সারাদেশে ৬২ হাজার ৯৬ জন গ্রাহক ‘ভূতুরে’ বিদ্যুৎ বিলের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে । তাই ঔসব ‘ভূতুরে’ বিলজনিত পরিস্থিতির কারণে জুলাই মাসেও আবাসিকবিলম্ব মাশুল ছাড়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের সময় ৩০ জুনবলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
রোববার ৫ জুলাই দুপুরে বিদ্যুৎ বিভাগ আয়োজিত এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ সচিব ড. সুলতান আহমেদ বলেন, করোনার সময় সংক্রমণ রোধে মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসের বিদ্যুৎ বিল জুনের ৩০ তারিখ পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া দেয়ার সুযোগ পেয়েছে আবাসিক গ্রাহকেরা। কিন্তু অতিরিক্ত বিল নিয়ে জটিলতা হওয়ায় আরও কিছুদিন আবাসিক গ্রাহকদের বিলম্ব মাশুল মওকুফের চিন্তা করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ সচিব বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে রিডাররা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার রিডিং করতে পারেননি। এজন্য অতিরিক্ত বিলের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগ সব সময়ই গ্রাহকবান্ধব। তারা যে আস্থা হারিয়েছেন, আশা করছেন শিগগিরই তা পুনরুদ্ধার করতে পারবেন। ভবিষ্যতে বিতরণ কোম্পানিগুলো এ ধরনের সংকট সমাধানে মিটার রিডিং না নিয়ে বিল করবে না। ইতোমধ্যে জুন মাসে শতভাগ মিটার রিডিং নিয়েছে বিতরণ কোম্পানিগুলো।’
করোনার সময় দেশে ভূতুড়ে বিলের অভিযোগ ওঠার পর বিদ্যুৎ বিভাগ টাস্কফোর্স গঠন করে। বিতরণ কোম্পানিগুলোও নিজস্ব তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে প্রমাণিত হওয়া কয়েকটি বিতরণ কোম্পানি দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শুরু করেছে। টাস্কফোর্সের সুপারিশের আলোকে বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানির ২৯০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে নানা ধরনের বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ সচিব।
তিনি বলেন, ‘ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) অতিরিক্ত বিলের অভিযোগে ৩৬টি ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলীকে কারণ দর্শানোর নেটিশ দিয়েছে।
এ ছাড়া চারজনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এর বাইরে ১৩ জন মিটার রিডার এবং একজন ডেটা এন্ট্রি অপারেটরকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) দুইজন মিটার রিডারকে বরখাস্ত করেছে। নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো) দুইজন মিটার রিডারকে বরখাস্ত করেছে, একজন নির্বাহী প্রকৌশলীকে বদলি করেছে। ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) ২২৩ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে।
তবে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এখনও এ বিষয়ে চোখে পড়ার মতো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে বিদ্যুৎ সচিব বলেন, আরইবি মনিটরিং কমিটি গঠন করেছে। এখন তাদের তদন্ত চলছে। দায়ীদের খুঁজে বের করে চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে প্রতিষ্ঠানটি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, এসব ঘটনায় কারও বড় ধরনের কোনো দায়িত্ব অবহেলা রয়েছে কি না, সেটাই দেখা হচ্ছে। তবে কোনো নিরাপরাধ ব্যক্তি যেন শাস্তির মুখে না পড়ে এবং কোনো দোষী ব্যক্তি যেন ছাড় না পেয়ে যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে বলা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ বিভাগ দাবি করে, সারাদেশে ৬২ হাজার ৯৬ গ্রাহক অতিরিক্ত বিল পেয়েছে। এর মধ্যে আরইবির দুই কোটি ৯০ লাখ গ্রাহকের মধ্যে ৩৪ হাজার ৬৮১ জন (০.১২ শতাংশ), ডিপিডিসির ৯ লাখ ২৬ হাজার ৬৮৯ জন গ্রাহকের মধ্যে ১৫ হাজার ২৬৬ জন (১.৬৫ শতাংশ), ডেসকোর ১০ লাখ গ্রাহকের মধ্যে ৫ হাজার ৬৫৭ জন (যা ৭ লাখ ১০ হাজার ৬৬৩ জন পোস্টপেইড গ্রাহকের ০.৭৯ শতাংশ), নেসকোর ১৫ লাখ ৪৮ হাজার গ্রাহকের মধ্যে দু’ হাজার ৫২৪ জন (০.১৬ শতাংশ), ওজোপাডিকোর ১২ লাখ ১৩ হাজার গ্রাহকের মধ্যে ৫৫৬ জন (০.০৪৫ শতাংশ) এবং পিডিবির ৩২ লাখ ১৮ হাজার ৫১৫ জনের মধ্যে দুই হাজার ৫৮২ জন (০.০৮ শতাংশ) ভূতুরে বিলের শিকার হয়েছেন।
বিদ্যুৎ সচিব বলেন, বিল নিয়ে প্রাপ্ত অভিযোগ দ্রুত সমাধান করা হচ্ছে এবং হবে। কোনো অবস্থাতেই ব্যবহৃত বিদ্যুতের বেশি বিল গ্রাহকদের পরিশোধ করতে হবে না।’
মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসের বিদ্যুৎ বিল জুনের ৩০ তারিখ পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে আবাসিক গ্রাহকরা। কিন্তু অতিরিক্ত বিল নিয়ে জটিলতা হওয়ায় আরও কিছুদিন আবাসিক গ্রাহকদের বিলম্ব মাশুল মওকুফের চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ সচিব।
তিনি বলেন,‘ অভিযোগগুলো নিষ্পত্তির স্বার্থে আবাসিক গ্রাহকদের বিলম্ব ফি মওকুফের সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়ে আালোচনা হচ্ছে। ‘ আবাসিক গ্রাহকদের জন্য বিলম্ব ফি মওকুফের চিন্তা করা হলেও শিল্প ও বাণিজ্যিক গ্রাহকেরা এ সুযোগ পাবেন না বলে জানিয়েছেন সচিব। ’
ঢাকা ব্যুরো চীফ , ৬ জুলাই ২০২০