Home / সারাদেশ / বিএনপির ৩১ দফা থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার
Bnp
ফাইল ছবি

বিএনপির ৩১ দফা থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার

রক্তক্ষয়ী জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার পদক্ষেপ হিসেবে সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ছিল দেশের সংবিধানসহ রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কার। এ কারণে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ‘সংস্কার’ শব্দটি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়। তবে শুরুর দিকে জাতির সামনে সংস্কারের কোনো সুস্পষ্ট রূপরেখা না থাকলেও প্রাথমিক রুপরেখা হিসেবে সামনে ছিল বিএনপি ঘোষিত রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা রূপরেখা।

সংবিধান ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই এই ৩১ দফা রূপরেখা ঘোষণা করে বিএনপি।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্র ব্যবস্থা সংস্কারে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে। অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও বিভিন্ন খাতের সংস্কারে মোট ১১টি কমিশন গঠন করে। এর মধ্যে রয়েছে সংবিধান, নির্বাচন, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, শ্রম অধিকার, গণমাধ্যম এবং নারী বিষয়ক কমিশন। এই কমিশনগুলো বিভিন্ন ধাপে গঠিত হয়েছে।

এর মধ্যে প্রথম ধাপে গঠিত ৬টি সংস্কার কমিশনের কার্যক্রমের শেষ দিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজকে সহ-সভাপতি করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়।

চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর পর রাজনৈতিক দলসমূহ ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে বিভিন্ন ধাপের ধারাবাহিক আলাপ-আলোচনার মধ্যদিয়ে গত ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে চূড়ান্ত করা হয় ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’। এরপর গত ১৭ অক্টোবর রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে আনুষ্ঠানিকভাবে জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হয়। ইতোমধ্যেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের আলোকে সরকার জুলাই ‘জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান) আদেশ’ জারি করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ, জুলাই জাতীয় সনদের সুপারিশ এবং বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফা বিশ্লেষণ করেছে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)। বিশ্লেষণে সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ এবং বিএনপির ৩১ দফা রূপরেখায় বেশ কয়েকটি অংশে মিল পাওয়া গেছে। এই প্রতিবেদনে বিশ্লেষণটি তুলে ধরা হলো-

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা

বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা রূপরেখার ২ নম্বর দফায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় এবং স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে স্থায়ী সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে একটি ‘নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশন আইনসভার (সংসদ) মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কিংবা আইনসভা ভেঙে গেলে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার শপথ না নেওয়া পর্যন্ত, সর্বোচ্চ ৯০ (নব্বই) দিন মেয়াদের একটি অন্তর্বর্তী সরকার নিয়োগের সুপারিশ করেছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫৮ (খ) সংশোধনপূর্বক সংসদের মেয়াদ অবসান হওয়ার ১৫ দিন পূর্বে এবং মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে ভঙ্গ হওয়ার পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত করতে হবে।

এদিকে গত ২০ নভেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের রায় ঘোষণা করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ, যা চতুর্দশ সংসদ নির্বাচন থেকে বাস্তবায়িত হবে।

টানা দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয়

বিএনপির ৪ নম্বর দফায় বলা হয়েছে, পরপর দুই টার্মের অতিরিক্ত কেউ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবে না।

এ বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন সুপারিশ করেছে, একজন ব্যক্তি দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।

জুলাই সনদে বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী পদে যত মেয়াদ বা যতবারই হোক সর্বোচ্চ ১০ বছর থাকতে পারবেন। এজন্য সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদসমূহে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে।

দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ

বিএনপির পঞ্চম দফায় বলা হয়, বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের সমন্বয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সংসদে ‘উচ্চকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা’ প্রবর্তন করা হবে।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের হারের ভিত্তিতে (সংখ্যানুপাতিকভাবে) রাজনৈতিক দলের সদস্য ও বিশিষ্টজনদের সমন্বয়ে ১০০টি আসন নিয়ে সংসদের উচ্চকক্ষ সৃষ্টি করা, কমপক্ষে ৩০ শতাংশ নারীর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা এবং বিরোধীদলকে ডিপুটি স্পিকারের পদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে।

জুলাই সনদে বলা হয়, নিম্নকক্ষের নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের ১০০ জন সদস্য নির্বাচিত হবেন।

নির্বাচন ব্যবস্থা

বিএনপির ৭ নম্বর দফায় বলা হয়,রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত এবং বিশিষ্টজনের অভিমতের ভিত্তিতে স্বাধীন, দক্ষ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও দৃঢ়চিত্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠন করার লক্ষ্যে বর্তমান ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন,২০২২’ সংশোধন করা হবে। ইভিএম নয়, সব কেন্দ্রে পেপার-ব্যালটের মাধ্যমে ভোট প্রদান নিশ্চিত করা হবে। রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন সংস্কার করা হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা হবে।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে এবং নাগরিক সমাজের অর্থবহ অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে যোগ্য ও সুনামসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারদের নিয়োগ প্রদান করা হবে। এছাড়াও সুপারিশ করা হয়েছে, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিধান বাতিল করা। কোনো আসনে মোট ভোটারের ৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে পুনঃনির্বাচন অনুষ্ঠান করা।

স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে বলা হয়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জন্য একটি স্থায়ী ‘স্থানীয় সরকার কমিশন’ গঠন করা। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আয়োজন করা।

জুলাই জাতীয় সনদে বলা হয়, বিদ্যমান সংবিধানের ১১৮ (১) ধারা সংশোধন করে নতুন সংশোধিত প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। সংশোধিত প্রস্তাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং আইনে নির্ধারিত সংখ্যক নির্বাচন কমিশনার সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন কমিশন থাকবে।

স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে বলা হয়, সংবিধানে এরূপ যুক্ত করা হবে যে, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে ১৮ আগস্ট ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারির ফলে আগামীতে আর স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের আইনি সুযোগ বাতিল করা হয়েছে।

বিচার বিভাগ সংস্কার

বিএনপির ৯ নম্বর দফায় বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধান ও মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। বর্তমান বিচারব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একটি ‘জুডিশিয়াল কমিশন’ গঠন করা হবে। অধঃস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিধানের কর্তৃত্ব সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যাস্ত হবে (সংবিধানের ভাষা)। বিচার বিভাগের জন্য সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি পৃথক সচিবালয় থাকবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অভিশংসন প্রশ্নে সংবিধানে বর্ণিত ইতোপূর্বেকার ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করা হবে। এজন্য সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে। দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে কেবল জ্ঞান, প্রজ্ঞা, নীতিবোধ, বিচারবোধ ও সুনামের কঠোর মানদণ্ডে যাচাই করিয়া বিচারক নিয়োগ করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগের লক্ষ্যে সংবিধানের ৯৫(গ) অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা ও মানদণ্ড সম্বলিত ‘বিচারপতি নিয়োগ আইন’ প্রণয়ন করা হবে।

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিতে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের একচ্ছত্র ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ, স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস, স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থা, বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট ডিভিশনের স্থায়ী বেঞ্চ, জেলা আদালতকে সম্প্রসারিত করে উপজেলা পর্যায়ে এবং আদালত অঙ্গন দলীয়করণমুক্ত রাখতে একগুচ্ছ সুপারিশ করেছে।

এতে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ ও শৃঙ্খলার নিমিত্তে- সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে বিচারকের সংখ্যা নির্ধারণে প্রধান বিচারপতির সিদ্ধান্তের প্রাধান্য এবং আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিধান প্রণয়ন; যথাসম্ভব স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগের জন্য প্রধান বিচারপতিকে প্রধান করে ৯ (নয়) সদস্য বিশিষ্ট ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ কমিশন’ গঠনের উদ্দেশ্যে আইন প্রণয়ন; প্রণীত আইনের অধীনে গঠিত কমিশন কর্তৃক উন্মুক্ত আবেদনের ভিত্তিতে প্রার্থী বাছাই এবং সুপারিশ করা হবে।

এ বিষয়ে জুলাই জাতীয় সনদে বলা হয়, নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে কার্যকরভাবে পৃথকীকরণের লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব সচিবালয় থাকবে এবং এজন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা হবে। বিচার বিভাগের আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে এই সচিবালয়ে সংযুক্ত তহবিল থেকে অর্থায়ন করা হবে। এই সচিবালয়ের ওপর অধস্তন আদালতের প্রশাসনিক কার্যক্রম, বাজেট প্রণয়ন, অধঃস্তন আদালতের বিচারকের পদোন্নতি, বদলি ও শৃঙ্খলা বিধানের দায়িত্ব ন্যস্ত করা হবে এবং একটি স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস গঠনের জন্য আইন প্রণয়ন এবং তা কার্যকর করা হবে।

ইতোমধ্যে গত ১১ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে পৃথক সচিবালয় ভবনের উদ্বোধন করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ কমিশন গঠন, ইনফরমেশন ডেস্ক স্থাপন, নারী ও শিশুদের জন্য আদালতে স্বতন্ত্র স্থান নির্ধারণ, আইনজীবীর বিরুদ্ধে করা মামলায় অন্য পক্ষে অন্য আইনজীবী নিয়োগে প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি, আইনগত সহায়তা কার্যক্রমের সঙ্গে মধ্যস্থতা কার্যক্রমকে সংযুক্তকরণ, দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইন সংশোধন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করা হয়েছে।

প্রশাসনিক সংস্কার

বিএনপির ৩১ দফার ১০ নম্বর দফায় বলা হয়, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ পরিষেবা, জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন গড়ে তোলার লক্ষ্যে যোগ্য, অভিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি ‘প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন’ গঠন করে প্রশাসন সংস্কার ও পুনঃগঠন করা হবে। মেধা, সততা, সৃজনশীলতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ বেসামরিক ও সামরিক প্রশাসনে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে যোগ্যতার একমাত্র মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন পুরোনো চার বিভাগের সীমানাকে চারটি প্রদেশে বিভক্ত করা, বিদ্যমান ৪৩টি মন্ত্রণালয় ও ৬১টি বিভাগকে ২৫টি মন্ত্রণালয় ও ৪০টি বিভাগে পুনর্বিন্যাসে বিভক্ত করা এবং পদন্নোতিতে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিলের সুপারিশ করেছে।

জুলাই জাতীয় সনদে বলা হয়, তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ এর সংশোধন, অফিসিয়াল সিক্রেট এ্যাক্ট-১৯২৩ এর সংশোধন, গণহত্যা ও ভোট জালিয়াতির সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন কমিশন এবং স্বাধীন ও স্থায়ী জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করা হবে।

গণমাধ্যম সংস্কার

বিএনপির ১১ নম্বর দফায় বলা হয়, গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতার নিশ্চয়তা বিধান ও সার্বিক সংস্কারের লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি, মিডিয়া সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী এবং বিজ্ঞ, অভিজ্ঞ ও গ্রহণযোগ্য মিডিয়া ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি ‘মিডিয়া কমিশন’ গঠন করা হবে। সৎ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এ লক্ষ্যে সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ এর প্রয়োজনীয় সংশোধনসহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সকল কালাকানুন বাতিল করা হবে।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রেস কাউন্সিলকে বিলুপ্ত করাসহ স্বাধীন জাতীয় গণমাধ্যম কমিশন গঠন করে সেখানে রেডিও, টেলিভিশনকে যুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। স্বাধীন এবং শক্তিশালী গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা করতে সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। মর্যাদা পূর্ণ বেতন কাঠামোর জন্য বিসিএস ক্যাডারদের যে নবম গ্রেডের বেতন, সেটি সাংবাদিকদের শুরুর বেতন হতে হবে।

    জুলাই জাতীয় সনদে তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ এর সংশোধন করার কথা বলা হয়েছে।

    দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ ও ন্যায়পাল নিয়োগ

    বিএনপির ১২ দফায় বলা হয়,দুর্নীতির ক্ষেত্রে কোনো আপস করা হবে না। গত দেড় দশকব্যাপী সংঘটিত অর্থপাচার ও দুর্নীতির অনুসন্ধান করে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করা এবং শ্বেতপত্রে চিহ্নিত দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দেশের বাইরে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দুর্নীতি দমন কমিশন ও দুর্নীতি দমন আইন সংস্কারের পাশাপাশি পদ্ধতিগত সংস্কারের মাধ্যমে দুদকের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। সংবিধান অনুযায়ী ‘ন্যায়পাল’ নিয়োগ করা হবে।

    দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) শক্তিশালী করতে বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানসহ ৪৭ দফা সুপারিশ করেছে দুদক সংস্কার কমিশন। এতে রাজনীতি ও আমলানির্ভরতা কমানো, কমিশনের সদস্য তিনজন থেকে (একজন নারী কমিশনারসহ) বাড়িয়ে পাঁচজন, নিজস্ব প্রসিকিউশন ইউনিট গঠন, দুদকের কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়। দুদক কমিশনারদের মেয়াদ হবে চার বছর।

    জুলাই সনদে বৈধ উৎসবিহীন আয়কে বৈধতা দানের চর্চা বন্ধ করা, রাষ্ট্রীয় ও আইনি ক্ষমতায় অপব্যবহার রোধে স্বার্থে দ্বন্দ্ব নিরসন ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন, দুর্নীতি ও অর্থ পাচার রোধে সুবিধাবাদী মালিকানা সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন, জনপ্রতিনিধিদের সম্পদ ও আয়-ব্যয়ের তথ্য প্রকাশ এবং দুর্নীতি দমন কমিশন আইন কমিশন-২০০৪ এর সংশোধনের কথা বলা হয়।

    শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি দুর্নীতি, অনিয়ম, লুটপাটসহ অর্থনীতির নানা বিষয়ে তাদের প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে ৪০০ পৃষ্ঠার শ্বেতপত্র তৈরি করেছে।

    ২ ডিসেম্বর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে এক অনুষ্ঠানে এই শ্বেতপত্র প্রকাশ করেন কমিটির প্রধান অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেড় দশকে দেশ থেকে প্রায় ২৮ লাখ কোটি টাকা বা ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। এ সময়ে প্রতিবছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে।

    সংবিধানের ন্যায়পাল নিয়োগ কার্যকরের সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশন। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও আইনি সংস্কার অংশে দ্বিতীয় সুপারিশে সংবিধানের ন্যায়পাল নিয়োগ কার্যকরের সুপারিশ করা হয়।

    ২৫ অগাস্ট সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদে প্রতিশ্রুত ন্যায়পাল নিয়োগে অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা হবে।

    জুলাই সনদে বলা হয়েছে, সংবিধানের বর্তমান অনুচ্ছেদ ৭৭ সংশোধনপূর্বক ৭৭ (১) এ সংযুক্ত করা হবে যে, ‘এ সংবিধানের অধীনে দেশে একজন ন্যায়পাল থাকবেন’।

    গুম,খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধ

    বিএনপির ১৩ নম্বর দফায় বলা হয়, সর্বস্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে। মানবিক মূল্যবোধ ও মানুষের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং অমানবিক নিষ্ঠুর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অবসান ঘটানো হবে। মানবাধিকার বাস্তবায়ন করা হবে। সুনির্দিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে মানবাধিকার কমিশনে নিয়োগ প্রদান করা হবে। গত দেড় দশক যাবত সংগঠিত সকল বিচারবহির্ভূত হত্যা,ক্রসফায়ারের নামে নির্বিচারে হত্যা, গুম, খুন, অপহরণ,ধর্ষণ, নির্মম শারীরিক নির্যাতন এবং নিষ্ঠুর ও অমানবিক অপরাধের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সকল ব্যক্তিকে প্রচলিত আইন অনুযায়ী সুবিচার নিশ্চিত করা হবে।

    অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত গুম কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার শাসনামলে সরকারের মদদে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য কর্তৃক বলপূর্বক গুম, নির্যাতনসহ নানা অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। বস্তুত বিরোধী মত দমনে হেন কাজ নেই, যা করেনি বিগত সরকার। এসব অপরাধের নির্দেশদাতা ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    জাতীয় জুলাই সনদে বলা হয়েছে,সংবিধানে এরূপ যুক্ত করা হবে যে, বাংলাদেশ একটি বহু- জাতি- গুষ্টি, বহু- ধর্মী, বহু-ভাষী ও বহু সংস্কৃতির দেশ যেখানে সকল সম্প্রদায়ের সহাবস্থান ও যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করা হবে। নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ,সেগুলোর সুরক্ষা ও বাস্তবায়নে সাংবিধানিক ও আইনি ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।

    নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত বিস্তারিত প্রস্তাবগুলো জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্টে উল্লেখ করা হবে, যাতে রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করেন এবং ভবিষ্যতে জনপ্রতিনিধিরা সাংবিধানিক ব্যবস্থা ও আইনি বিধিমালা পরিবর্তন করতে পারেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানকালে গণহত্যা ও নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত এবং ভোট জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের চিহ্নিতকরণ এবং তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করা হবে।

    অর্থনৈতিক সংস্কার

    বিএনপির ১৪ নম্বর দফায় বলা হয়, অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করিবার লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদ ও গবেষক, অভিজ্ঞ ব্যাংকার, কর্পোরেট নেতা, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি সমন্বয়ে একটি ‘অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন’ গঠন করা হবে। মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের নিরিখে প্রবৃদ্ধির সুফল সুষম বণ্টনের মাধ্যমে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দুর করা হবে।

    এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সংস্কার কমিশন এবং টাস্কফোর্স আর্থিক খাতের সংকট থেকে উত্তরণের বিভিন্ন সুপারিশ করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য একক ঋণগ্রহীতার এক্সপোজার সীমা কঠোরভাবে প্রয়োগ, প্রকৃত ঝুঁকি বিবেচনায় ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোরভাবে নিশ্চিতকরণ, বেসেল-৩ এর বিধিবিধান প্রতিপালনে অক্ষম সমস্যা জর্জরিত ব্যাংকগুলোর অবস্থা উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া, বাণিজ্যিক ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও কমপ্লায়েন্স ডিপার্টমেন্ট শক্তিশালীকরণ ও কার্যকর অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা নিশ্চিত, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে আরও শক্তিশালীকরণ, আমানতদারীদের অর্থে সুরক্ষা নিশ্চিত, ব্যাংক কোম্পানি আইনগুলো আর্থিক খাত সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার।

    বন্ধ শিল্পকারখানা পুনরায় চালু

    বিএনপির ১৬ দফায় বলা হয়েছে, পাটকল, বস্ত্রকল, চিনিকলসহ বন্ধ শিল্পকারখানা পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেয়া হবে। এ বিষয়ে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের সময় একে একে দেশের বহু কলকারখানা, বিশেষ করে চিনিকল বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান সরকার সেসব মিল পুনরায় চালুর উদ্যোগ নিয়েছে এবং ইতোমধ্যে কয়েকটি চিনিকল আবার চালু হয়েছে।

    প্রবাসীদের ভোটাধিকার

    বিএনপির ১৬ নম্বর দফার একাংশে অংশে বলা হয়েছে,প্রবাসী শ্রমিকদের জীবন, মর্যাদা ও কর্মের নিরাপত্তা এবং দেশে বিমানবন্দরসহ সকল ক্ষেত্রে হয়রানিমুক্ত সেবা প্রাপ্তি ও ভোটাধিকার নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা হবে।

    নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়েছে। যা ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে ভোট দিতে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৩শ ১৫ জন ভোটার নিবন্ধন করেছেন।

    বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দায়মুক্তি আইন বাতিল

    বিএনপির ১৭ নম্বর দফায় বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ খাতে দায়মুক্তি আইনসহ সকল কালাকানুন বাতিল করা হবে এবং রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতে রক্তক্ষরণ রোধ করার লক্ষ্যে জনস্বার্থবিরোধী কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ কেনায় চলমান সীমাহীন দুর্নীতি বন্ধ করা হবে। আমদানিনির্ভরতা বাদ দিয়ে নবায়নযোগ্য ও মিশ্র এনার্জি-নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং উপেক্ষিত গ্যাস ও খনিজ সম্পদ আবিষ্কার ও আহরণে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এই বাতিল করা হয়েছে। সংসদ কার্যকর না থাকায় রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে আইনটি বাতিল করার হয়েছে।

    স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালীকরণ

    বিএনপির ২০ নম্বর দফায় বলা হয়েছে, ক্ষমতার ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিকতর স্বাধীন, শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান করা হবে। এই সব প্রতিষ্ঠানকে এমনভাবে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে যেন তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন পরিষেবা প্রদান ও উন্নয়ন কার্যক্রমে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। স্থানীয় প্রশাসন ও অন্য কোনো জনপ্রতিনিধির খবরদারী মুক্ত স্বাধীন স্থানীয় সরকার নিশ্চিত করা হইবে।

    অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন জেলা পরিষদ ব্যবস্থা বাতিলের সুপারিশ করেছে। এছাড়া কমিশনের প্রতিবেদনে পৌরসভা সম্পর্কে বলা হয়, গুরুত্ব বিবেচনায় স্থানীয় সরকার হিসেবে এটিকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। একই সঙ্গে স্থানীয় সরকার হিসেবে উপজেলা পরিষদকে আরো শক্তিশালী করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। তবে উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান পদটি বাতিল করা যেতে পারে বলে মনে করছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন।

    এছাড়া উপজেলা পরিষদকে আরো জনপ্রতিনিধিত্বশীল করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের এক-তৃতীয়াংশকে আবর্তন পদ্ধতিতে পরিষদের সদস্য হওয়ার বিধান করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করা হয়েছে।

    জুলাই জাতীয় সনদে বলা হয়েছে, সংবিধানে এরূপ যুক্ত করা হবে যে, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ব্যবস্থাপনা, সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের অধীনে ন্যস্ত করা এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল সংগ্রহ করা হবে।

    যুব উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন

    বিএনপির ৩১ দফার ২২ নম্বর দফায় বলা হয়েছে, যুবসমাজের ভিশন, চিন্তা ও আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে আধুনিক ও যুগোপযোগী যুব-উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। এক বছরব্যাপী অথবা কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত, যেটাই আগে হবে, শিক্ষিত বেকারদের বেকার ভাতা প্রদান করা হবে। বেকারত্ব দূরীকরণের লক্ষ্যে নানামুখী বাস্তবসম্মত কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। যুব সমাজের দক্ষতা বৃদ্ধি করে ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ আদায়ের লক্ষ্যে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

    স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পুষ্টির ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়া মানবসম্পন্ন উন্নয়নে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করা হবে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি বিবেচনা করা হবে। বেকার যুবকদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে ‘জাতীয় যুব উদ্যোক্তা উন্নয়ন নীতিমালা ২০২৫’ এ অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।

    জাতীয় উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত

    বিএনপির ২৩ নম্বর দফায় বলা হয়েছে, জাতীয় উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নারীর কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নারীর ক্ষমতায়নে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। নারী ও শিশুদের জীবনমান বিকাশের নিমিত্তে যুপোপযোগী উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে। জাতীয় সংসদে মনোনয়নের ক্ষেত্রে নীতিগতভাবে নারীদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

    জুলাই জাতীয় সনদে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ক্রমান্বয়ে ১০০ আসনে উন্নীত করা হবে। বিদ্যমান সংরক্ষিত ৫০ টি আসন বহাল রেখে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৫(৩) এ প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে।

    দেশের সমুদ্রবন্দর ও নৌবন্দর আধুনিকায়ন

    বিএনপির ২৮ নম্বর দফায় বলা হয়েছে, দেশের সমুদ্র বন্দর ও নৌবন্দর সমূহের আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হবে।

    অন্তর্বর্তী সরকার দেশের সমুদ্র বন্দর ও নৌবন্দর সমূহের আধুনিকায়নে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। গত ১৬ নভেম্বর সরকারি এক চুক্তি অনুযায়ী, চট্টগ্রামের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনালে ডেনমার্কভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস এবং পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনালে কাজ করবে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মেডলগ।

    চুক্তি অনুসারে, লালদিয়া টার্মিনালে ত্রিশ বছর এবং পানগাঁওয়ে বাইশ বছর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে এই প্রতিষ্ঠানগুলো। জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করেই বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ চুক্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

    এছাড়াও,মোংলা সমুদ্র বন্দরের উন্নয়ন,আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের লক্ষে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বর্তমান সরকার। বন্দরকে আধুনিক ও বিশ্বমানের নৌ-যোগাযোগ কেন্দ্রে রূপান্তিত করতে ৯টি বড় মেঘা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ৪টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে, এরই মধ্যে নতুন করে ২টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আরো ৩টি প্রকল্প একনেকে অনুমোদনে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে মোংলা বন্দরের বহুমুখী টেকসই উন্নয়ন এবং তা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করবে। বাসস

    ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
    এ জি