন তিনি। পরের জমি চাষাবাদ করে যে পরিমান ধান পান, তা দিয়ে চলে যায় তার পুরো বছর। কিন্তু সেই জমিতে বুক সমান পানি জমে, সোনালী ধান ঘরে তোলার বুক ভরা স্বপ্ন, পানিতে ভেসে গেছে কৃষক সিরাজের।
এরইমধ্যে বুক সমান পানিতে তলিয়ে গেছে তার আবাদ করা ৯০ শতাংশ জমির পাকা ধান। পানিতে তলিয়ে যাওয়া ধানে গাছে পঁচন ধরেছে। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষনের সাথে জমি সংলগ্ন নদীতে একটি ব্রিজ নির্মানকে কেন্দ্র করে অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মানের ফলে জমিতে এই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন ওই কৃষক। এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘাঁ।
উপজেলার সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নের কামতা বাজার ব্রিজ সংলগ প্রায় ১৫ একর ধান চাষাবাদের জমি রয়েছে। সেই বিলে যারা ধান চাষাবাদ করেছেন তাদের অধিকাংশই বর্গা চাষী। এবারের ইরি মৌসুমে সেই জমিগুলোতে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু গত কয়েক দিনের টানা বর্ষনে ওই জমিগুলোর ধান পানির নিছে তলিয়ে গেছে।
এসর্ম্পকে ইউনিয়নের পনিসাইর গ্রামের বর্গা চাষী কৃষক সিরাজুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, বেড়ি বাঁধের বাইরে নদী সংলগ্ন জমি হলেও পূর্বে এই জমিতে এত পানি কোন সময়ই জমা হয়নি। বৃষ্টির সময় যদি ব্রিজ নির্মানের বাঁধটি সর্ম্পন্ন খুলে দেওয়া হত, তাহলে ধানের জমিতে এভাবে পানি জমতো না। অপরএক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার স্ত্রী অসুস্থ। তার একটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। আগে আমি রিক্সা চালাতাম। এখন ক্ষেতি গিরস্তি করে কোন রকমে সংসার চালাই। পানিতে ডুবে যাওয়া ধান গাছে পচন ধরেছে। পানি কমার আশায় বসে আছি। পানি না কমলে সকল ধানই পঁচে নষ্ট হয়ে যাবে। জানি না আমার এই বছরের বাকী সময় কিভাবে চলবে। যখন কথাগুলো বলছিলেন কৃষক সিরাজ তখন তার দুই চোখ জলে ভিজে আসছিলো। চেহারায় শুধুই হতাশার চাপ বিরাজ করছিলো তার। পানিতে ডুবে যাওয়া ধান ক্ষেত নিয়ে কৃষক শাহজাহান, ফজলসহ ৪/৫জন কৃষক অনুরুপ কথা বলেন।
নির্মানাধীন কামতা ব্রিজে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরাতন ব্রিজ ভেঙ্গে নতুন ফেলা হয়েছে। এবং তার পাশে একটি বাঁধ দেওয়া হয়েছে মানুষের যাতায়াতের জন্য। কিন্তু গত কয়েকদিনের ভারি বর্ষনে বাঁধটি দেড় দুই হাত পানির নিচে চলে গেছে। বাঁধের উপর দিয়ে এক পাশ থেকে অন্যপাশে পানি যাচ্ছে।
তবে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি ক্ষুব্দ হয়ে বলেন এই বাঁধটি কোন কাজেই আসলো না। বাঁধের উপর দিয়ে পানি নামার কারনে মানুষের যাতায়াতে দুর্ভোগ বড়েছে। পাশাপাশি পানি নামায় বাঁধা সৃষ্টি হওয়ার কারণে পাশ^বর্তী সকল ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে ব্রিজের ঠিকাদার আবুল কাসেম কন্ট্রাকটার চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘এরইমধ্যে বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আমি কালকে আবার ঘটনাস্থলে যাবো। এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।’
উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. নূরে আলম চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘কামতা বাজারে নির্মাণাধীন ব্রিজের বাঁধের খোঁজখবর নিয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য কৃষি কর্মকর্তা জুনায়েদ আলমকে পাঠানো হয়েছে।’
তবে জুনায়েদ আলমের বক্তব্য নেওয়ার জন্য তার মেবাইল ফোন করলে তার নাম্বারের সুইচ অপ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ক্ষতিগ্রস্ত এ সকল কৃষকদের সহায়তায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন মানুষ।
প্রতিবেদক- আতাউর রহমান সোহাগ
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১: ০০ পিএম, ২৭ এপ্রিল ২০১৭, বৃহস্পতিবার
ডিএইচ