আন্তর্জাতিক

বিশ্ব নেতাদের স্ত্রীদের কাছে তুরস্কের ফার্স্ট লেডির চিঠি

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেখতে এসেছিলেন তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিনে এরদোগান। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন থামাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়ে সে সময়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে বিশ্ব নেতাদের স্ত্রীদের কাছে চিঠি লিখেছেন তিনি।

এমিনে এরদোগান ৭ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের কুতুপালং শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন। সেখানে শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন,ত্রাণ বিতরণ করেন,কর্তৃপক্ষদের কাছ থেকে শরণার্থীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন। তার ওই চিঠি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তুরস্কের স্থানীয় পত্রিকা ডেইলি সাবাহ।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়,এরদোগান তার চিঠির শুরুতেই উল্লেখ করেন যে,শরণার্থী শিবির পরিদর্শন নিয়ে তার অনুভূতি ও চিন্তা-ভাবনা জানাতে চান তিনি। তিনি উল্লেখ করেন,মিয়ানমারের বহু পুরনো জাতিগোষ্ঠী হওয়া সত্ত্বেও রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের লাখ লাখ সদস্য ২৫ আগস্টের পর থেকে তাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে পালিয়ে এসেছে বাংলাদেশে।

একই সময়ের মধ্যে মারা গেছেন এক হাজার রোহিঙ্গা। এরদোগান বলেন,‘এই মানবিক নাটকের সাক্ষী হওয়াটা খুবই লজ্জাজনক। বিষয়টি এড়িয়ে যেতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের চোখ-কান বন্ধ করেছে। ওই শত শত নারীর কাহিনী শোনা খুবই বেদনাদায়ক। যাদের ধর্ষণ করা হয়েছে ও যাদের চোখের সামনে তাদের স্বামী ও সন্তানদের হত্যা করা হয়েছে, পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে যাদের বাড়িঘর। আমরা যেই শিবিরে ১ হাজার টন ত্রাণ বিতরণ করেছিলাম, সেই শিবিরের শিশু ও নারীদের ওই মরিয়া চাহনি আমি কখনো ভুলতে পারবো বলে মনে হয় না।’

তুরস্কের ফার্স্ট লেডি আরো বর্ণনা করেন যে,তিনি ২০১২ সালে মিয়ানমার সফরে যাবার পর থেকেই রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রতি কূটনৈতিক সমর্থন ও মানবিক সহায়তা প্রদান করে আসছে তুরস্ক। তিনি যোগ করেন,রোহিঙ্গাদের ওপর সম্প্রতি করা এ অত্যাচার পরিষ্কারভাবে ‘ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশন অফ হিউম্যান রাইটস এর আর্টিকেল ২’ লঙ্ঘন করে। আর্টিকেল ২, জাতি, লিঙ্গ, ভাষা, ধর্ম,চিন্তাধারা ও মৌলিকতার বাছবিচার না করে সকলের মানবাধিকার রক্ষার বিষয় দেখাশোনা করে থাকে।

এরদোগান বলেন, ‘একজন মা হিসেবে,নারী হিসেবে ও মানুষ হিসেবে আমি বিশ্বাস করি যে আমাদের এমন একটি বিশ্ব তৈরি করতে হবে যেখানে সবাই পাশাপাশি বসবাস করতে পারবে। যেখানে কেউ জাতিগত বা ধর্মীয় বৈষম্যের শিকার হবে না। এরদোগান প্রত্যাশা করেন যে,বিশ্ব নেতাদের স্ত্রীরা এ বিষয়ে একটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবেন।

এরদোগান এটাও উল্লেখ করেন যে, তুরস্ক হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানবিক সহায়তা প্রদানকারী দেশগুলোর একটি। দেশটি ৩০ লাখ সিরীয় ও ইরাকি শরণার্থীদের স্থান দিয়েছে। এছাড়া অন্য শরণার্থীদেরও সরকারি সংস্থা ও বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে সহায়তা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। চিঠির শেষ অংশে এসে তিনি পুনরায় সবার সঙ্গে হাতে হাত রেখে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার কথা উল্লেখ করেন।

জাতিসংঘ রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর একটি বলে বর্ণনা করেছে। ২০১২ সাল থেকে এ সম্প্রদায়টি অব্যাহতভাবে নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ নির্যাতন মাত্রা ছাড়িয়েছে। ২৫ আগস্ট পুলিশ পোস্টে এক হামলার জবাবে রাখাইনে সামরিক অভিযানের নামে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে সামরিক বাহিনী।

নির্যাতন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। জাতিসংঘ আশঙ্কা করছে,এ নির্যাতন অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ১০ লাখে পৌঁছাতে পারে।

নিউজ ডেস্ক
আপডেট,বাংলাদেশ সময় ৯:১০ পিএম,১৮ সেপ্টেম্বর,২০১৭,সোমবার
এজি

Share