দেশে চলতি বছর এ পর্যন্ত এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে। এর আগে কোনো বছর এত রোগী শনাক্ত করা হয়নি। চলতি বছর মৃত্যু হয়েছে ১২০ থেকে ১৩০ জনের। এর আগে গত বছর ২০২২ সালে দেশে এইচআইভি ভাইরাসজনিত রোগ এইডসে মৃত্যু হয়েছিল ২৩২ জনের।স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
নতুন রোগী হাজার ছাড়াল
এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমিত রোগীর শুরুতে সাধারণত কোনো লক্ষণ থাকে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সংক্রমিত ব্যক্তির শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং বিভিন্ন রোগ দেখা দেয় এক পর্যায়ে পরীক্ষার মাধ্যমে এইচআইভি শনাক্ত করা হয়। এই ভাইরাসের কারণে যে রোগটি হয়, তা হলো তা হরো অ্যাকোয়ার্ড ইমিউন ডিফেসিয়েন্সি সিনড্রোম বা এইডস।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাং লাদেশে এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কম। তবে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। কারণ এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিদের অনেকেই ঘৃণার চোখে দেখে বলে আক্রান্ত ব্যক্তি রোগের কথা গোপন রাখে। ফলে সহজে রোগ ছড়ায়।
দেশে এসব রোগীর জন্য পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল তৈরি হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে সচেতনতার লক্ষ্যে আজ ১ ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটির এবারের প্রতিপ্রাদ্য বিষয়, ‘কমিউনিটির আমন্ত্রণ, এইডস হবে নিয়ন্ত্রণ’।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ ২০২২ সালের তথ্য মতে, দেশে অনুমিত এইচআইভি সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা ১৪ হাজার ৫১৩ জন। এর মধ্যে ৩৩ শতাংশ এখনো শনাক্তের বাইরে। যারা শনাক্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে ৭৭ % চিকিৎসার আওতায় আছে।
এইডস রোগীর চিকিৎসা
বাংলাদেশের জাতীয় এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এইডস শনাক্ত করার জন্য সারা দেশে ২৭টি কেন্দ্র রয়েছে এবং চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয় ১১টি কেন্দ্র থেকে। যা শুধু প্রাথমিক চিকিৎসার মধ্যে সীমাবদ্ধ।
রাজধানীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা.আরিফুল বাশার বলেন, দেশে একমাত্র সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে এইচআইভি রোগীগুলো জটিল কোনো রোগ নিয়ে ভর্তি হতে পারে। এইচআইভি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়।
বুধবার সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের গিয়ে দেখা যায়,হাসপাতালটির তৃতীয় তলায় এইডস রোগীদের জন্য ২৫ শয্যার দুটি ওয়ার্ড করা হয়েছে। যেখানে গুরুতর রোগীরা চিকিৎসা নিয়ে থাকে। তৃতীয় তলার ১ নম্বর ওয়ার্ড গিয়ে কথা হয় ১৫ বছর বয়সী সাইমের (ছদ্মনাম) সঙ্গে। তার মা-ও পাশাপাশি বিছানায় ভর্তি আছেন। সাইম জানায়, সে এইডস আক্রান্ত হয়েছে মায়ের কাছ থেকে। ৯ বছর ধরে চিকিৎসা নিচ্ছে।
নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্ত ৯.৯৮ শতাংশ
জাতীয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের তথ্যে জানা যায়, এ পর্যন্ত হাসপাতালটিতে এইডস শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ২৭ জনের। এর মধ্যে মার গেছে ১২০ জন। নিয়মিত এইডস রোগীদের জন্য চিকিৎসা এআরটি নিচ্ছে ৭৮১ জন রোগী।
জাতীয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. বিকাশ কুমার সরকার বলেন, ‘আমাদের এখানে যে এইচআইভি পজিটিভ মাদার ভর্তি আছেন, তাঁর জন্য কয় দিন পরে যে অপারেশন থিয়েটার লাগতে পারে, আমাদের এখানে সে ব্যবস্থা নেই। এরা যখন অন্য হাসপাতালে শরণাপন্ন হয়, তখন তারা তাদের নিতে চায় না। অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকরাও আগ্রহ দেখান না। এ জন্য এখানে একটা আলাদা হাসপাতাল হওয়া খুব জরুরি।’
১ ডিসেম্বর ২০২৩
এজি