বিনামূল্যে বই নয়, কম্পিউটার চাই

ইকতেদার আহমেদ:
প্রযুক্তির দ্রুত উৎকর্ষ সাধন হচ্ছে। কম্পিউটার প্রযুক্তি আবিষ্কার পরবর্তী কম্পিউটার বলতে ডেস্কটপ কম্পিউটারকে বুঝাত। ডেস্কটপ কম্পিউটার পৃথক সিপিইউ ও মনিটরের সমন্বয়ে গঠিত। তাছাড়া যেসব দেশে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত নয় সেসব দেশে ডেস্কটপ কম্পিউটারের সঙ্গে আলাদাভাবে ইউপিএস সংযুক্ত করে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ঘটলে কম্পিউটারে চলমান কোনো কাজের যেন বিঘœ না ঘটে তার ব্যবস্থা করা হয়। ডেস্কটপ কম্পিউটার সাধারণত অফিস বা বাসগৃহে নির্দিষ্ট স্থানে অনেকটা স্থায়ীভাবে রাখা হয়। সচরাচর এর স্থানান্তর হয় না।

প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ডেস্কটপ কম্পিউটারের জায়গায় ল্যাপটপের আগমন ঘটে। ল্যাপটপ সহজে বহনযোগ্য হওয়ার কারণে এবং বিদ্যুৎ সংযোগ ছাড়া একটি নির্ধারিত সময় পর্যন্ত এটি সচল থাকায় এর ব্যবহারকারী যেকোনো স্থানে যেকোনো অবস্থায় এমনকি ভ্রমণরত অবস্থায়ও এটি ব্যবহার করতে পারে।
ল্যাপটপের পরবর্তী ক্ষুদ্র সংস্করণ হলো ট্যাবলেট। ট্যাবলেট আকৃতি ও ওজনের দিক থেকে ল্যাপটপের চেয়ে অনেক ছোট ও হালকা। ল্যাপটপে যেসব সুযোগসুবিধা রয়েছে এর সবগুলো ট্যাবলেটেও বিদ্যমান।

মোবাইল-ফোন যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তির একটি অভিনব ব্যবস্থা। মোবাইল-ফোনের সর্বশেষ সংস্করণ হলো স্মার্টফোন। ডেস্কটপ, ল্যাপটপ বা ট্যাবলেটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ সাপেক্ষে যে সকল বিভিন্নধর্মী কাজ করা যায় স্মার্টফোনের মাধ্যমেও অনুরূপ সকল ধরনের সুবিধাদি নিশ্চিতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্মার্টফোনের প্রথম যখন আগমন ঘটে তখন ডেস্কটপ, ল্যাপটপ ও ট্যাবলেটের প্রাথমিক পর্যায়ের ন্যায় এটিও বেশ ব্যয়বহুল ছিল। কিন্তু সম্প্রতি এটির ব্যয় এক-দশমাংশেরও নিচে নেমে এসেছে। দেশের অভ্যন্তরে স্মার্টফোনের উৎপাদন বা সংযোজনের ব্যবস্থা করা গেলে এটির মূল্যের আরও অনেক হ্রাস ঘটবে।

পৃথিবীর উন্নত দেশসমূহের কম্পিউটার সহজলভ্য হওয়া পরবর্তী শিশুদের লেখাপড়ায় হাতেখড়ি ও হাতের লেখা শিখানোর কাজে কম্পিউটারের প্রচলন ঘটে। বর্তমানে উন্নত দেশসমূহে শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে যে পাঠদান করেন তাতে তারা ল্যাপটপ, ট্যাবলেট বা স্মার্টফোনে ধারণকৃত বক্তব্য প্রজেক্টরের মাধ্যমে উপস্থাপন করে থাকেন। শিক্ষার্থীরা উপস্থাপিত বক্তব্য তাৎক্ষণিক বা পাঠদান পরবর্তী তাদের নিজস্ব ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসে সংরক্ষণ করে নিতে পারে।

আমাদের দেশে সরকার শিক্ষার প্রসারে এবং শিক্ষাকে সহজলভ্য করার জন্য প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পুস্তক সরবরাহ করে আসছে। এ পুস্তক সরবরাহে একজন শিক্ষার্থীর পিছনে সরকারের যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয় অনুরূপ বা সামান্য কিছু বাড়তি অর্থের মাধ্যমে সরকার প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট বা ল্যাপটপ প্রদানের ব্যবস্থা করতে পারে।

পৃথিবীর উন্নত দেশসমূহে সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টারনেট সুবিধা সম্বলিত ল্যাপটপ, ট্যাবলেট বা স্মার্টফোনের ব্যবহার অনুমোদিত। ওইসব দেশে প্রথমদিকে সংরক্ষণবাদীদের পক্ষ হতে আপত্তি উঠেছিল, সকল পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের অবাধে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ উঠতি বয়সের শিক্ষার্থীদের অশ্লীলতার দিকে ধাবিত করবে। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল, তাদের আপত্তির নেতিবাচক দিকের চেয়ে ইতিবাচকের পাল্লা শিক্ষার্থীদের অনুকূলেই বেশি।

কম্পিউটার প্রযুক্তি সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী শক্তি ও সৃজনশীলতা বিকাশে অশেষ অবদান রেখে চলেছে। এ উন্মুক্ত জ্ঞানের ভা-ার হতে আমাদের শিক্ষার্থীরা যতবেশি জ্ঞান আহরণ করবে, তা তাদের নিজের দেশ ও জাতির জন্য ততবেশি মঙ্গলজনক ও কল্যাণকর। সুতরাং প্রতিবছর বিনামূল্যে বই বিতরণে সরকার যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে, একটি বছরে শিক্ষার্থীদের জন্য সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় করে তাদের কম্পিউটার প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া যায়, তবে তা নিঃসন্দেহে আমাদের উন্নতি ও অগ্রগতিকে যে তরান্বিত করবে এমন আশাবাদ যথার্থ বিবেচিত।

(লেখক : সাবেক জজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সম্পাদনা : জব্বার হোসেন, সূত্র-আমাদের সময়)

: আপডেট ৫:০০ এএম, ২৮ এপ্রিল ২০১৬, বৃহস্পতিবার
ডিএইচ

Share