ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর নতুন পরিস্থিতিতে ৩১ দফায় কিছু সংযোজন ও বিয়োজন করতে চায় বিএনপি। নতুন এই রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নটি সামনে আসার পর নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে ৩১ দফা নিয়ে তৃণমূলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। ইতিমধ্যে সংস্কারের কাজও শুরু করেছে। সুশীল সমাজ এবং যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল এবং জোটগুলোরও মতামত নেয়া হচ্ছে।
এসব কিছু রেকর্ড করে রাখছে দলটি। সংস্কারের কাজ শেষে চূড়ান্ত রূপরেখা সেমিনার কিংবা ইভেন্ট করে জাতির সামনে আবারো তুলে ধরার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে সংস্কারের কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে তা এখনো বলা যাচ্ছে না। বিএনপি বলছে, সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া। এটা বিএনপি’র কাছে নতুন কিছু নয়। যারা বলছেন, তাদের কাছে নতুন হতে পারে। আর বিএনপি ঘোষিত রূপরেখায় তেমন কিছু সংযোজন করার প্রয়োজন নেই। দীর্ঘ ৬ মাস কাজ করে এই রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। আর বিএনপি রূপরেখা তো ঘোষণা করেছে। সুতরা নতুন করে ঘোষণা করার কিছু নেই।
৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের প্রত্যয় ব্যক্ত নিয়ে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যাত্রা শুরু হয়। এই সংস্কারের অংশ হিসেবে পৃথক ৬টি কমিশনও গঠন করেছে সরকার। এ ছাড়া রাষ্ট্র পুনর্গঠনের লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের উদ্যোগে জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠিত হয়েছে এবং সাম্প্রতিক সময়ে বিশিষ্টজনরাও রাষ্ট্র সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে বিএনপি বলছে, রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়গুলো নতুন কিছু নয়। গত বছরের জুলাইয়ে বিএনপিসহ সব বিরোধী দল মিলে রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে ৩১ দফা ঘোষণা করেছিল। রাষ্ট্রের যত ধরনের সংস্কার প্রয়োজন, বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলে ওই দফাগুলো প্রণয়ন করা হয়। রূপরেখা ঘোষণার পর এর ওপর এক বছর বিভিন্ন সেমিনার এবং ওয়ার্কশপও করেছে দলটি।
বিএনপি’র নেতারা বলছেন, বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা রূপরেখার মধ্যে রাষ্ট্রের প্রায় সব সংস্কারের কথা বলা আছে। এরপরও যদি এখানে দু-একটা সংযোজন করতে হয়, সেগুলো বিএনপি আলোচনার মাধ্যমে সংযোজন ও বিয়োজন করবে। এজন্য দল থেকে এই ৩১ দফা নিয়ে তৃণমূলের যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এটা নিয়ে জনগণের সঙ্গে কথা বলা হবে।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফায় যা আছে, এতে যোগ করার মতো বেশি কিছু নেই। এটা নিয়ে বিএনপি দীর্ঘ ৬ মাস কাজ করেছে। সুশীল সমাজ এবং যুগপৎ আন্দোলনের রাজনৈতিক দলসহ সবার সঙ্গে কথা ও আলোচনার মধ্যদিয়েই এই রূপরেখা তৈরি করা হয়। সুতরাং রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয় নতুন না। এখন যারা সংস্কারের কথা বলছেন তাদের কাছে নতুন হতে পারে। কিন্তু আমাদের কাছে নতুন না। আর ৩১ দফায় কিছু সংযোজন ও বিয়োজন বিষয়ে কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ বলেন, ৩১ দফা সংস্কার চলমান রয়েছে। সবার কাছ থেকে প্রস্তাবও নেয়া হচ্ছে। সেগুলো রেকর্ডও রাখা হচ্ছে। আর সংস্কার করার পর সেমিনার কিংবা ইভেন্টের আয়োজন করে এটা আবারো জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে। বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স মানবজমিনকে বলেন, ৩১ দফায় সংযোজন ও বিয়োজনের বিষয়ে কাজ চলছে। এজন্য বিভিন্ন মহলের মতামতও নেয়া হচ্ছে।
ওদিকে সম্প্রতি যুগপৎ আন্দোলনের দল ও জোটের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। এসব বৈঠকে ৩১ দফা রূপরেখা সংস্কারের বিষয়ে গুরুত্বারোপ হয়। সূত্র জানায়, ৩১ দফা রূপরেখা বাস্তবায়নে তৃণমূলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এটা বাস্তবায়নে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন আছে বলে মনে করছে দলগুলোর নেতারা। তারা বলছেন, এই ঐক্য বিনষ্ট করা যাবে না। যদি ৩১ দফাতে আরও কিছু পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হয়, সেটাও করবে। জনগণ যদি মনে করে আরও কিছু পরিবর্তন করার প্রয়োজন রয়েছে- সেটাও তারা জনগণের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবে।
গণফোরাম সভাপতি মোস্তফা মোহসীন মন্টু বলেন, আমাদের সবচেয়ে বেশি যেটা প্রয়োজন, সেটা হচ্ছে জাতীয় ঐক্য। ৩১ দফা আমাদের সকলের মতামত। জাতীয় প্রয়োজনে পরিবর্তন করা যাবে।
প্রসঙ্গত,২০২৩ সালে ১৩ জুলাই সংবিধান, রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে ৩১ দফা রূপরেখা ঘোষণা করে বিএনপি। গণতন্ত্র মঞ্চ এবং বিএনপি এই রূপরেখা একইসঙ্গে ঘোষণা করার কথা ছিল। পরে পৃথক পৃথকভাবে ৩১ দফা রূপরেখা ঘোষণা করে তারা।
চাঁদপুর টাইমস রিপোর্ট
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
এজি