অবশেষে নানা উৎকণ্ঠা আর উত্তেজনার অবসান ঘটিয়ে শুধুমাত্র দোয়া ও মোনাজাতের মধ্যদিয়েই শেষ হলো চাঁদপুর মেঘনা পাড়ে তাবলিগ জামাতের ৩ দিনের ইজতেমা।
দীর্ঘ এক মাসের সকল প্রস্তুতি শেষ করা হলেও তাবলীগ জামায়াতের দুটি গ্রুপের মধ্যে অভ্যন্তরীণ মতবিরোধের কারণে অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে প্রশাসনের কঠোর নিষেধাজ্ঞায় বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) গুটিয়ে ফেলা হয় ইজতেমার কার্যক্রম। এতে করে জেলা বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইজতেমা মাঠে উপস্থিত হওয়া ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
আজ দুপুরে সরেজমিনে ইজতেমা মাঠে গিয়ে দেখা যায় সকাল থেকেই মুসল্লিরা মিম্বাকে সামনে রেখে সামিয়ানা বিছানো মাঠে বসে পড়ে। যে কোনো মুহূর্তে ইজতেমা বন্ধ করে দেয়া হতে পারে এমন উৎকণ্ঠা নিয়েই শুরু হয় বয়ান। অপর দিকে অপর দিকে এখানে ইজতেমা করার কাকরাইলের সিদ্ধান্ত নেই এমন অভিযোগ এনেতাবলীগ জামায়াতের অপর পক্ষ ইজতেমা বন্ধের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়। তারা যে কোনো মূল্যে ইজতেমা বন্ধ করে দিবে বলে প্রশাসনকে জানায়।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে শান্ত হওয়ার কথা বলা হলে তারা চাঁদপুর পৌর ইদগাহ্ মাঠে গিয়ে জড়ো হয়।খবর পেয়ে চাঁদপুর মডেল থানার ওসি ইবরাহিম খলিল সেখানে গিয়ে তাদের শান্ত করেন। আর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) হারুনুর রশীদের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ইজতেমা মাঠে গিয়ে অবস্থান নেয়। পুলিশ সেখানে গিয়ে মুসল্লিদের ইজতেমার কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলার নির্দেশনা দেন।
এতে মুসল্লিলা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে এক পর্যায়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে থাকে। পুলিশ যথেষ্ট ধৈর্য ও বুদ্ধিমত্তার সাথে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব নাছির উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল।
তারা দু’জনই তাদের বক্তব্যে ইজতেমায় শরীক হওয়া মুসল্লিদের শ্রদ্ধা এবং সম্মান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা আপনাদের এই আয়োজনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা বিশ্বাস করি নিঃসন্দেহে এই আয়োজনটি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করা হয়েছে। এখানে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য নেই। কিন্তু তার পরেও আপনাদের অপর একটি পক্ষ এটি বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের কাছে স্মরকলিপি দিয়েছে। যার ফলে প্রশাসন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে নিরাপ্তার স্বার্থে ইজতেমা বন্ধ করার জন্যে বলেছে। আমরা আপনাদের কথা দিচ্ছি যে, নির্বাচনের পরে এখানেই আপনাদের ইজতেমা করতে দেয়া হবে। আমরা এখনও আপনাদের সাথে আছি এবং আগামীতেও আপনাদের সকল প্রকার সহযোগিতা করা হবে।’
একপর্যায়ের মুরব্বিরা মোনাজাতের মাধ্যদি ইজতেমা শেষ করার সিন্ধান্ত নেন। এসময় কয়েক হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি মোনাজাতে আল্লহর দরবারে দুই হাত তুলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ইজতেমা সম্পন্ন না করতে পারায় তাদের কান্নায় আশপাশের আকাশ ভারী হয়ে উঠে। এতে করে ইজতেমা ময়দানে এক হৃদয়বিদায়ক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তাঁরা চোখের জলে জাহানের সব মানুষের জন্য মঙ্গল কামনা করেন এবং সৎ ও ন্যায়ের পথে থেকে ইসলামের মর্মবাণী অনুসরণের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। পাশাপাশি একই সাথে দেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করা হয়।
এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান বলেন, ‘ইজতেমা হওয়ার বিষয়ে আমাদের কোনো বারণ ছিলো না। কিন্তু দু’টি পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেওয়ার শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির পিপিএম বলেন, ‘অনুমতি ছাড়াই একটি পক্ষ ইজতেমা করতে যাচ্ছিলো। আর আরেকটি পক্ষ সেটি বন্ধ করে দেয়ার জন্য রওনা দিচ্ছিলো। এমন অবস্থায় শান্তি সৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমরা ইজতেমা মাঠ থেকে তাদের সরে যেতে বলেছি।’
প্রসঙ্গত সম্প্রতি কাকরাইল মার্কাজ ভিক্তিক তাবলিগ জামায়াত দুটিভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। যার ফলশ্রুতিতে চাঁদপুরেও তাবলিগের মুসল্লিরা দুইভাবে বিভক্ত। সেই অভ্যন্তরীণ মতবিরোধের কারণে চাঁদপুর মেঘনা পাড়ে ৩দিনব্যাপি জেলা ইজতেমা নিয়ে মুখো-মুখি অবস্থান নেয় তাবলীগ জামায়াতের দুটি গ্রুপ। এর মধ্যে দিয়ে একটি পক্ষ মেঘনা পাড়ে ইজতেমার জন্য সকল শুরু করে আর অপর গ্রুপটি ইজতেমা বন্ধের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপী প্রদানসহ বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালায়। ফলে জেলা ইজতেমায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির আশঙ্কায় জেলা প্রশাসনের আহ্বানে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে তাবলীগ জামায়াতের দুই পক্ষকে নিয়ে জরুরি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়।
এতে উভয়ের মতামতের প্রেক্ষিতে আগামী ২২ থেকে ২৪ নভেম্বর পুরাণবাজার জাফরাবাদ এলাকায় মেঘনাপাড়ে দ্বিতীয় বারের মতো জেলা ইজতেমা হওয়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু অপর পক্ষটি পুণরায় তাদের পূর্বে অবস্থানে ফিরে আসলে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসন ইজতেমা বন্ধ করে দেয়।
স্টাফ করেসপন্ডেট
১৫ নভেম্বর, ২০১৮