ব্যাটে বলে রানের মিছিল তেমন জমজমাট না হলেও আসর কিন্তু রঙিন ছিলো তৃতীয়বারের মতো আয়োজিত বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগ (বিপিএল)। খেলোয়াড়, দর্শকদের পাশাপাশি আসরের অনেকটা রঙই নিজেদের করে নিয়েছিলেন বিপিএলের অফিসিয়িাল ব্রডকাস্টার চ্যানেল নাইনের দুই উপস্থাপিকা। তারা হলেন বাংলাদেশের আমব্রিন ও ভারতের পামেলা ভুতোরিয়া।
দুই সুন্দরীর প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় বেশ ঝলমলে ছিলো এবারের বিপিএল। কিন্তু ফাইনাল ম্যাচটি মাঠে গড়ানোর আগেই বাদ পড়ে গেলেন আমব্রিন। বিপিএল থেকে হঠাৎ করেই এই লাক্স তারকার বিচ্যুতি নিয়ে মিডিয়াপাড়ায় চলছে নানা গুজব-গুঞ্জন। সেই সাথে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে তোলপাড়। সেখানে সমালোচনার মুখে পড়েছে চ্যানেল নাইন ও তাদের বিপিএল সম্প্রচার ব্যবস্থাপনা বিভাগটি।
আলোচনার শুরুটা অবশ্য আমব্রিন নিজেই করে দিয়েছেন সোমবার বিকেলে ফেসবুকের এক স্ট্যাটাসে। তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন, ফাইনাল ম্যাচে মাঠ কিংবা টিভির কোনো আয়োজনে দেখা যাবে না উপস্থাপক-অভিনেত্রী আমব্রিনকে।
তিনি লিখেছিলেন, ‘ যদিও পুরো টুর্নামেন্টে ভালো করেছি তবুও বিপিএলের ফাইনালে আমি থাকছি না। এর কারণ- যেকোনো মূল্যেই হোক না কেন, এমন কিছু করতে আমি প্রস্তুত ছিলাম না, যা আমার নৈতিকতার সঙ্গে যাবে না। রাখে আল্লাহ মারে কে?’
এই ঘোষণার কিছুক্ষণ পরই আমব্রিনকে বাদ দেয়ার কথা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে নিশ্চিত করেন চ্যানেল নাইনের অনুষ্ঠান ও ইভেন্টপ্রধান তানভীর খান। তিনি লেখেন, ‘বিপিএল ২০১৫ থেকে বাদ পড়েছেন আমব্রিন। আচরণবিধি লংঘন এবং উচ্ছৃঙ্খল লাইফস্টাইলের জন্য তাঁকে বাদ দেওয়া হয়েছে।’
আমব্রিন-তানভীরের স্ট্যাটাসের এই সাংঘর্ষিকতা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে সব মহলে। তাই বিপিএলের ফাইনাল ম্যাচটিকে ফিকে করে আলোচনায় এই দু’জন।
ঘটনার বিস্তারিত জানতে জাগো নিউজের পক্ষ থেকে আজ (মঙ্গলবার) যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি আমব্রিন ও তানভীরের। তবে কাল থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমে তারা আত্মপক্ষ সমর্থন করে আলাদা আলাদা বক্তব্য দিয়েছেন।
আমব্রিন জানান তাকে অনৈতিক প্রস্তাব দেয়া হয়েছিলো। তাতে রাজি হননি বলেই তাকে বিপিএলের সঙ্গে চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই বাদ দেয়া হয়েছে। আর এটা তানভীর খান করেছেন নিজের ব্যক্তি ক্ষমতা দিয়ে। তিনি বেশ কিছু গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমি অনৈতিক কোনো কাজ করতে পারবো না। আমার যোগ্যতা দিয়েই যে কোনো কাজ করতে চাই। বিপিএলের ফাইনালের আগে আমাকে এমন কিছু করতে বলা হয়েছে, যা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আপস করিনি বলেই আমাকে বাদ দেয়া হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, মাসজুড়ে আমি মাঠে কাজ করেছি। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আমার বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ আমি উচ্ছৃঙ্খল চলাফেরা করেছি। তাই আমাকে বাদ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু আমাকে ক্লিয়ার করেনি আমি কী এমন উচ্ছৃঙ্খলতা করেছি যে আমাকে বাদ দেয়া হয়েছে? আমি কী মাঠে লেট করে গিয়েছি? কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছি? নাকি মদ খেয়ে মাঠে প্রবেশ করেছি? এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমাকে নির্দিষ্ট করে বলেনি।’
তবে তানভীর খান এখন পর্যন্ত কোনো গণমাধ্যমে মুখ খুলেননি।
এদিকে আমব্রিনের বাদ পড়া ও তার বক্তব্যের সূত্র ধরে মিডিয়া সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি আমব্রিনের কথা সত্যি হয় তবে এটা খুবই দুঃখজনক। কেননা, একজন শিল্পীকে অনৈতিক প্রস্তাব দেয়াটা অন্যায়। এটা শিল্পী ও শিল্পের অবমাননা। যারা এমন অশালীন ও অসামঞ্জস্যহীন প্রস্তাব দিয়ে শিল্পীদের ছোট করে তাদের বিরুদ্ধে সঠিক ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
পাশাপাশি তারা দাবি করেছেন, বিপিএলে কাজ করতে এসে আমব্রিন নিজেকে সফল করে তুলেছিলেন। তার গ্ল্যামারাস উপস্থিতি প্রশংসিত হয়েছে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রথমবারের মতো বিপিএলে সঞ্চালকের কাজ করতে গিয়ে ভারতীয় এক ক্রিকেট ওয়েবসাইটের সৌজন্যে সেরা পাঁচ আবেদনময়ী নারী ক্রিকেট উপস্থাপিকার মধ্যে ৪র্থ নির্বাচিত হন তিনি। আমব্রিনের এই সাফল্যটাই মেনে নিতে পারেনি চ্যানেল নাইন।
এই বক্তব্যের পিছনে তারা যুক্তি হিসেবে এর আগের আসরগুলোতে উপস্থাপনা করা শিনা চৌহানকে বাদ দেয়ার বিষয়টি তুলে আনেন। তারা বলেন, শিনা বাংলাদেশে কাজ করতে এসে এ দেশের স্বনামধন্য চিত্রনির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘পিঁপড়াবিদ্যা’ ছবির নায়িকা হিসেবে কাজ করে প্রশংসিত হন। সেই সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়েই শিনাকে বাদ দেয়া হয়েছিলো বলে দাবি তাদের। যদিও চ্যানেল নাইনের পক্ষ থেকে তানভীর খান গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন চুক্তি ভঙ্গ করার জন্যই বাদ পড়েছিলেন শিনা।
বিনোদন নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ১০:৫৫ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫, মঙ্গলবার
এমআরআর