‘নদীরে ও নদী তুই, একটু দয়া কর। ভাঙ্গিস না আর বাপের ভিটা বসত বাড়ি ঘর!’ শিল্পীর এ গানটি যেনো প্রকৃতির নিয়মে পদ্মা-মেঘনার দ্বিমুখী আচরণের শিকার নদীর তীরবর্তী চাঁদপুরের জনপদের জন্য গাওয়া।
একদিকে চাঁদপুরে উজান থেকে ধেয়ে আসা মেঘনার পানি বিপদ সিমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করেছে। আর চাঁদপুরের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।
অপরদিকে প্রবল ¯্রােত আর ঢেউ নদীর তীরে আছড়ে পড়ছে। ভেঙ্গে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে নদীর পাড় ও চরাঞ্চলে বাস করা জনপদের শেষ সম্বল বসতভিটাসহ বাড়িঘর।
দ্বিমুখী থাবায় জেলার নদী সিকিস্তি চর এলাকাসহ নদী পাড়ে বসবাসরত অসহায় পরিবারগুলোর শত শত বসতভিটে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও গত কয়েক দিনে মেঘনার প্রবল ¯্রােতে চাঁদপুর-শরীয়তপুর নৌ-রূটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফেরীঘাট কতৃপক্ষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় অফিস সূত্রে জানায় সোমবার (১ আগস্ট) চাঁদপুরে সর্বোচ্চ পরিমান পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে ৪. ৬৭ ও সর্বনি¤œ ছিলো ৩.৬১।
হানারচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস ছাত্তার রাঢ়ী জানান, হরিণা ফেরীঘাট, রাঢ়িকান্দি, হাওলাদার বাড়ি ও সরকার বাড়ি, উত্তর গোবিন্দিয়ায় গত ক’দিনের ভাঙ্গনে ৩০-৩৫টি বসতঘর সরিয়ে ফেলতে হয়েছে। হরিণা ফেরিঘাটের অবস্থাও শোচনীয়। মসজিদ মাদ্রাসাও ভাঙ্গনের মুখে।
রাজরাজেশ্বর ইউপির চেয়ারম্যান হযরত আলী বেপারী জানান, তার ইউনিয়নের বলিয়াচর,লগ্গিমারাচর, মান্দেরবাজার, গোয়ালনগর ও জাহাজমারা এই পাঁচটি গ্রাম জুড়ে নদীর ভাঙ্গন চলছে। একের পর এক বসতঘর খুলে ফেলা হচ্ছে। ভাঙ্গা ঘরের অংশগুলো রাখার উঁচু জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। চারদিকে পানি। ভাঙ্গনের শিকার পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে। কেউ এগিয়ে আসছে না।
অপরদিকে হাইমচর উপজেলার ঈশানবালা, মোল্লাকান্দির নদী ভাঙ্গন পরিস্থিতি ভয়াবহ। ঈশানবালাবাজারসহ আশপাশের অনেক এলাকা এখন নদীতে।
৫নং হাইমচর ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদাত সরকার জানান, মোল্লাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ভেঙ্গে ফেলতে হয়েছে। বহু পরিবারের বসতভিটে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গনের ব্যাপকতা আরও বাড়ছে।
এদিকে বিআইডব্লিউটিএর চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরি সার্ভিসের ব্যবস্থাপক ইমরান হোসেন রোহান চাঁদপুর টাইমসকে জানান, বন্যার পানি চাঁদপুরের উপর দিয়ে নামছে। মেঘনায় প্রচ- ¯্রােতে কোনো ফেরি চলতে পারছে না। পানির অস্বাভাবিক টান থাকায় এ রূটে ফেরি যাতায়াত ব্যাহত হচ্ছে। সারাদিন ২-১ ট্রিপ দিতে পারছে। এ কারণে দুই পাড়ে অনেক গাড়ি আটকা পড়ছে।
বিআইডব্লিউটিএর ম্যানেজার মেরিন আবুল কালাম খান চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘নদীর উত্তাল পরিস্থিতিতে হরিণা ও শরীয়তপুর ঘাটে পল্টুন সংযোগ গ্যাংওয়ের ওপর জোয়ারের পানি উঠে যাচ্ছে। ঘাট ও রাস্তা সমস্যা এখন প্রকট।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুরের শহর রক্ষা প্রকল্পের এসও আশরাফ চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘শহর রক্ষা বাঁধ তারা পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। মেঘনা ধনাগোদার নির্বাহী প্রকৌশলী আতাউর রহমান চাঁদপুর অফিসের চার্জে আছেন। কোনো সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে ১০ হাজার জিও ব্যাগ ও ৪/৫ হাজার সিসি ব্লক রাখা হয়েছে বলে জানান।’
তিনি আরো জানান, ‘চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের যমুনা রোড পাইলট হাউজ, মোলহেড, পুরাণবাজার ঠোঁডা, রামঠাকুর দোল মন্দির ও হরিসভা পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ। এসব স্থান দিয়ে নদীর ¯্রােতের তীব্রতা অনেক বেশি এবং ১৮০ থেকে ২৫০ ফিট গভীরতা বিরাজ করছে।’
চাঁদপুর নদী ভাঙ্গন ও জোয়ারে নি¤œাঞ্চল এবং চরাঞ্চল প্লাবিত হলেও দুর্যোগের শিকার পরিবারগুলোর এখনো অনেকে ত্রাণ সাহায্য পাননি।
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৭:০০ এএম, ৩ আগস্ট ২০১৬, বুধবার