আন্তর্জাতিক

বিশ্বে স্থূলতায় বছরে মারা যাচ্ছে ৪০ লাখ মানুষ

বিশ্বব্যাপি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে তীব্র সঙ্কট হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে মানুষের অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতাজনিত সমস্যা। প্রতি বছর স্থূলতায় মারা যাচ্ছে ৪০ লাখ মানুষ। বাস্তবে এ মৃত্যুর সংখ্যা আরো অনেক বেশি। কারণ গত ১৫ বছর ধরে বিশ্বে মৃত্যুর শীর্ষ ১০টি কারণের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে হৃদরোগ ও স্ট্রোক। এ দু’ রোগে ২০১৬ সালে সারা বিশ্বে মারা গেছে ১ কোটি ৫২ লাখ মানুষ। আর হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিসসহ কমপক্ষে ৬০ টি রোগের অন্যতম কারণ স্থূলতা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার তথ্যানুসারে কিছু দ্বীপ বাদে জনবহুল দেশগুলোর মধ্যে শতকরা হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি মানুষ স্থূলতায় আক্রান্ত। সবচেয়ে কম ভিয়েতনাম। শিশুদের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপি সবচেয়ে কম স্থূলতার দেশ বাংলাদেশ। চলতি বছর প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭৫ সালের পর থেকে বিশ্বব্যাপি স্থূলতা তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিশ্বে কম ওজনের কারণে নয় বরং অতিরিক্ত ওজনের কারণে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। স্থূলতার কারণে অপর যেসব গুরুতর রোগে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে তা হলো হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, অস্ট্রিওআরথ্রাইটিস, ব্রেস্ট, জরায়ু, প্রোস্টেট, লিভার, গল্ডব্লাডার ও কোলন ক্যান্সারসহ কিডনি রোগের পেছনেও ভূমিকা রয়েছে স্থূলতার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী ২০১৬ সালে হৃদরোগ ও স্ট্রোকে মারা যায় ১ কোটি ৫২ লাখ মানুষ। ডায়াবেটিসে মারা যায় ১৬ লাখ মানুষ।
অনেক দেশকে আবার একই সাথে স্থূলতা এবং অপুষ্টির সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে।

৩৪টি উন্নত দেশের সংস্থা ওইসিডির ২০১৭ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ সবচেয়ে বেশি স্থূলতায় আক্রান্ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৮ দশমিক ২, মেক্সিকোর ৩২ দশমিক ৪, নিউজিল্যান্ড ৩০ দশমিক ৭ এবং হাঙ্গেরির ৩০ ভাগ মানুষ স্থূলতায় আক্রান্ত। সবচেয়ে কম স্থূলতায় আক্রান্ত জাপানের মানুষ, ৩ দশমিক ৭।

বিল অ্যান্ড মেলিন্দা গেটস ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে পরিচালিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে ১৮ বছরের ওপরে সবচেয়ে কম স্থূলতায় আক্রান্ত ভিয়েতনামের মানুষ ১ দশমিক ৬ শতাংশ। শিশুদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম স্থূলতায় আক্রান্ত বাংলাদেশের শিশুরা ১ দশমিক ২ আর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিশুরা ১২ দশমিক ৭ ভাগ।

প্রতিবেদনে বলা হয় ২০১৫ সালে স্থূলতাজনিত রোগে ৪০ লাখ মানুষ মারা যায়। এ ছাড়া নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনের প্রতিবেদনেও বলা হয় ২০১৫ সালে ৪০ লাখ মানুষ মারা যায় স্থূলতার কারণে।

বিল অ্যান্ড মেলিন্দা গেটস ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে পরিচালিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালে বয়স্কদের মধ্যে শতকরা হিসেবে সবচেয়ে বেশি স্থূলতায় আক্রান্ত ছিল মিসর তথা ৩৫ ভাগ। আর হেলথ লাইনের অনলাইনের ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বয়স্কদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্থূলতায় আক্রান্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ তথা ৩৬ দশমিক ৫ ভাগ। আবার ওয়ার্ল্ড হেলথ ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বয়স্কদের ৫৫ ভাগই অতিরিক্ত ওজন সমস্যায় ভুগছে।

হেলথ লাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলগামীদের প্রতি ৮ জনে একজন স্থূল। যুক্তরাষ্ট্রে স্থূলতার কারণে বছরে ১৪৭ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়। বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর শীর্ষ তালিকায় স্থূলতার স্থান পঞ্চম। বছরে ২৮ লাখ মানুষ মারা যায় স্থূলতায়। হেলথ লাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস ও বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারসহ কমপক্ষে ৬০টি রোগের জন্য দায়ী স্থূলতা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এনবিসি গ্রুপের সিএনবিসি অনলাইনর ২০১৭ সালের জুন মাসের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে ২২০ কোটি মানুষ স্থূলতায় আক্রান্ত। এ হিসেবে বিশ্বের ৩০ ভাগ মানুষ এ সমস্যায় ভুগছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়েছে, যে হারে স্থূলতা বাড়ছে তা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের অর্ধেক মানুষই স্থূলতা সমস্যায় আক্রান্ত হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চলতি বছরের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালে সারা বিশ্বে এক শ’ ৯০ কোটি মানুষ অতিরিক্ত ওজন সমস্যায় ছিল যাদের বয়স ১৮ বছরের ওপরে। এর মধ্যে ৬৫ কোটি মানুষ স্থূল। আর পাঁচ বছরের নিচে ৪ কোটি ১০ লাখ শিশু অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতায় ভুগেছে ২০১৬ সালে। ৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ৩৪ কোটি স্থূলতায় আক্রান্ত। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিশু অবস্থায় স্থূলতা অনেকের অকালমৃত্যুর কারণ।

এক দিকে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ এবং অপর দিকে কম শারীরিক পরিশ্রম বা শরীরচর্চা অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতার প্রধান কারণ। চিপস, ফাস্ট ফুড, জাঙ্কফুড সংস্কৃতি উন্নত বিশ্বে ওজন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করছে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে স্থূলতা একটি রোগ ও জিনগত কারণ। ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাস অনলাইনে শতকরা হিসেবে স্থূলতায় আক্রান্ত দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে।

তাতে ক্রমান্বয়ে রয়েছে নাউরু ৬১ ভাগ, কুক আইল্যান্ড প্রায় ৫৬, পালাউ ৫৫, মার্শাল আইল্যান্ডস ৫২, টুভালু ৫১, নিউ ৫০, টোঙ্গা ৪৮, সামোয়া ৪৭, কিরিবাটি ৪৬, মাইক্রোনেশিয়া ৪৫, কুয়েত ৩৭, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৩৬, সৌদি আরব ৩৫, কাতার ৩৫, তুরস্ক ৩২, মিসর ৩২ লেবানন ৩২, আরব আমিরাত ৩১, বাহামাস ৩১, নিউজিল্যান্ড ৩০, ইরাক ৩০, ফিজি ৩০ এবং বাহরাইনের ২৯ ভাগ মানুষ স্থূলতায় আক্রান্ত।

স্থূলতা সারা বিশ্বে এখন উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। এক দিকে বিভিন্ন দেশে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, দুর্ভিক্ষে মারা যাচ্ছে লাখ লাখ মানুষ, অপর দিকে বিপুলসংখ্যক মানুষ অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণ করে শুধু যে খাদ্য অপচয় করছে তা নয়, বরং অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ সমস্যা থেকে সৃষ্ট স্থূলতার পেছনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। সে জন্য আমাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, নিয়মিত শরীরচর্চা এবং মানুষের স্বাস্থ্য উপযোগী নগর ও যাতায়াত পরিকল্পনার ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

বার্তা কক্ষ
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৫: ২৫ পিএম, ২৬ আগস্ট ২০১৮,বৃহস্পতিবার
এজি

Share