রাজনীতি

বিএনপির বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্র!

বিএনপির বিরুদ্ধে সরকার, তাদের দলের কিছু নেতা ও একটি গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র করেছে বলে মনে করছে বিএনপি। এই জন্য সাম্প্রতিককালে বিএনপির নেতাদের নাম জড়িয়ে দেশে সরকার উৎখাতের সঙ্গে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মনে করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

এ সংক্রান্ত খবরও সরকারের এক মন্ত্রীর মাধ্যমে গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। বিষয়টি গোয়েন্দা যেমন খতিয়ে দেখছে তেমনি বিএনপিও বিষয়টি মোকাবেলা করছে।

বিএনপির সূত্র জানায়, তাদের আশঙ্কা সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করার ও বিদেশি গোয়েন্দাদের সঙ্গে বৈঠক করার অভিযোগে কোন না কোন লিঙ্ক করে বিএনপির একাধিক নেতাকে গ্রেফতার করা হতে পারে।

এর মধ্যে লন্ডনের সূত্র হিসাবে তারেক রহমানের দিকেও ইঙ্গিত করা হয়ে থাকতে পারে। সেই হিসাবে তাকেও টেনে আনা হতে পারে। অন্যদিকে গোয়েন্দারাও মূল্যায়ন করছে যে বিএনপি ক্ষমতার বাইরে গিয়ে এখন সরকার উৎখাতের মতো যে কোন পরিকল্পনা করতে পারে। যে কারো সহায়তা নিতে পারে। সরকারের এই ধরনের আশঙ্কা ও বিএনপি এই ষড়যন্ত্র করছে বলে মেনে নিতে পারছে না বলে দাবি করেছেন বিএনপির একাধিক নেতা।

তারা মনে করছেন, সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য বিএনপিকে নানা ভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। জনগণের মধ্যে বিএনপির প্রতি যাতে কোন সফট কর্নার তৈরি না হয় সেই জন্য সরকারের তরফ থেকে একাধিক ব্যক্তি চেষ্টা করছেন।

যাতে করে বিএনপির বিভিন্ন ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দেয় ও তারা বিতর্কিত হয়। এটা সরকারের পরিকল্পনারই অংশ। এই কারণে বিএনপি বিষয়টি কৌশলেই মোকাবেলা করতে চাইছে। এরই অংশ হিসাবে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি এর প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে বিএনপির এক নেতার কথিত বৈঠক নিয়ে প্রকাশিত খবরের ব্যাপারে অবস্থান পরিষ্কার করা হয়েছে। ইসরায়েলের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর ভারতে গিয়েছিলেন ব্যক্তিগত সফরে। মোসাদের সঙ্গে বিএনপিকে জড়িয়ে পত্রপত্রিকায় যে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে এর কোনো ভিত্তি নেই। ফিলিস্তিনে যেভাবে হামলা হচ্ছে, বিএনপি তা কখনো সমর্থন করে না। বিএনপি সব সময় ফিলিস্তিনের পাশে ছিলো। বর্তমানেও আছে এবং আগামীতে থাকবে।

সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে ইসরাইলের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসির প্রধান মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক নিয়ে ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম অনলাইন ডটকম’-এ প্রকাশিত হয় ৯ মে ।

এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমেও মেন্দির সঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর কথিত বৈঠক নিয়ে বেশ কিছু ছবি ও সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে বিএনপি বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করছে বলে সরকারের কাছে খবর আছে।

সরকারের এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে বিএনপি। মির্জা ফখরুল বলেন, কয়েকটি পত্রিকায় খবর এসেছে বিএনপির সঙ্গে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সম্পর্ক আছে। এটা সঠিক নয়। বিএনপির সঙ্গে ইসরায়েলের কোনো সম্পর্ক নেই। প্যালেস্টাইনের অধিকার ও সার্বভৌমত্বের প্রতি পূর্ণ সমর্থন রয়েছে বিএনপির। এর পক্ষে আমরা বরাবরই কথা বলে এসেছি। বিএনপি প্যালেস্টাইনের জনগণের পাশে আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে।

এদিকে বিএনপি সাম্প্িরতক সময়ে জামায়াতের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর রায় কার্যকরের পরে বিএনপির ভূমিকা নিয়েও সরকারের তরফ থেকে সমালোচনা করা হচ্ছে। ওই সমালোচনা মানতে রাজি নয় বিএনপি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি সব সময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে। তবে বিচার হতে হবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ব্যতীত স্বচ্ছ ও ন্যায়নিষ্ঠ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও কয়েকজন মন্ত্রী বিশেষ করে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত মন্তব্য করে চলেছেন এবং একজন ফাঁসি চেয়েছেন। এ ধরনের মন্তব্য তাদের দায়িত্বহীনতার পরিচয় বহন করে।

তার দাবি, এটি দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রীর বিরুদ্ধে এবং ভিন্নমতের সবরাজনৈতিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র। তাকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে একদলীয় শাসনব্যবস্থা চিরস্থায়ী করার নীলনকশা মাত্র। সরকার, প্রধানমন্ত্রী ও সরকারি দলের নেতারা এ ধরনের দায়িত্বহীন মন্তব্য ও আচরণ থেকে বিরত থাকার কথাও বলেছেন।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির বলেন, আমাদের দলের বিরুদ্ধে ও নেতা নেত্রীদের বিরুদ্ধে ইচ্ছে করেই কিছু কিছু রিউমার ছড়ানো হচ্ছে। এটা সরকার করছে অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে। এই সময়টাও তাদের রিউমার ছড়ানোর জন্য যথাযথ সময় মনে করছে তারা।

এছাড়াও নির্বাচন নিয়ে ও দলের পদ বাণিজ্য নিয়েও কথা উঠেছে। কিন্তু এগুলো ঠিক নয়। বিএনপি এখন এমন অবস্থায় আছে সেখানে কোন নেতা এই ধরনের কাজ করতে যাবে আসলে নেতাদের বিতর্কিত করার জন্যই এমন করা হচ্ছে।

মির্জা ফখরুল ইসলামও বলেছেন, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনোনয়ন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন এবং সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে নেতিবাচক সুপরিকল্পিতভাবে খবর প্রকাশ করা হচ্ছে। বিএনপি এই ধরনের সংকট ও অবস্থা কাটানোর জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিচেছ। সরকারের পাল্টা কৌশল হিসাবে তারাও কৌশল নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করছে।

ফখরুল মনে করেন, সরকার যত কিছুই করুক না কেন কোন লাভ হবে না। এখন প্রয়োজন দেশে সংকট কাটানো। আর এই সংকট কাটিয়ে উঠার জন্য স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করতে দ্রুত নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হবে। এই ধরনের জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোনো বিকল্প নেই। করতেই হবে। কেবল সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত জনগণের সরকার এ সংকটের অবসান ঘটাতে হবে।

বিএনপি কৌশল হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিষয়টিও কাজে লাগাতে চাইছে, এই জন্য ফখরুল ইসলাম বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে পেশকৃত অভিযোগপত্রে শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানের নাম নেই। তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দেশে তাদের এ অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তিনি দাবি করেছেন, অভিযোগপত্রে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ব্যাংকে রক্ষিত ৩০০ মিলিয়ন ডলারের যে উল্লেখ রয়েছে সে সম্পর্কে সরকার নীরব। এ পরিমাণ রক্ষিত অর্থ সম্পর্কে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত বিষয় জাতির সামনে প্রকাশ করার জন্যও সরকারের উপর চাপ তৈরি করার চেষ্টা করছে।

বিএনপির সূত্র জানায়, তারা নিজেরাই একসময়ে ওই সব নথিপত্র প্রকাশ করার পরিকল্পনা করছে। এই জন্য তারা সব তথ্য ও নথিও সংগ্রহ করেছে। এখন সময়ের অপেক্ষা করছে। (আমাদের সময়)

নিউজ ডেস্ক : আপডেট বাংলাদেশ সময় ১:২৫ পিএম, ১৪ মে ২০১৬, শনিবার
ডিএইচ

Share