এবার বিশ্ব দেখবে বাংলাদেশের স্থাপত্যশিল্প। বিশ্বসভায় দেশের স্থাপত্যকে তুলে ধরতে একটি বড় উদ্যোগ নিয়েছে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ও সুইস আর্কিটেকচার মিউজিয়াম। বিশ্বখ্যাত এ জাদুঘরে বাংলাদেশের ৩০ জন স্থপতির কাজ নিয়ে একটি প্রদর্শনী হতে যাচ্ছে। জাদুঘরের সঙ্গে যৌথভাবে প্রদর্শনীটি আয়োজন করেছে বেঙ্গল ইনস্টিটিউট ফর আর্কিটেকচার, ল্যান্ডস্কেপ অ্যান্ড সেটেলমেন্ট।
‘বেঙ্গল স্ট্রিম: দ্য ভাইব্র্যান্ট আর্কিটেকচার সিন অব বাংলাদেশ’ নামের এই প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে আগামীকালই। চলবে প্রায় পাঁচ মাস—আগামী বছরের ৬ মে পর্যন্ত। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে ইউরোপের দর্শকেরা বাংলাদেশের স্থাপত্যশিল্প দেখতে পাবেন। সুইজারল্যান্ডের পর এ প্রদর্শনী হবে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে ও ফ্রান্সের প্যারিসে। ২০১৯ সালে প্রদর্শনীটি আসবে ঢাকায়।
বেঙ্গল ইনস্টিটিউটের একাডেমিক কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মদ তৌহীদ জানালেন, তাঁদের আমন্ত্রণে বাংলাদেশে এসেছিলেন সুইজারল্যান্ডের কয়েকজন স্থপতি। বাংলাদেশের স্থপতিদের কাজ দেখে তাঁরা খুবই মুগ্ধ হন। তাঁদের জানা ছিল না, স্থাপত্যে বিশ্বমানের কাজ হচ্ছে এখানে। এরপর তাঁরা উদ্যোগ নেন এ ধরনের একটি প্রদর্শনী করার। পরে বেঙ্গল ইনস্টিটিউট এতে যুক্ত হয়।
বাংলাদেশের সমকালীন স্থাপত্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরা এ প্রদর্শনীর মূল উদ্দেশ্য। প্রদর্শনীর জন্য বাংলাদেশের স্থপতিদের কাজ বাছাই করেছে সুইস আর্কিটেকচার মিউজিয়াম। সুইস স্থপতি নিকলাস গ্রেবার কিউরেটরের দায়িত্ব পালন করছেন। সঙ্গে আছেন সুইস আর্কিটেকচার মিউজিয়ামের আন্দ্রেয়াস রুবি ও ভিভিয়ানা ইওহেনসব্যাগার।
মোহাম্মদ তৌহীদ বলেন, ‘বাংলাদেশের জলবায়ু ও অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে স্থাপত্য মিলেমিশে আছে, এ কারণে স্থাপত্যের ক্ষেত্রে নতুন ধরনের ডিজাইন উদ্ভাবিত হয়েছে। ব্যাপারটি নিয়েই ইউরোপের স্থপতিরা বেশ আগ্রহী।’ তাঁরই সম্পাদনায় বেঙ্গল ইনস্টিটিউট ভাস নামে নিয়মিত একটি নিউজলেটার বের করছে, যার ডিসেম্বর ২০১৬ সংখ্যায় আছে সুইস স্থপতিদের এ দেশে কার্যক্রমের পূর্ণ বিবরণ।
বাংলাদেশের ৬০টি স্থাপত্যশিল্প এখানে প্রদর্শিত হবে। অংশগ্রহণকারী ৩০ জন স্থপতির মধ্যে আছেন বশিরুল হক, শামসুল ওয়ারেস, নাহাস আহমেদ খলিল, সাইফ উল হক, জালাল আহমেদ, রফিক আজম, এহসান খান, সালাউদ্দিন আহমেদ, মেরিনা তাবাসসুম, কাশেফ মাহবুব চৌধুরীসহ আরও অনেকে।
বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের বলেন, ‘বাংলাদেশের স্থপতিরা এর আগে এককভাবে অনেক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী করলেও এত বড় মাপের প্রদর্শনী আর হয়নি। প্রদর্শনীর মাধ্যমে পাওয়া যাবে স্থাপত্যের বাংলাদেশকে।’
এ ছাড়া বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য নিদর্শনগুলোও থাকবে এই প্রদর্শনীতে। বাংলাদেশের স্থাপত্যশিল্পের পথিকৃৎ স্থপতি মযহারুল ইসলাম, বিশ্বখ্যাত স্থপতি লুই কান, পল রুডলফ নির্মিত স্থাপত্যের নিদর্শন থাকবে। আবুল খায়ের বলেন, বাংলাদেশের স্থাপত্যশিল্পের শুরুটা তাঁরা দেখাতে চেয়েছেন। শুরুটা হয়েছিল স্থপতি মযহারুল ইসলামের হাত ধরে। ষাটের দশকে তিনি যখন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান স্থপতি ছিলেন, তখন শাসকগোষ্ঠীর বাধার মুখেও বিশ্বখ্যাত কয়েকজন স্থপতি নিয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশে। তাঁর অন্তর্দৃষ্টির কারণেই বাংলাদেশের স্থাপত্যশিল্প আজ এ পর্যায়ে এসেছে।
তাঁদের মধ্যে লুই কান জাতীয় সংসদের নকশা করেছিলেন, পল রুডলফ কাজ করেছিলেন ময়মনসিংহের জাতীয় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সে সময় আরও এসেছিলেন রিচার্ড নয়ট্রা, স্ট্যানলি টাইগারম্যান, রবার্ট বোগি, কনস্তানতিনোস দক্সিয়াদিস প্রমুখ। তাঁদের হাত দিয়েই বাংলাদেশের প্রথম দিককার স্থাপত্যশিল্প তৈরি হয়েছে।
‘বেঙ্গল স্ট্রিম: দ্য ভাইব্র্যান্ট আর্কিটেকচার সিন অব বাংলাদেশ’ প্রদর্শনীটি আগামীকাল থেকে শুরু হলেও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হচ্ছে আজ। এতে অংশ নিতে এরই মধ্যে সুইজারল্যান্ডে গেছেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের ও বেঙ্গল ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক কাজী খালেদ আশরাফ। অনুষ্ঠানে আবুল খায়েরের সঙ্গে স্বাগত বক্তব্য দেবেন সুইজারল্যান্ডের বাসেল-স্টাটের সরকারপ্রধান এলিজাবেথ অ্যাকরমান। সুইজারল্যান্ডের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ১২টি ক্যান্টনের একটি হলো বাসেল-স্টাট।
পাঁচ মাসব্যাপী এই প্রদর্শনীর পাশাপাশি থাকবে নানা কার্যক্রম। ২ ডিসেম্বর হবে ‘হোয়েন দ্য যমুনা মিটস দ্য রাইন—লার্নিং ফ্রম রিসেন্ট আর্কিটেকচার ইন বাংলাদেশ’ (যখন যমুনা মিলেছে রাইনের সঙ্গে—বাংলাদেশের সাম্প্রতিক স্থাপত্য থেকে শিক্ষা) শীর্ষক একটি সভা।
আগামী বছরের ১৯ জানুয়ারি হবে গাইড ট্যুর ‘বেঙ্গল স্টাইল—ফ্রম ওল্ড টু নিউ’ (বাংলার শৈলী—পুরোনো থেকে নতুন)। ‘কিপ দ্যাট পেপার’ নামের একটি কর্মশালাও হবে সেদিন। ২৪ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে হবে আর্কিটেকচার ট্যুর।
আছে অনেকগুলো বক্তৃতাও। ১৫ ফেব্রুয়ারি স্থপতি মযহারুল ইসলামকে নিয়ে কথা বলবেন স্থপতি নুরুর রহমান খান। ১৫ মার্চ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপের প্রতিষ্ঠাতা রুনা খান বক্তব্য দেবেন ‘দ্য পুওর ক্যাননট অ্যাফোর্ড পুওর সলিউশনস’ (দরিদ্রের সমস্যার সমাধান দরিদ্র হলে চলে না) নিয়ে। ১২ এপ্রিল স্থপতি খন্দকার হাসিবুল কবির কথা বলবেন ‘কো-ক্রিয়েটিং স্পেস’ (মিলেমিশে স্থান নির্মাণ) বিষয়ে। এ ছাড়া মার্চে হবে বাংলাদেশের স্থাপত্যবিষয়ক চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী।
নিউজ ডেস্ক:
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৩:৩০ পি.এম, ১ ডিসেম্বর ২০১৭,শুক্রবার
এএস