ক্রমেই পাল্টে যাচ্ছে বিএনপির রাজনীতির কৌশল। কয়েক মাস আগেও যেখানে বিদেশিদের ওপর নির্ভরশীলতার নীতিতে বিশ্বাসী ছিল বিএনপি সেখানে আজ অনেকটাই দূরে সরে এসেছে। ক্রমেই দেশের জনগণের ওপর নির্ভরতা বাড়াচ্ছে। এমনটিই লক্ষ্য করা যাচ্ছে বিএনপির সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে।
সংশিষ্ট সূত্র মতে, বছর খানেক আগেও বিএনপির ধারণা ছিল- বর্তমান ক্ষমতাসীনদের অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডে ভারতসহ বিশ্বের পরাশক্তিধররাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশের বিষয়ে তাদের নীতি পাল্টাবে। কিন্তু তাদের সে ধারণার প্রতিফলন ঘটেনি। ফলে বিএনপি তাদের রাজনীতিতে হঠাৎ বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে।এরই অংশ হিসেবে তারা জনগণকে সঙ্গে পথচলার কথা ভাবছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, জনগণই মূল ক্ষমতার উৎস, এটা ভুলে গেলে চলবে না। কোনো কিছু করতে হলে জনগণকেই সঙ্গে নিয়ে করতে হবে।
বিএনপির বিদেশনীতিতে কী বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন এনেছে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সবার সঙ্গে সহাবস্থান ও সৌহার্দ্যপূর্ণ অবস্থানে বিএনপি সর্বদা বিশ্বাসী। ফলে সে অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি এবং কখনো হবে না। তবে যারা আগ্রাসন বিস্তার করতে চায় তাদের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান আরো সুদৃঢ় মনোভাব। কোনো মতেই এদেশে কারো আগ্রাসন চালাতে দিবে বিএনপি।
মাহবুবুর রহমানের এই বক্তব্যে প্রতিফলন লক্ষ্য করা যাচ্ছে বিএনপির অন্য শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যেও। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বুধবার সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত সম্পর্কে কথা বলেছেন, বিশেষ করে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভারতের তত্কালীন সরকার (কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার) ‘ন্যক্কারজনকভাবে হস্তক্ষেপ’ করেছিল বলে খালেদা জিয়া সরাসরি অভিযোগ করেছেন।
খালেদা জিয়া জরুরি সংবাদ সম্মেলনটি ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি এবং সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য। তবে সংবাদ সম্মেলনে রাখা বিএনপি চেয়ারপারসনের লিখিত বক্তব্যের বেশিরভাগ জুড়েই ছিল ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এবং বর্তমানেও ভারত সরকারের ভূমিকা কেন্দ্রিক।
লিখিত বক্তব্যে খালেদা জিয়া বলেছেন ‘২০১৪ সালে কলঙ্কিত ও প্রহসনের নির্বাচনের প্রাক্কালে ভারতের তদানীন্তন সরকার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে খুবই ন্যক্কারজনকভাবে হস্তক্ষেপ করেছিল। ভারতের তদানীন্তন পররাষ্ট্র সচিব (সুজাতা সিং) বাংলাদেশ সফরে এসে ক্ষমতাসীনদের প্রহসনের নির্বাচনের নীল-নকশা বাস্তবায়নে প্রকাশ্যে ভূমিকা পালন করেছিলেন। সে কারণে বাংলাদেশের অধিকাংশ নাগরিক মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন, নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে ভারতের বিগত সরকারই আওয়ামী বলয়ের শাসন ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করার ক্ষেত্রে সরাসরি সহায়তা করেছে এবং তাদের প্রত্যক্ষ সমর্থনেই এদেশের জনবিচ্ছিন্ন সরকার ক্ষমতায় টিকে রয়েছে। ফলে ভারতের অবস্থান এখনো বদলায়নি।
এদিকে বিবেচনায় বিএনপি ভারতনীতিতে তাদের অবস্থান অনেকটাই বদলে দিচ্ছেন। নব্বইয়ের দশকে বিএনপি ভারতবিরোধী ভূমিকা নিয়ে যে ধরনের লাভবান হয়েছিল তারা সেটা এখন অনেকটাই পুনর্মূল্যায়ন করছেন।কারণ এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী ভারতের আগ্রাসন সম্পর্কে সচেতন, আগে থেকেই তারা ভারতবিরোধী মনোভাব পোষণ করে আসছে বলে ধরে নেয়া হয়। ফলে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর এ মনোভাবকে কাজে লাগাতে বিএনপি ফের তাদের আগের অবস্থানেই ফিরছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা বাণীতেও বেগম খালেদা জিয়ার তেমন মনোভাবই লক্ষ্য করা গেছে।
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময়০২:০০ পি.এম, ১৪ এপ্রিল ২০১৭,শুক্রবার
ইব্রাহীম জুয়েল