চাকরি বদলী নিয়েও রক্ষা হলো না লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কুমার প্রনয় বিষাণ দাশের। সেখানে গিয়েও হাজির হলেন তার প্রেমিকা। রীতিমতো অনশনে বসে গেছেন ওই প্রেমিকা।
এ নিয়ে ওই এলাকায় বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
দুই বছর প্রেম করার পর প্রেমিকাকে না জানিয়ে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা থেকে বদলী হয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসে যোগদান করেন।
কিন্তু খবর পেয়ে প্রেমিকা নতুন এই অফিসে এসে বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) বিকেল থেকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত বিয়ের দাবিতে তার অফিসেই অনশন করছেন প্রেমিকা।
উপজেলা প্রশাসন আর জনপ্রতিনিধির হস্তক্ষেপেও প্রেমিকার অনশন ভাঙছে না। উপজেলা প্রশাসন বাধ্য হয়ে উভয়ের অভিভাবকদের ডাকা হয়েছে।
এদিকে, প্রেমিককে কৃষি অফিসার বাচাঁনোর চেষ্টায় গাড়িতে করে পালানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।
জানা গেছে, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ কুমার প্রনয় বিষাণ দাশ কিছুদিন আগে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা থেকে বদলী হয়ে কালীগঞ্জে যোগদান করেছেন।
তিনি পূর্বের কর্মস্থলে থাকাবস্থায় সেখানকার স্কুল শিক্ষকের উচ্চ শিক্ষিতা মেয়ে মায়া রাণী (ছদ্মনাম) সঙ্গে দুই বছর আগে বিয়ের প্রলোভনে প্রেম থেকে শারীরিক সম্পর্কে গড়ে তুলেন। গোত্রীয় বৈষম্যের কারণে প্রেমিকার পরিবারের পক্ষ থেকে আপত্তি উঠে।
বিষয়টি নিয়ে একাধিক সালিশ-বৈঠক হয় সুন্দরগঞ্জ-গাইবান্ধায়। কিন্তু কোনো রকম সুরাহা ছাড়াই কৌশলে কালীগঞ্জ উপজেলায় বদলী নিয়ে চলে আসেন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ কুমার প্রনয় বিষাণ দাশ।
প্রেমিকা মায়া রাণী গত একমাস আগে বিষয়টি কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনুর আলমের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।
কিন্তু কোনো সুরাহা না পেয়ে নিরুপায় হয়েই মায়া রাণী বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রেমিক কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ কুমার প্রনয় বিষাণ দাশের কার্যালয়ে ঢুকে বিবাহের দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের সহযোগিতায় প্রেমিক বিষাণ দাশ কতিপয় দালাল চক্রের মাধ্যমে মেয়েটি তাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। এতে ব্যর্থ হয়ে তিনি পালানোর চেষ্টা করলে গাড়ি আটক দেন প্রেমিকা মায়া রাণী ।
বিষয়টি জানাজানি হলে পুলিশ গিয়ে মেয়ে ও ছেলেকে হাজতে নিতে চাইলে প্রেমিক কৌশলে স্থানীয় আপোষ করার প্রস্তাব দেন। মেয়েটি তাড়িয়ে দেয়ার নানা নাটকীয়তার পর অবশেষে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুজ্জামান আহম্মদের নজরে এলে তিনি উভয়পক্ষের অভিভাবকদের তলব করেন।
প্রেমিকা মায়া রাণী কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে বিয়ে করবেন না হয় আমি নিজেই জীবন দিয়ে দিবো। আমাকে নিয়ে যা করেছে সেটি বলার মতো না।’
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, ‘উভয়ের অভিভাবকের উপস্থিতিতে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।’
কালীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরজু সাজ্জাদ হোসেন জানান, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম স্থানীয়ভাবে আপোষের কথা বলায় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। মেয়েটি অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনুর আলম জানান, ‘মেয়েটির অভিযোগটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে কৃষি কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। বর্তমান বিষয়টি নিয়ে উভয়ের অভিভাবককে ডাকা হয়েছে।’
কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুজামান আহম্মেদ জানান, ‘জিজ্ঞাসাবাদে দুইজনেই সম্পর্কেও কথা স্বীকার করেছে। তাই উভয়ের অভিভাবকদের ডাকা হয়েছে।’
এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত কোনো সুরহা না হওয়ায় প্রেমিকার মায়া রাণী তার অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। (জাগোনিউজ)
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৫:০০ এএম, ১৩ আগস্ট ২০১৬, শনিবার
ডিএইচ