সাধারণ বিল বন্ডের পাশাপাশি প্রাইজ বন্ডেও বিনিয়োগ বাড়ছে। দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে আসা,আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও সঞ্চয় প্রবণতা,পারিবারিক ও ধর্মীয় উৎসবের ওপর ভিত্তি করে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। জানা গেছে,চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি শেষে প্রাইজ বন্ডে বিনিয়োগের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা। কিন্তু এক মাস আগেও এখানে মোট বিনিয়োগ ছিল ১৭ কোটি ২০ লাখ।
ব্যাংকাররা বলছেন, ফেব্রুয়ারি মাসে বিবাহ উৎসব ও এক মাস পর ঈদ হওয়ার কারণে প্রাইজ বন্ডে বিনিয়োগ বেড়েছে।
সোনালী ব্যাংকের শেরাটন শাখার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের শাখায় সার্বিক প্রাইজ বন্ড বিক্রি বেড়েছে। যেমন—আজই দু’জন গ্রাহক এসেছিলেন। দু’জনই প্রাইজ বন্ড কিনেছেন বিবাহ অনুষ্ঠানে উপহার দেয়ার জন্য।
’
রূপালী ব্যাংকের টিসিবি করপোরেট শাখার অন্য একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,‘ দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো। তাই মানুষ প্রাইজ বন্ড কিনে ঘরে রাখতে আগের মতো ভয় পাচ্ছে না। ৫ আগস্টের পর বাড়িতে ডাকাতির ভয় ছিল। তাই অনেকেই প্রাইজ বন্ড ভেঙে অ্যাকাউন্টে জমা করেছিলেন । ‘
অন্যদিকে মানুষের হাতে টাকাও বেড়েছে। যদি দেশের পরিস্থিতি আরো স্বাভাবিক হয়, তাহলে এ খাতে বিনিয়োগ আরো বাড়তে পারে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, প্রাইজবন্ড সরকারি খাতের একটি সঞ্চয়ী উপকরণ। যে কেউ যেকোনো সময় এতে বিনিয়োগ করতে পারেন। আবার যেকোনো সময় ভাঙিয়ে টাকা নগদায়ন করাও যায়।
বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও কোনো সীমা নেই। এটি কিনতে কোনো ব্যাংক হিসাব বা ফরম পূরণের শর্তও নেই। মূল্যস্ফীতি বাড়লে এমন একটি সহজ ও সরকারি গ্যারান্টিযুক্ত সঞ্চয়ী উপকরণের প্রতি সঞ্চয়কারীদের আগ্রহ কমে। আর বাজারে টাকার সরবরাহ বাড়লে বা আর্থিক স্থিতিশীলতা ফিরলে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি শেষে প্রাইজ বন্ডে বিনিয়োগের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা। কিন্তু এক মাস আগেও এখানে মোট বিনেয়োগ ছিল ১৭ কোটি ২০ লাখ। আর আগের বছরের (২০২৪) ফেব্রুয়ারিতে প্রাইজ বন্ডে বিনিয়োগ ছিল ৩৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে ১৭২.৬৭ শতাংশ এবং এক বছরের ব্যবধানে ৩৫.৫৪ শতাংশ বিনিয়োগ বেড়েছে প্রাইজ বন্ডে।
সূত্র জানায়,শরিয়া ভিত্তিতে পরিচালিত ব্যাংকগুলো ছাড়া বাকি সব ব্যাংকের যেকোনো শাখা, ডাকঘর ও সঞ্চয় ব্যুরো অফিস এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সব শাখা অফিস থেকে এটি কেনা ও ভাঙানো যায়। গ্রাহকরা এর মাধ্যমে সঞ্চয় করতে পারেন এবং বিনিয়োগ করা টাকা সরকার ঋণ হিসেবে গ্রহণ করে। এতে কোনো হিসাব বা কাগজপত্র লাগে না। নগদ টাকা দিয়ে এ বন্ড কেনা যায়। এটি নিজের কাছে সংরক্ষণ করতে হয়। এতে কোনো সুদ বা মুনাফা দেওয়া হয় না। তবে প্রতি তিন মাস পর পর বছরে চারবার লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে গ্রাহকদের নগদ টাকা পুরস্কার হিসেবে দেয়া হয়।
প্রাইজ বন্ডের ৭৮টি সিরিজ রয়েছে। প্রতি সিরিজের জন্য পুরস্কার রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম পুরস্কার ছয় লাখ টাকার একটি, দ্বিতীয় পুরস্কার সোয়া তিন লাখ টাকার একটি, তৃতীয় পুরস্কার এক লাখ টাকার দুটি, চতুর্থ পুরস্কার ৫০ হাজার টাকার দু’টি, পঞ্চম পুরস্কার ১০ হাজার টাকার ৪০টি। পুরস্কারের অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংক, যেকোনো তফশিলি ব্যাংকের শাখা,জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরোর শাখা অফিস, ডাকঘর থেকে তোলা যায়। মুনাফা থেকে ২০ শতাংশ উৎস কর কেটে রাখা হয়।
বিক্রি করা সব প্রাইজ বন্ডই লটারিতে আসে না। ড্রর দু’ মাস আগে যেগুলো বিক্রি হয়েছে সেগুলো লটারিতে উঠবে। লটারির ড্রর দু’ মাসের কম সময় পর যেসব প্রাইজ বন্ড বিক্রি হয়েছে সেগুলো লটারিতে আসবে না। তবে পরে লটারিতে আসবে।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত তিন ধরনের প্রাইজ বন্ড চালু করা হয়েছিল। এর মধ্যে দ ‘টি বাতিল করা হয়েছে। চালু আছে শুধু ১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজ বন্ড। ১০ ও ৫০ টাকার প্রাইজ বন্ড বাতিল করা হয়েছে। ১৯৯৫ সালের ২ জুলাই থেকে এটি চালু করা হয়। এর পর থেকে এর সিরিজ সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু প্রাইজ বন্ডের টাকার মান বাড়ানো হয়নি। চড়া মূল্যস্ফীতির কারণে এখন ১০০ টাকার মান অনেক কমে গেছে। যে কারণে ১০০ টাকার প্রাইজ বন্ডের প্রতিও আগ্রহ কম।
অনেকেই মনে করেন, এখন আরো বেশি মানের প্রাইজ বন্ড চালু করা উচিত। প্রাইজ বন্ডের ড্র অনুষ্ঠান ও এর ফলাফল যথেষ্ট প্রচার হয় না। যে কারণে অনেক গ্রাহকই জানেন না কখন ড্র হচ্ছে, এর ফলাফল কোথায় পাবে। এ কারণে অনেক প্রাইজ বন্ড পুরস্কার পেলেও সেগুলো সঞ্চয়কারীরা নিতে পারছেন না।
প্রাইজ বন্ড হারিয়ে গেলে বা চুরি হয়ে গেলে বিপদ। যেহেতু বাহকই এর প্রকৃত মালিক। যে কারণে যার হাতে থাকবে তিনিই এর মালিক। ফলে হারিয়ে গেলে বা চুরি হয়ে গেলে বিনিময় মূল্য পাওয়া যাবে না।
১২ মে ২০২৫
এজি
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur