বিরল প্রজাতির দাতিনা মাছের পোনা উৎপাদন

কাঁটার জন্য মাছ খেতে ভয় পান এমন মানুষের কাছে দাতিনা মাছের আলাদা কদর রয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলের এ মাছটির একদিকে যেমন কাঁটা কম তেমনি খেতেও সুস্বাদু। সম্প্রতি বিরল প্রজাতির এ মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা। গবেষক দলের নেতৃত্ব দেন ইনস্টিটিউটের খুলনার পাইকগাছাস্থ লোনাপানি কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.মো.লতিফুল ইসলাম।

ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, গবেষণার জন্য এ মাছের পোনা চার বছর আগে খুলনার শিবসা নদী থেকে সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীকালে কেন্দ্রের পুকুরে তা লালনপালন করে আবদ্ধ জলাশয়ে প্রচলিত ভাসমান খাবারে অভ্যস্তকরণের মাধ্যমে প্রজননক্ষম মাছে পরিণত করা হয়েছে। দাতিনা মাছের এ প্রজাতিটি দেখতে সাদা ও গড়ে ৭ শ থেকে ৮ শ গ্রাম ওজনের হয়। তবে সর্বোচ্চ ওজন হয়ে থাকে ১ হাজার ২শ গ্রাম। সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুম হচ্ছে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাস অর্থাৎ এ মাছটি শীতকালে প্রজনন করে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দু’ বছর বয়সে ২শ থেকে ৪শ গ্রাম ওজন হলেই এরা প্রজননক্ষম হয়ে যায় এবং ডিম ধারণ ক্ষমতা গড়ে ৩ হাজার ৫ শ ডিম/গ্রাম। উপকূলীয় অঞ্চলে দাতিনার তিনটি প্রজাতি পাওয়া যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এ মাছটি ‘সাদা দাইতনা’ নামে অধিক পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম pomadasys hasta|

দাতিনা মাছের পোনা উৎপাদনে সফলতা প্রসঙ্গে গবেষক দলের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.মো.লতিফুল ইসলাম জানান, গত চার বছর যাবৎ মাছটির কৃত্রিম প্রজনন নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। গত প্রজনন মৌসুমে পোনা উৎপাদনে প্রাথমিক সফলতা অর্জিত হলেও পরবর্তীকালে পোনা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। এ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এ বছর মাত্র এক জোড়া প্রজননক্ষম দাতিনা মাছকে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে লক্ষাধিক পোনা তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘উৎপাদিত পোনা নিয়মিত খাবার নিচ্ছে এবং সুস্থ-সবল আছে। চলতি জানুয়ারি মাসে পর্যায়ক্রমে অধিকসংখ্যক মাছকে প্রজনন করিয়ে ব্যাপক পোনা উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।’

এ বিজ্ঞানী বলেন, ‘পরিপক্ক মাছ পুকুর হতে সংগ্রহ করে গবেষণা কেন্দ্রের হ্যাচারিতে হরমোন প্রয়োগের মাধ্যমে এবার সর্বাধিক পোনা উৎপাদন সফলতা অর্জিত হয়েছে। হ্যাচারিতে উৎপাদিত পোনাকে এখন রটিফার জাতীয় খাবার দেয়া হচ্ছে। উৎপাদিত রেণু পোনার বয়স এখন ১২ দিন।’

তিনি আরও বলেন,‘ মিঠাপানির মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে লোনাপানির মাছের কৃত্রিম প্রজনন করানো কষ্টসাধ্য। লোনাপানির মাছের ক্ষেত্রে এর পোনার খাদ্য হিসেবে লাইভ ফিড প্রয়োজন হয়।’

সংশ্লিষ্ট গবেষকরা জানান, বিশ্বের দু-একটি দেশে দাতিনার খাদ্য ও খাদ্যাভাস এবং ডিম ধারণ ক্ষমতা নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করা হলেও এর প্রজনন সম্পর্কিত কোনো গবেষণা-তথ্য পাওয়া যায়নি। এ বিবেচনায় দাতিনা মাছের এ প্রজনন সফলতা বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

বাংলাদেশ মত্স্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন,‘দাতিনা মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উত্পাদনের ফলে এর পোনা প্রাপ্তি সহজ হবে এবং ঘেরে অন্যান্য মাছের সঙ্গে মিশ্রচাষ করা সম্ভব হবে। ফলে চাষিরা অধিক লাভবান হওয়ার পাশাপাশি মাছটির জীববৈচিত্র্য সমুন্নত থাকবে।’

বার্তা কক্ষ, ৯ জানুয়াবি ২০২১
এজি

Share