বিষ্ণপুরে ভাঙন আতঙ্কে কয়েক হাজার পরিবার

এক দিকে ঢেউয়ে প্রহার আর অন্যদিকে কোদাল দিয়ে মাটি কেটে নেওয়ার ভয়ঙ্কর শব্দ, এই দুইয়ের সংমিশ্রণে এক ভয়ঙ্কর আওয়াজে ঘুম নেই তাদের চোখে।

নদী এবং মাটি খোকোদের তাণ্ডব যেন এইসব মানুষদের রাতের ঘুমকে হারাম করে দিয়েছে। ফলে ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে নদীপাড়ের কয়েক হাজার পরিবার।

চাঁদপুর সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে ধনাগোদা নদীর পাড়ে মানুষের আতঙ্ক এখন সংঘবদ্ধ চক্রটি। যারা নদীর পাড় থেকে রাতের আঁধারে মাটি কেটে বিক্রি করে দিচ্ছে। এতে করে শুষ্ক মৌসুমেও ধনাগোদা নদী স্পর্শ করছে তাদের বসত ঘরের ভিটেমাটি।

যার কারনে ভাঙনের আতঙ্কে ওই এলাকার অসহায় মানুষেরা তাদের বসতঘর সরিয়ে নিচ্ছে অন্যত্র।

অথচ এত কিছুর পরেও ওই সংঘবদ্ধ  চক্রটির বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায় না কেউ। প্রতিকার পায়নি ইউপি মেম্বার-চেয়ারম্যানের কাছে নালিশ করেও।

সরেজিনে গিয়ে দেখা যায়, একটি পরিবার তাদের চৌকাঠের বিশাল ঘরটি ভেঙে সরিয়ে নিচ্ছে। এই প্রতিবেদকের কথা হয় তাদের সাথে, তারা জানান গত ৩০ বছরের ভাঙনে এলাকার হাজার হাজার পরিবার তাদের বসতভিটা হারিয়েছে। এর উপর সম্প্রতি নদীর পাড় থেকে সংঘবদ্ধচক্র মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। তাই ভাঙানোর ভয়ে তারা নিজেরাই বসতঘর সরিয়ে নিচ্ছে।

এলাকার ষাটোর্ধ একজন মুরব্বি জানান, কারা নদীরর পাড় থেকে মাটি কেটে নেয়, তা সবাই জানে। কিন্তু এরা ক্ষমতাবান হওয়ায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে কথা বলে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন এই প্রতিবেদককে জানান, এলাকার সাংবাদিক নামধারী দুই ভাই শাওন ও হিরণ এই মাটিখেকো চক্রের মূল হোতা। শুধু মাটিকাটা নানারকম অপকর্মের সাথেও তারা জড়িত। কেউ প্রতিবাদ করলেই তারা মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কথিক সাংবাদিক নামধারী দুই সহোদর শাওন-হিরণ উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে চড়াও হয়। তারা নিজেদের একাধিক টিভি চ্যানেল, দৈনিক পত্রিকা, সাপ্তাহিক পত্রিকাসহসহ বিভিন্ন ফেইসবুক মিডিয়ার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে প্রভাব দেখান।

তারা দুই ভাই সাংবাদিক হয়ে নিজ এলাকার নদী ভাঙন ও মাটি কাটার কোন নিউজ করেছেন কি না, জানতে চাইলে, উল্টো তারা এই প্রতিবেদকের দিকে মোবাইল ক্যামেরা তাক করে ফেইসবুকে লাইভ করার হুমকি দেন। একপর্যায়ে তারা নানা কায়দায় সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন।

এ বিষয়ে স্থানীয় ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার সোহেল খান জানান রাতের আধারে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমরা অবগত। আমাদের চেয়ারম্যান সাহেবের নির্দেশে গ্রাম পুলিশ রাতর টহল দিয়ে মাটিকাটা অবস্থায় বেশ কয়েকজনকে আটক করে থানায় দিয়েছে।

তিনি জানান, অভিযুক্ত দুই ভাই হিরন ও শাওন মামলাবাজ প্রকৃতির। কেউ প্রতিবাদ করলেই তারা মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে। আমার বিরুদ্ধেও তারা মিথ্যা মামলা দিয়েছে।

এ বিষয়ে বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে নদী ভাঙনের শিকার এলাকাবাসী চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি কামনা করেছেন।

প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম, ৬ মার্চ ২০২২

Share