দিনাজপুর প্রতিনিধি | আপডেট: ০৩:০৫ অপরাহ্ণ, ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫, বুধবার
পর্নো ছবিতে দেখা গেছে- এই অপবাদে একঘরে করার পর ধর্ষণ করা হয়েছিল তাকে। ওই ঘটনায় মামলা করায় হত্যার হুমকির মুখে দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের সেই পল্লীবধূকে এবার গ্রাম ছাড়তে হয়েছে।
দিনাজপুর শহরে এক আত্মীয়র বাসায় আশ্রয় নেয়া রেহেনা বেগম বলছেন, হুমকি পাওয়ার পর পুলিশের কাছে নিরাপত্তা না পেয়ে প্রাণ বাঁচাতে তিনি বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে সোমবার বিকালে বাড়ি ফিরেছিলেন রেহেনা। ওই সময় ছুরি ঠেকিয়ে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেওয়া হয় বলে তার অভিযোগ।
পরে রাতেই তিনি পালিয়ে শহরে চলে আসেন এবং দিনাজপুর প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের কাছে ঘটনার বর্ণনা দেন।
রেহেনা বলেন, “আইনের লোক আমাকে কোনো বিচার দিল না, আমি কিছু বিচার পাইলাম না। আমি একটু বাঁচতে চাই। একটু সুষ্ঠু বিচার চাই আপনাদের কাছে।”
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন এই নারী।
পর্নো ভিডিওতে দেখা যাওয়ার অপবাদ দিয়ে রেহেনা ও তার পরিবারকে ছয় মাস একঘরে করে রাখা ও মারধরের ঘটনায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ প্রথম গণমাধ্যমে আসে জুলাইয়ের শেষ দিকে।
চিরিরবন্দর উপজেলার আউলিয়াপুকুর ইউনিয়নের গালতৈড় কাজলডাঙ্গা গ্রামের হুসেন আলীর স্ত্রী রেহেনা বেগমের অভিযোগ, ওই এলাকার রকিবুল ইসলাম ও মঞ্জুরুল ইসলাম নামের দুই ব্যক্তি গত ২৯ ডিসেম্বর এসে দাবি করে, তাকে পর্নো ভিডিওতে দেখা গেছে। এরপর তাকে ‘অশালীন প্রস্তাব’ দেয় তারা।
এর প্রতিবাদ করলে গ্রামে ওই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয় এবং গত ৩ জানুয়ারি সালিশ বসিয়ে একঘরে করা হয় রেহেনা ও তার পরিবারকে।
এরপর গত ১০ জুলাই রেহেনা ও তার বাবা এনামুল হককে গ্রামের মাতব্বর আবু বকর সিদ্দিকের বাড়িতে ধরে নিয়ে লাঠিপেটা করা হয়। ওই ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ ওঠে।
ঘটনাটি সাংবাদিকরা জানার পর ২৪ জুলাই এনামুল হক নয়জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেন। কিন্তু চিরিরবন্দর থানার ওসি আনিছুর রহমান ঘুষ নিয়ে ওই মামলার আরজি পরিবর্তন করেছেন বলে অগাস্টের শেষ দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন রেহেনা। এর দুই দিনের মাথায় তাকে ধর্ষণ করা হয়।
গত ২৭ অগাস্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রেহেনা সাংবাদিকদের বলেন, ২৫ অগাস্ট রাতে পাশের বাড়ি থেকে ফেরার পথে তাকে তুলে নিয়ে হাত-মুখ বেঁধে ধর্ষণ করে সাইদুল মাস্টার, মঞ্জুরুল ইসলাম, রকিবুল ইসলাম ও অজ্ঞাত পরিচয় একজন। প্রথম তিনজন নির্যাতন মামলার আসামি।
সোমবার রাতে দিনাজপুর প্রেসক্লাবে ভাই ও একমাত্র সন্তানকে পাশে নিয়ে রেহেনা বলেন, বিকালে হাসপাতাল থেকে কাজলডাঙ্গায় বাড়ি ফেরার পর অপরিচিত এক ব্যক্তি বাড়িতে ঢুকে পেটে ছুরি ঠেকিয়ে মামলা তুলে নিতে বলে। তা না হলে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়।
এ সময় তার চিৎকারে পরিবারের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে রক্ষা করে বলে জানান রেহেনা।
তিনি বলেন, এ ঘটনা চিরিরবন্দর থানার ওসিকে জানানোর পরও তিনি ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রাণ বাঁচাতে স্বামী-সন্তান নিয়ে শহরে পালিয়ে এসেছেন তিনি।
রেহেনা বলেন, “ওরা ভাড়া করে অনেক লোকজন আনছে আমাকে মারার জন্য। আমার জীবনের কোনো নিরাপত্তা নাই।
আমি সঙ্গে সঙ্গে ওসি সাবকে ফোন দিছিলাম। ওসি সাব ফোন রিসিভ করে বলে তোমাকে তো মারে নাই। তুমি তো এখনো বাঁচি আছি।
“কিন্তু ভাইয়া আমি তো মরেই গেছি। আর কীভাবে বাঁচি থাকি। উনি আমার কোনো বিচারই করতেছে না। বলতেছে, যখন হবে তখন ন্যায্য বিচার করব।
“কিন্তু আমি যে ধর্ষিত হইলাম, আমি যে এইভাবে জীবনে ক্ষত বিক্ষত হইলাম, আমি এইভাবে কীভাবে বেঁচে থাকি ভাইয়া। আমর খুব কষ্ট হচ্ছে ভাইয়া বেঁচে থাকতে,” কাঁদতে কাঁদতে বলেন রেহেনা।
যোগাযোগ করা হলে রেহেনার অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি আনিছুর রহমান বলেন, “হুমকির বিষয়ে আমি কিছু জানি না।”
রেহেনাকে ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত কাউকে এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি বলেও জানান তিনি।
চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/২০১৫
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur