চাঁদপুর জেলার প্রচীনতম বাণিজ্যিক এলাকা পুরাণবাজার। পশ্চিমে পদ্মা আর দক্ষিণে উত্তর পূর্বদিকে নিরব ডাকাতিয়ার পাড়ে গড়া বৃটিশ শাসনামল থেকেই একটি প্রসিদ্ধ বাণিজ্যিক শহর হিসেবে পরিচিত।
কালের পরিক্রমায় পুরাণবাজারে গড়ে উঠেছে নানা ধরনের ছোট ও মাঝারি শিল্প কারখানা।ধানের মিল, ময়দার মিল, মুড়ি-চিড়া, ব্যাকারি জাতীয় খাবারসহ বহু ধরনের শিল্পকারখানা থাকায় বিভিন্ন প্রাণীর আবাসস্থল গড়ে উঠে। এ সব প্রাণীর মধ্যে অন্যতম হলো বানর। যা এখন অনুকূল পরিবেশের অভাবে চাঁদপুরের পুরাণবাজার থেকে বানর বিল্প্তু হয়ে যাচ্ছে ।
এক সময় শহরের পুরাণবাজারে প্রচুর বানর দেখা যেতো। পশু-পাখি প্রিয় মানুষের সাথে বানরের সখ্যতা দেখতে বিভিন্ন জেলা থেকে অনেক পর্যটকের আগমন দেখা যেতো। আবার বানরের অত্যাচারে অনেকেই নতুন বজারে বাসা ভাড়া নিয়ে চলে এসেছে এমন ঘটনাও কম নয়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ফয়েজ আহমেদ মন্টু জানায়, পুরাণবাজারের মধ্য-পশ্চিম শ্রীরামদি, ট্র্যাংক পট্টি, ডাইল, বাতাসা , টিন আড়ৎ , চাল , পশ্চিম বাজার, নিতাইগঞ্জ ও লোহারপোলসহ বিভিন্ন স্থানে শত শত বানরের বসবাস ছিলো।
কয়েক বছরে ওই এলাকার গাছপালা কেটে বড় বড় ভবন গড়ে তোলায় বর্তমানে পুরো পুরাণবাজারে এক শতাধিক বানর রয়েছে। আগে ওই এলাকায় প্রচুর গাছপালা এবং খালি-পরিত্যাক্ত জায়গা ছিলো।
আর এতে করে সেখানে বানরও ছিলো অনেক। তখনকার সময়ে বিভিন্ন বাসা বাড়ির ছাদে, গাছের ডালে, বাড়ির আঙ্গিনায় বানরের উৎপাত দেখা যেতো।
স্থানীয় চা দোকানদার জাহাঙ্গীরসহ বেশ ক’জনের সাথে কথা বলে জানা যায় এ এলাকাগুলি এক সময় বানরের চিড়িয়াখানার মত দেখা যেতো। ওই সময়ে পুরাণাবাজরে শত শত বানরের দেখা মিলতো।
দিনের পর দিন গাছ পালা কেটে ইটের ভবন তৈরি করার ফলে বানরের বসবাসের পরিবেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। বানর গাছের ডাল পালায় চড়তেই বেশি পছন্দ করে।
প্রতিবছর বিদ্যুতের পিলারে চড়তে গিয়ে বৈদ্যুতিক তারে শক খেয়ে অনেক বানর মারা যায়। স্থানীয়রা জানায়, সবচেয়ে বেশি ভালোলাগতো যখন বানর দেখতে লোক জন দাঁড়িয়ে থাকতো। বিভিন্ন ধরনের খাবার ছুঁড়ে দিতো।
প্রচন্ড গরমে বানর শুধু দৌড় ঝাঁপ দেয়। গাছের ডাল কিংবা ভবনের কার্নিসে ঝুলে ঝুলে হাওয়া খেতো। ছাদের ওপর পানির ট্যাংকি খোলা পেলে কিংবা ট্যাংকি উপচে পানি পড়তে থাকলে বানরগুলি পানিতে গোসল করতো।
বানর রাতে বাতাসযুক্ত নিরাপদ জায়গায় ঘুমায়। শীত-বৃষ্টিতে ভবনে এবং গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকে । রাতে ঘুমাতে অসুবিধা হলে দিনের সূর্যালোতে বসে বসে ঘুমায়। আশ-পাশের পরিস্থিতি দেখলেই তারা বুঝতে পারে তাদের ওপর কোনো রকম আক্রমণ হতে পারে কিনা।
পুরাণ বাজার ট্যাংকপট্টির বাসিন্দা আয়েশা বেগম জানান, বানর এমনিতে কোনো ক্ষতি করে না। তবে ক্ষুধা লাগলে চুপি চুপি পাকের ঘরে ঢুকে পেঁয়াজ, গাঁজর ও অন্যান্য শাক-শবজি নিয়ে যায়। আর কলা পেলে তো কোনো কথাই নেই-মানুষের চোখ ফাঁকি দিয়ে থাবা মেরে কলা নিয়ে দৌড়ে পালায়।
সবসময় ভয়ে থাকতাম যে কোনো সময় বানর বাচ্চাদের আক্রমণ করতে পারে। বাড়ির ছাদে কাপড়-চোপড় শুকাতে দিলে নিয়ে যায় বা কমড়ে চিড়ে ফেলেত। বানর থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বাড়ির চারদিকে নেট বা জাল লাগাতাম। যাতে বানর আসতে না পারে। এখন আর তেমন আগের মতো বানর দেখা যায় না। মাঝে মধ্যে দু’একটি বানর দেখতে পাই।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের এক কর্মকর্তার বলেন, বানর হ্রাস পাওয়ার অন্যতম কারণ হলো ময়লা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বানর বসবাস করে। ফলে এ গুলি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে।
বানর বিলুপ্তির আরেকটি কারণ হলো-তারা যখন খাবারের জন্য বিভিন্ন বাড়ি খাবার ঘরে ঢুকে তখন বাড়ির গৃহিণী কিংবা অন্যলোকজন লাঠি অথবা গরম পানি ছুরে মারে।
যার ফলে বানরের অনাকাংখিত মৃত্যু ঘটে। বানর নিধনের ব্যাপারে কেউ প্রতিবাদ না করায় এর সংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে।
আশিক বিন রহিম[/author]
: আপডেট বাংলাদেশ সময় ১১:১৫ পিএম, ১৫ মে ২০১৬, রোববার
ডিএইচ