বিগত সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করেছে: এহসানুল হক মিলন

সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এবং ইআরআই এর চেয়ারম্যান ড. আ ন ম এহসানুল হক মিলন বলেন, এই সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা খুবই দক্ষ। তিনি একজন শিক্ষাবিদ। তাই আমরা আশা করেছিলাম অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দিবে। কিন্তু তারা তা এখনো পর্যন্ত ঠিক করতে পারেনি। গত সরকার যা করেছে তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলেই বারবার ব্যর্থ হয়েছে। এরফলে তারা শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করেছে তারা।

শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ফাউন্ডেশন অব এডুকেশনাল ট্রান্সপারেন্সি (এফইটি) এবং এডুকেশন টাইমসের আয়োজনে কোন পথে শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাক্রম সংস্কার শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রায় পাঁচ কোটি শিক্ষার্থী রয়েছে। যাদের বাদ দিয়ে কখনো একটি দেশ উন্নত হতে পারে না। আগে যত ধরনের কমিশন হয়েছিল সবাই ব্যর্থ হয়। বর্তমান কমিশন গঠন করে এমন একটি ব্যবস্থা চালু করবে যাতে শিক্ষা ব্যবস্থায় দীর্ঘস্থায়ী সমাধান পাওয়া যায়। দেশে অনেক অভিজ্ঞ শিক্ষক রয়েছে যাদের নিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করা সম্ভব। অন্যান্য দেশে ১৬ বছর পর্যন্ত কেউ স্কুলে না যায় সেটি অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হয়। এর জন্য অভিভাবককে জবাবদিহি করতে হয়। ছাত্র লোন নিতে হলে যোগ্যতা লাগবে। আমরা আশা করছি বর্তমান সরকার সবার আশা পূরণ করবে। দেশে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে অনেক অবহেলা করা হচ্ছে। শিক্ষকদের বেতন ভাতা কম বলে অনেকেই এই পেশায় আসতে চান না। তাই তাদের যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা জরুরি।

গোলটেবিল বৈঠকে শিক্ষাবিদ ও গবেষক প্রফেসর মোহাম্মদ শফিউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে ৮৫ শতাংশ কৃষক, পাঁচ শতাংশ শ্রমিক এবং অন্যান্য হচ্ছে বাকিরা। তাই তাদের সন্তান বেশি স্কুলে পড়েন। আমাদেরকে সেই কথা মাথায় রেখেই শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে। আমরা এনজিও নির্ভর শিক্ষা চালু করতে যাচ্ছি। যা দেশে কখনো গ্রহণ যোগ্য নয়। প্রি ও প্রাথমিক শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবক সমন্বয়েই শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। প্রত্যেক সরকারি লোকের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পড়াতে বাধ্য করতে হবে।

শিক্ষা ও শিশু রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক রাখাল রাহা বলেন, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে। তাই কোন উচ্চ বিলাসী পরিকল্পনা করা যাবে না। গত কারিকুলামে কোন ধরনের প্রশিক্ষণ না দিয়েই চালু করেছিল। যার কারণে মাঝপথে তা ভেঙে যায়। আমাদের দেশের মতো অসহায় অভিভাবক পৃথিবীর আর কোথাও নেই।

সিসিমপুরের কান্ট্রি ডিরেক্টর মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, শিশুরা এমন শিক্ষা নেবে যাতে বিশ্বের বুকে দেশের মান ধরে রাখতে পারে। তবে দেশে এমন শিক্ষা ব্যবস্থায় এখনো চালু হয়নি। এদেশে ১০ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে পড়ানো হয়। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এমন হবে যেন এক জায়গা থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়।

সেইভ দ্যা চিলড্রেন ও এডুকেশন প্রোগ্রামের ডিরেক্টর মেহেরুন্নিসা স্বপ্না বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থাকে বারবার বদলানো হয়েছে। ফলে ব্যবস্থায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা থাকা অত্যন্ত জরুরি। শিক্ষাকে প্রযুক্তি নির্ভর করতে পারলে তবেই এর মান উন্নত হবে। শিক্ষার মূল্যায়ন ব্যবস্থা একেবারে ভঙ্গুর হয়ে গেছে। বিশ্বের সঙ্গে চলতে হলে শিক্ষাক্রমকে সাজানো জরুরি।

অভিভাবকগণ বলেন, আমাদেরকে চাপের মধ্যে থাকতে হচ্ছে কারণ সন্তানরা যদি জিপিএ-৫ না পায় তাহলে সামাজিক ও মানসিক চাপ তৈরি হয়। মানুষ নানান কথা বলে। সবাই মনে করে জিপিএ-৫ না পেলে সে কোন শিক্ষার্থী না। তাই এগুলো থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে যাতে জ্ঞানের মূল্যায়ন হয়। শিক্ষাটাকে এখন বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া আমাদের প্রাথমিক শিকাকে সবার আগে সংস্কার করা জরুরি।

চাঁদপুর টাইমস ডেস্ক/ ১৮ অক্টোবর ২০২৪

Share