Home / সারাদেশ / বিয়ের দাবিতে অনশন করা কণা এবার ‘স্বামীর হাতেই’ খুন
premik
ফাইল ছবি

বিয়ের দাবিতে অনশন করা কণা এবার ‘স্বামীর হাতেই’ খুন

বিয়ের দাবিতে প্রেমিক মনির হোসেনের (২১) বাড়ি ১৫ দিন অবস্থান করেছিলেন কণা আক্তার (১৯)। প্রেমিকের সঙ্গে বিয়ে না হলে ওই সময় আত্মহত্যা করার হুমকিও দিয়েছিলেন তিনি। এরপর উভয় পরিবারের সম্মতিতে প্রেমিক মনির হোসেনের সাথে তার বিয়ে হয়।

স্বামীকে নিয়ে সুখের সংসার সাজানোর স্বপ্নে বিভোর ছিল কণা আক্তার। এ কারণে দরিদ্র পরিবারের মেয়ে হয়েও স্বামীর চাহিদা মতো এনে দিয়েছিলেন যৌতুক।

তারপরেও পারেননি সুখি হতে। দিনের পর দিন শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামীর অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে তাকে। যাকে না পেলে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন কণা, আজ সে ‘স্বামীর হাতেই’ প্রাণ দিতে হলো তাকে। কণার শশুরবাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বহড়াবাড়ি গ্রামে।

যৌতুক না পেয়ে শুক্রবার ভোরে কণাকে স্বামী মনির ও পরিবারের লোকজন মিলে মারধর ও শ্বাসরোধে ‘হত্যা’ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের স্বজনরা।

তবে মনির ও পরিবারের লোকজন বলছেন, কণা গলায় ফাঁস নিয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেছেন।

এই ঘটনার পরপরই বাড়িতে লাশ রেখে পালিয়ে যাওয়ার সময় মনির ও তার বাবা মজিবর রহমান (৫৫), মা মমতা বেগম (৫০), বোন রিক্তা আক্তার (২৫) এবং ভগ্নিপতি মহিদুর রহমানকে (৩০) ধরে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেয় প্রতিবেশীরা।

মজিবুর রহমানের ছেলে মনির গাজীপুরের একটি পোশাক তৈরি কারখানায় কাজ করেন। আর পার্শ্ববর্তী তালুকনগর গ্রামের মৃত জব্বার খানের মেয়ে কণা।

স্বজন ও স্থানীয়রা জানায়, মনিরের সঙ্গে চার বছর প্রেম করেন কণা। তাদের মধ্যে গড়ে উঠে শারীরিক সম্পর্কও। বিয়ে না করেও মনিরের কর্মস্থল এলাকায় বাসা নিয়ে একসঙ্গে থাকতেন তারা।

এরপর গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর বিয়ের দাবিতে মনিরের বাড়িতে অবস্থান নেন কণা। এ নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মাতব্বররা সালিশ বসেন। খবর বের হয় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়।

১৫ দিন অবস্থানের পর উভয় পরিবারের সম্মতিতে তাদের বিয়ে দেয়া হয়। এরপর দেড় লাখ টাকা ও দেড় ভরি স্বর্ণালঙ্কার যৌতুকও নেন মনির।

দরিদ্র পরিবারের মেয়ে হওয়ায় শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে সব সময়ই ‘তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য’ করতেন। বিয়ের পর থেকে সংসারের নানা বিষয় নিয়ে কণাকে বিভিন্ন সময়ে ‘মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন’ করতেন মনির ও তার মা-বাবা।

এ কারণে কণাকে প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গেও কথাবার্তা বলতে দিতেন না। বিয়ের পর স্বামীকে নিয়ে একবার বাবার বাড়ি বেড়াতে এসেছিলেন তিনি।

কণার ভগ্নিপতি আবদুল হানিফ জানান, ‘প্রায় দুই মাস আগে ব্যবসা করার জন্য কণার ভাই আরিফ খানের কাছে দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন মনির। যৌতুক না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে কণাকে নির্যাতন করে আসছিলো মনির।

ঈদের ছুটিতে গত সোমবার বাড়ি আসেন মনির। ঈদের দিন কণাকে কোথাও বেড়াতে নেননি। রাতে নিজ ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন তারা।

শুক্রবার ভোরে মনির ও তার মা-বাবা, বোন এবং ভগ্নিপতি কণাকে মারধর করে গলায় কাপড় পেঁচিয়ে ঘরের ছোট খুটির সঙ্গে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার করেন। এ সময় প্রতিবেশীরা এসে তা দেখে ফেলেন। কণাকে হাসপাতালে নেয়ার অজুহাতে ঝুলন্ত অবস্থায় তাকে নামান’

খবর পেয়ে স্বজনরা ওই বাড়ি গিয়ে কণার গলায়, পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন দেখতে পান। এ ঘটনায় মনির ও তার পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলেও জানান স্বজনরা।

মনির হোসেন বলেন, ‘কণাকে হত্যা করা হয়নি। সে আত্মহত্যা করেছে।’ তবে কণা কী কারণে আত্মহত্যা করেছেন? তা বলেননি মনির।

দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল নিশাত জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় স্বজনরা হত্যার অভিযোগ দিলে প্রাথমিক তদন্ত ও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নিউজ ডেস্ক ।। আপডেট ০৫:০৩ পিএম,০৮ জুলাই ২০১৬,শুক্রবার
এইউ

Leave a Reply