ঘুর্ণিঝড় মিধিলার আঘাতে মতলব দক্ষিণ উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হয়েছে। বিদ্যুতের খুটি ভেঙে যাওয়ার কারনে বহু এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে অর্ধ শতাধিক কৃষকের ইরি ধানের বীজতলা।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড় মিধিলার আঘাতে বসত ঘর, বিদ্যুতের খুঁটি, গাছপালা ভেঙ্গে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে যাওয়ায় উপজেলার প্রায় ৩৭ টি গ্রামে গত ২৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তাছাড়া টানা বর্ষনে ইরি ধানের বীজতলা ডুবে যাওয়ায় এখানকার কৃষকরা বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার অভিযোগ করেছেন।
উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা গেছে উপাদী দক্ষিণ ইউনিয়নের বাকরা গ্রামের ১টি ও উপাদী গ্রামে ১টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে লাইন বিপর্যস্ত হয় এবং গাছ ও গাছের ডালপালা ভেঙে বিদ্যুতের তাড় ছিড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
এদিকে মতলব পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের উদ্দমদী গ্রামের গড় প্রধানিয়া বাড়ির জহির প্রধানীয়ার একটি চৌচালা টিনের ঘর ও ১টি দোচালা টিনের ঘরের উপর গাছ পড়ে ঘর দুটি ভেঙে পড়ে এবং ঘরে থাকা আসবাবপত্র চুর্ণবিচুর্ণ হয়ে যায়। ঘর মালিক জহির প্রধান বলেন, ঘুর্ণিঝড় শুরু হলে বাড়ীর প্রতিবেশীর ঘরে আশ্রয় নেয়ায় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তবে বসতঘর ভেঙে যাওয়ায় প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে বলে প্রাথমিক ধারনা করছে ওই পরিবারটি। এছাড়া উপাদী উত্তর, উপাদী দক্ষিণ, নায়েরগাঁও উত্তর ও নায়েরগাঁও দক্ষিণ এবং খাদেরগাঁও ও নারায়নপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নিকট জানতে চাইলে তারা জানান, হঠাৎ করে ঘুর্ণিঝড় মিধিলার আঘাতে প্রায় অর্ধশতাধিক গাছ ভেঙ্গে গেছে এবং ১৩ টি ছোট বড় ঘর ভেঙে গেছে। কৃষকদের ফসলি জমি কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। পরিষদের সদস্যদের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য নিচ্ছেন বলেও ইউপি চেয়ারম্যানগন জানান।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় মিধিলার প্রভাবে শুক্রবার দিন রাত টানা বর্ষনে ফসলি মাঠে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ইরি ধানের জন্য তৈরী বীজতলা ডুবে গেছে পানির নিচে। এতে শতাধিক কৃষক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। উপজেলার উপাদী গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, কাজিয়ারা গ্রামের কৃষক এনায়েত উল্লা, তুষপুর গ্রামের কৃষক ইব্রাহীমসহ অন্ততঃ ১০জন কৃষক জানান, ইরিচারা রোপনের জন্য তৈরী বীজতলা ১২ ঘন্টা টানা বর্ষনে পানির নিচে তলিয়ে যায়।
মতলব দক্ষিণ উপজেলা পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানাজার (ডিজিএম) জানান, ঘূর্ণিঝড়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মোট ২টি বৈদ্যুতিক পিলার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, এছাড়া অর্ধশতাধিক গাছ ও গাছের ডালা ভেঙ্গে প্রায় ৩৭ টি গ্রাম বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। মতলব পৌরসভা সদর এলাকাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালু রয়েছে। আশা করা যায়, রবিবারের মধ্যে সবকটি গ্রামের বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা সম্ভব হবে। তিনি জানান বিদ্যুৎ অফিসের ১০ টীম প্রানান্ত চেষ্টায় কিছু সংযোগ দেয়া হয়েছে, বাকী ক্ষতিগ্রস্থ লাইন মেরামতের কাজ চলছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা চৈতন্য পাল বলেন, ঘূর্ণিঝড় মিধিলার প্রভাবে এ এলাকার বেশ কিছু কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। বীজতলা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। অতি বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে কৃষকের ডুবে যাওয়া বীজতলা রক্ষায় পানি নিষ্কাষনসহ কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়ার কথা জানান তিনি।
প্রতিবেদক: মাহফুজ মল্লিক, ১৮ নভেম্বর ২০২৩