চাঁদপুরের রসু খাঁ এর মতো কাশেম নামের আরেক রসু খাঁ এর উৎপত্তি ঘটেছে। আলোচিত রসু খাঁ ১০১ নারী খুনের টার্গেট নিয়ে নারীদের বিয়ে করে হত্যা করতো । কাশেম গ্রামের মেয়েদেরকে বিয়ে করে অথবা চাকরির লোভ দেখিয়ে শহরে নিয়ে আসে।
অবিবাহিত মেয়েদের ধীরে ধীরে তাদের সঙ্গে গড়ে তোলেন প্রেমের সম্পর্ক। পরে তাদের বিয়ে করে নিয়ে দেন চাকরি। ওস্তাদ হিসেবেই পরিচিত।
চাকরির পরই নারীরা জানতে পারেন এটা তাদের স্বাধীন চাকরি নয়। আসলে তারা দালালদের হাতে বিক্রি হয়ে গেছেন।
দু’একজন নয়, এমন প্রলোভন দেখিয়ে ২২ বছরেই অন্তত আটজন নারীকে বিয়ে করেছেন ভারতের ওস্তাদ কাশেম। বিয়েকে ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করতেন তিনি।
গত রবিবার রাতে ভারতের জয়নগরের মনিরতট গ্রামের একটি বাড়ি থেকে নারী পাচার চক্রের এই হোতাকে গ্রেপ্তারের পর এমনই তথ্য পায় পুলিশ। তার বিরুদ্ধে দিল্লি, গুজরাট ও উত্তর প্রদেশসহ বিভিন্ন রাজ্যে নারী পাচারের কয়েকটি মামলা রয়েছে।
পুলিশের দাবি, বিভিন্ন রাজ্যে এজেন্ট ছড়িয়ে দিয়ে তাদেরও বিয়ে ও চাকরি টোপ ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দিত কাশেম। সেই এজেন্টরা টোপ ফেলে দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের বিয়ে করত। চাকরি দেয়ার নাম করে তাদের পাচার করে দিত কাশেমের কাছে।
কাশেম সেই মেয়েদের বিক্রি করে দিত বিভিন্ন রাজ্যে। গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, নিজেকে বাঁচানোর জন্য বিশেষ একটি কৌশল অবলম্বন করত কাশেম। মোবাইল ফোনে কখনোই কোনো কথা বলত না সে। ফলে তার খোঁজ পেতে বেগ পেতে হয়েছিল সিআইডি-কে।
সোর্স মারফত গোয়েন্দারা রবিবার জানতে পারেন, কাশেম জয়নগরের মনিরতটের একটি বাড়িতে অবস্থান করছে। স্থানীয় পুলিশের সাহায্য নিয়ে একটি গোয়েন্দা দল সন্ধ্যায় ওই বাড়িতে হানা দিয়ে কাশেমকে শুয়ে থাকতে দেখে। তা-ও হয়তো সম্ভব হতো না। গত জুলাইয়ে জয়নগর থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় এক কিশোরী। বিভিন্ন সূত্রে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ওই কিশোরীকে দিল্লিতে পাচার করা হচ্ছে।
তখন থেকেই সতর্ক ছিলেন গোয়েন্দারা। অপেক্ষার ফল মেলে অক্টোবরে। দিল্লিগামী কালকা মেল থেকে উদ্ধার করা হয় ওই কিশোরীকে। মেয়েটি জানায়, খইরুল ওরফে মুন্না নামে এক যুবকের সঙ্গে তার প্রণয়-সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তাকে বিয়েও করে সেই যুবক। তার পরে ভাল চাকরি জুটিয়ে দেওয়ার টোপ গিলিয়ে মেয়েটিকে উত্তরপ্রদেশ নিয়ে যাচ্ছিল সে।
সিআইডি দেখেই পালিয়ে যায় মুন্না। পরে তাকে ধরে ফেলে সিআইডি। মুন্নাকে জেরা করে জানা যায়, মেয়েটিকে কাশেমের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার ছক কষেছিল সে। তার আগেও সে বিয়ের টোপ দিয়ে অন্তত আটটি কিশোরীকে দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে কাশেমের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। কাশেম ধরা পড়ার পরে জানা যায়, ব্যবসার খাতিরে তার নিজের বিয়ের সংখ্যাটাও অন্তত আট।
এর বাইরে আছে তার অন্যান্য এজেন্টের বিয়ে ও মেয়ে পাচার। সংখ্যাটা মোট কত, ভেবে কূল পাচ্ছেন না গোয়েন্দারা। তদন্তকারীদের অনুমান, শুধু জয়নগর, ক্যানিং, ডায়মন্ড হারবার এলাকা থেকে ১৫ জনেরও বেশি কিশোরীকে বিয়ে করে বাইরে পাচার করে দিয়েছে কাশেমের চক্র। সেই কিশোরীদের অনেকেই এখন দেশের বিভিন্ন যৌনপল্লিতে আছে।
এক তদন্তকারী কর্মকতা বলেন, ‘কাশেম ওই চক্রের মূল হোতা। দিল্লিতে তার একটি বাড়ি আছে। এ রাজ্যের কিশোরীদের প্রথমে রাখা হতো সেখানেই। পরে খদ্দের মিললে তাদের বিক্রি করে দেওয়া হতো। এ রাজ্যে কাশেমের বেশ কিছু এজেন্টের খোঁজ মিলেছে।
নিউজ ডেস্ক ।।আপডেট : ৬:০০ এএম, ২০জানুয়ারি ২০১৬, মঙ্গলবার
ডিএইচ