ফেসবুকে ব-দ্বীপ প্রকাশনার অশ্লীল লেখা ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার বিষয়টি নিয়ে তথ্য-প্রমাণ নিয়ে ছবিসহ প্রথম স্টাটাস দেন ভারতের প্রখ্যাত ইসলামি লেখক ও ব্লগার নয়ন চ্যাটার্জি।
সম্প্রতি তার ইসলাম নিয়ে গবেষণা ও নির্যাতিত মুসলমানদের বিষয়ে ব্লগ লেখা এবং তা ফেসবুকে পোস্ট করার দায়ে ভারতীয় সরকারের সিদ্ধান্তে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তার ৩২ লাখের একটি ফ্যান পেজও বন্ধ করে দিয়েছে।
বন্ধ করার পরপরই তিনি ‘Noyon chatterjee Returned’ নামে আরেকটি পেজ খুলে সে পেজটিতে অমর একুশে বইমেলার ব-দ্বীপ সম্পর্কে অনেক ইসলাম অবমাননার তথ্য ও ছবি তুলে ধরেন।
মুহূর্তের মধ্যে তাই ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে সোস্যাল মিডিয়া। পরে বাংলাদেশেও এটি ছড়িয়ে পড়লে কর্তৃপক্ষের নজে আসে। একুশে গ্রন্থমেলার ব-দ্বীপ প্রকাশনকে সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়।
সোমবার বিকেলে মেলার পঞ্চদশ দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ব-দ্বীপ প্রকাশনের (১৯১ নম্বর) স্টল বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
সর্বশেষ খবরে জানা যায়, তীব্র দাবির মুখে ব-দ্বীপ প্রকাশনার প্রকাশক (মালিক) শামসুজ্জোহা মানিকসহ ৩জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ঘটনাস্থলে শাহবাগ থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক জানান, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে খবর পেয়ে স্টলে অভিযান চালাই। ইতোমধ্যে শামসুজ্জোহা মানিক সম্পাদিত ‘ইসলামের বিতর্ক’ শিরোনামের সংকলন গ্রন্থটিতে মহানবী সম্পর্কে নানা আপত্তিকর শব্দ পাই। আর সে কারণেই বাংলা একাডেমির সদস্য সচিবের সঙ্গে কথা বলে স্টলটি বন্ধ করে দিয়েছি। একই সঙ্গে শামসুজ্জোহা মানিকের অন্যান্য বই জব্দ করেছি। এসব স্টাডি করে দেখব, যদি সেগুলোতেও কোনো অসঙ্গতি পাই তবে পরবর্তী পদক্ষেপ নিব।’
খবর নিয়ে জানা যায়, ব-দ্বীপ প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী শামসুজ্জোহা মানিক।
ব-দ্বীপ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত শামসুজ্জোহা মানিকের অন্যান্য বইগুলো হলো— ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সমস্যা’, ‘ধর্ম ও বাঙ্গালীর পুনরেকত্রীকরণ’, ‘ধর্মের রাজনীতি ও আধুনিক সভ্যতা’, ‘বাংলাদেশের দুর্বৃত্তায়ন’ ‘নারী ও ধর্ম’, ‘বাংলাদেশের সঙ্কট’, ‘ধর্ম ও যাঁতাকলে বাঙ্গালী জাতি’, ‘ইসলামের ভূমিকা ও সমাজ উন্নয়নের সমস্যা’, ‘ইসলাম বিতর্ক’, ‘ইসলামে নারীর অবস্থান’ প্রভৃতি।
সংস্থাটির অধিকাংশ বইয়েই শামসুজ্জোহা মানিকের মৌলিক রচনা অথবা সম্পাদনা।
স্টলে কর্তব্যরত বই বিক্রয়কর্মী কলি জানায়, ‘এসব বইমেলার প্রথম দিন থেকেই ছিল। অনেকে কিনেছেও। কিন্তু কোনোরকম বিতর্ক তৈরি হয়নি। আমি নিজেও জানি এখানে কী আছে। হঠাৎ পুলিশ আসল তার অনেকক্ষণ বই অনুসন্ধান করে স্টল বন্ধ করে দিল।’
প্রকাশক ও লেখক শামসুজ্জোহা মানিকের সাথে তাদের যোগাযোগ আছে কিনা এ বিষয়ে কলি বলেন, ‘চেষ্টা করেছি কিন্তু তার নাম্বার বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করতে পারিনি।’
প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্টলটি বন্ধ করে দেয়ার পর, ব্লগার নয়ন চ্যাটার্জির ঘনিষ্ঠজন দেশের একজন প্রখ্যাত আইটি স্পেশালিস্ট নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, আমি জেনেছি কিছুক্ষণ আগে ব-দ্বীপ প্রকাশন স্টল বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। জব্দ করেছে ৫টি বই। তবে শুধু স্টল বন্ধ করলেই হবে না। প্রকাশনীর মালিককে বিচারের আওতায় আনতে হবে। কারণ এর আগে গত বছর রোদেলা প্রকাশনীর স্টলকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার কারণে বন্ধ করা হয়েছিলো।’
তিনি আরো জানান, বাংলা একাডেমীর বইমেলার নীতিমালা ১৩ এর ১৩ অনুচ্ছেদে বলা হচ্ছে- অশ্লীল ও রুচিগর্হিত বই প্রকাশ করলে স্টল বরাদ্দ বাতিল করা হবে। সেই সঙ্গে আর কোনো সময় সেই স্টলকে বরাদ্দ দেয়া হবে না।
অর্থাৎ রোদেলা প্রকাশনী বাংলা একাডেমীর নীতিমালা অনুযায়ী স্টল বরাদ্দ পায় না। কিন্তু তারপরও তাদেরকে ১৫৩,১৫৪, ১৫৪ নং স্টল অর্থাৎ তিনটি পজিশন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এটা অবশ্যই বাংলা একাডেমীর নীতিমালা বিরোধী। অর্থাৎ স্টল বন্ধ করা যাস্ট আইওয়াশ।
এদিকে ফেসবুকের মাধ্যমে তথ্যটি ছড়িয়ে পড়ায় এবং প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়ায় ইতোমধ্যে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও মেলা কর্তৃপক্ষ ধন্যবাদ জানিয়ে স্টাটাস দিচ্ছেন।
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট : আপডেট ০৩:০৭ এএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, মঙ্গলবার
ডিএইচ