Home / সারাদেশ / বিশ্ব পানি দিবস আজ
বিশ্ব পানি দিবস আজ

বিশ্ব পানি দিবস আজ

গ্রীষ্মকাল এখনো শুরু হয়নি, এরই মধ্যে উজানে পদ্মা ও মহানন্দা নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। এসব নদীর ৬০ ভাগ অংশ জুড়ে জেগে উঠেছে চর। বিশ্বে জলবায়ু ঝুঁকির মধ্যে থাকা সবচেয়ে সংকটময় অবস্থা বাংলাদেশের। এরসঙ্গে পানির অপ্রতুলতা ও বিশুদ্ধ পানির অভাব বাংলাদেশের পরিবেশ ও প্রকৃতিকে ভারসাম্যহীন করে তুলেছে। বাংলাদেশের এমন বাস্তবতায় আজ বিশ্ব জুড়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব পানি দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘পানির জন্য প্রকৃতি’। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।

বাংলাদেশকে নদীমাতৃক দেশ বলা হলেও দেশের সাড়ে ৯ কোটি মানুষ বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে পারছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এ তথ্য জানিয়ে বলছে, বাংলাদেশের মানুষ ঝুঁকির মধ্যে বাস করছে। কারণ ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশে ৯৭ ভাগ মানুষের পানি প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা হলেও বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে না পারার কারণে এবং মৌসুম ভেদে পানি সংকটের কারণে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিঘ্নিত হচ্ছে, শিল্পোন্নয়ন ও কৃষি কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা ও সুষ্ঠু ব্যবহারের অভাবে প্রকৃতি তার স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হারাচ্ছে এবং জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়ছে। প্রকৃতি ও পানির অবিবেচক ব্যবহারের ফলে পানির গুণাগুণ ও পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। নিরাপদ পানির অভাবে মানুষের স্বাস্থ্য ও সামগ্রিক জীবনযাত্রার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ সমস্যা নিরসনে দরকার প্রকৃতিনির্ভর পানি ব্যবস্থাপনা।

বর্তমানে বাংলাদেশে বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে ১.২ বিলিয়ন মানুষ, এটি ২০৫০ সালে ১.৬ বিলিয়নে দাঁড়াবে; যা বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ। ১.৮ বিলিয়ন মানুষ ভূমি ক্ষয় ও মরুকরণ প্রক্রিয়া দ্বারা প্রভাবিত। দেশের বনভূমির পরিমাণ বাড়ছে। কিন্তু মানুষের কর্মকান্ডের ফলে ১৯০০ সাল থেকে ৬৪-৭১ শতাংশ জলাভূমি হারিয়ে গিয়েছে। কৃষি ভূমির মাটি ক্ষয়ের ফলে প্রতি বছর ২৫-৪০ বিলিয়ন টন টপসয়েল হারিয়ে যাচ্ছে, যাতে ফলন কমে যাচ্ছে এবং টপসয়েলে প্রচুর পরিমাণে নাট্রোজেন ও ফসফরাস থাকায় তা পানি দূষণে ভূমিকা রাখছে। অবিলম্বে এ দূষণের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সারা বিশ্বে ২০৩০ সাল নাগাদ পানি ও স্যানিটেশনের প্রাপ্যতা এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধানের মাধ্যমে পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা সম্ভব। জাতিসংঘের তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বে বর্তমানে ২.১ বিলিয়ন মানুষ নিরাপদ সুপেয় পানি সেবা থেকে বঞ্চিত। ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্ব জনসংখ্যা ২ বিলিয়ন বৃদ্ধি পাবে এবং বিশ্বব্যাপী পানির চাহিদা ৩০শতাংশ বেড়ে যাবে।

এর পাশাপাশি অতিমাত্রায় নগরায়ন ও অসচেতনতার ফলে পানির অপচয় বাড়ছে। গৃহস্থালি কাজে, শহরে, কল-কারখানায় পানির অপচয় বাড়ছে। এর পাশাপাশি এসব কাজে পানি দূষিত হচ্ছে। সেই দূষিত পানি আমাদের জমিতে যাচ্ছে। যাচ্ছে নদীতে। এই পানির অপচয় ও বর্জ্যযুক্ত পানি নদীতে যাওয়া ঠেকাতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ঢাকার ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমাগত নিচে নেমে যাওয়ায় যেমন পরিবেশ ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে তেমনি বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার অন্যান্য নদীর দূষিত পানি এই পানির স্তরে প্রবেশ করছে। এতে ঢাকার ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর তিন ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এক. পানি নিচে নেমে যাওয়ায় যেমন জলের উত্স হারাচ্ছে, দুই. ভূ-গর্ভের পানি দূষিত হয়ে তা এই পানি ব্যবহারকারীদের মাঝে রোগ ছড়াচ্ছে, এবং তিন. পরিবেশ বিপর্যয় ও ভূমিকম্পের আশঙ্কা বাড়ছে।

এদিকে রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী প্রতিনিধি মুক্তার হোসেন জানিয়েছেন, পদ্মা ও মহানন্দা নদীর পানি কমে আসায় হুমকির মুখে পড়েছে বরেন্দ্র অঞ্চলের সেচ ব্যবস্থা। রয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। ২০০৩ সাল থেকে প্রতি বছর পদ্মা ও মহানন্দা নদীতে পানি ধারাবাহিকভাবে কম থাকায় এ অঞ্চলের কৃষিকাজ ও জীবন যাত্রায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এ চিত্র দেশের প্রায় সর্বত্র।

ইত্তেফাক

নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৩: ১৫পি.এম ২২মার্চ,২০১৮বৃহস্পতিবার
কে এইচ