বিশেষ সংবাদ

কেন্দ্র ও জেলা দুই পদেই থাকতে চান বিএনপির নেতারা!

দলে এক নেতার এক পদ রেখে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র সংশোধন করা হয়। প্রায় সাত মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও বিএনপির একাধিক পদধারী নেতারা জেলার নেতৃত্ব ছাড়তে নারাজ।

গত সপ্তাহে এসব নেতাদের এক পদ রেখে বাকি পদ ছাড়তে চিঠি দেওয়া হলেও এখনও তেমন সাড়া মেলেনি। তারা যে ভাবেই হোক বিভিন্ন কৌশলে একাধিক পদে থাকতে চান।

কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে একাধিক পদে রয়েছেন অন্তত ৬১ জন নেতা। এর মধ্যে ১০ জন তৃণমূলের নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। সব নেতাকেই ত্বরিত সিদ্ধান্ত নিতে কেন্দ্র থেকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও ফোনে কথা বলেছেন। চিঠিও পাঠানো হয়েছে। সবাইকে ফোনেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। বড় একটি অংশ এখনো দুই পদেই বহাল রয়েছেন। তবে আগামী ১৬ অক্টোবরের মধ্যে নেতারা একাধিক পদ না ছাড়লে বেগম খালেদা জিয়াই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।

বিএনপির সদ্যঘোষিত কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদ পেয়েছেন আফরোজা খান রিতা। তিনি মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতিও। দলে এক নেতার এক পদে থাকার বাধ্যবাধকতা থাকায় তিনি স্বেচ্ছায় কেন্দ্রের পদ ছেড়ে দিয়েছেন।

জেলার সভাপতি পদেই থাকতে চান রিতা। এ নিয়ে নিজের একটি চিঠি কেন্দ্রে পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিব্রত বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। একই অবস্থা নারায়ণগঞ্জের অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খোন্দকারের। তিনিও উপদেষ্টা পদ ছেড়ে জেলার নেতৃত্বে থাকতে চান। শুধু রিতা-তৈমুরই নন, তাদের মতো আরও অন্তত ১৪ নেতা কেন্দ্রীয় পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। জেলা পদে থাকতেই আগ্রহী তারা। অনেকেই আবার কেন্দ্র ও জেলা দুই পদেই থাকতে চান। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।

জেলার পদ ছেড়েছেন:

গঠনতন্ত্র সংশোধনের পর পদ ছেড়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, আহমেদ আজম খান, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলম প্রমুখ।

কেন্দ্রীয় পদ ছেড়েছেন:

বিএনপি নেতা আফরোজা খান রিতা, মেহেদী আহমেদ রুমী, আশরাফ উদ্দিন নিজান, মোজাহার আলী প্রধান, তৈমুর আলম খোন্দকার, ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, শিরিন সুলতানা, আসিফা আশরাফী পাপিয়া, শাহাবুদ্দিন সাবু, অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া, মাহমুদ হাসান বাবু, লায়ন হারুন অর রশীদ, মাইনুল ইসলাম শান্ত, মোজাফফর হোসেন প্রমুখ।

একাধিক পদ ছাড়েননি:

এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মিজানুর রহমান মিনু, অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, মসিউর রহমান, আসাদুল হাবিব দুলু, অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, লায়ন আসলাম চৌধুরী, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, শাহজাদা মিয়া, ফরিদ উদ্দিন মানিক, আ ক ন কুদ্দুসুর রহমান, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, ওয়ারেস আলী মামুন, মীর সরাফত আলী সপু, হাজী আমিনুল ইসলাম, কামরুল মনির, শামসুজ্জামান, শফিকুল হক মিলন প্রমুখ।

বরিশাল মহানগরের সভাপতির দায়িত্বে থাকা বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘বিএনপি যেভাবে চাইবে, সেভাবেই হবে। তবে হঠাৎ করেই জেলার নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না। নানা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। কাউন্সিল করে কমিটি করেই জেলার নেতৃত্ব ছাড়তে হবে। বিষয়টি আমি চেয়ারপারসনকে জানিয়েছি। তিনিও দ্রুত কাউন্সিল করার কথা বলেছেন।

নরসিংদী জেলার সভাপতির দায়িত্বে থেকে কেন্দ্রীয় আরেক যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বলেন, ‘দলের হাইকমান্ড যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা-ই হবে। তবে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের দাবি হচ্ছে, আমি কাউন্সিল করে দায়িত্ব ছাড়ি। এখন দল যদি মনে করে, কাউন্সিল করে ছাড়ব, তাও হবে। আর যদি মনে করে, কাউন্সিল ছাড়াই ছাড়তে হবে, তাও করবো।

জানা যায়, কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেক নেতাই জেলার নেতৃত্বে থাকতে চান। এ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ দৃষ্টিও চান তারা। তৃণমূল নেতৃত্ব হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার শঙ্কা থেকেই ১৬ নেতা কেন্দ্রীয় পদ ছেড়েই দিয়েছেন। তবে কেন্দ্রের পদ ছাড়লেও সবাই জেলায় থাকতে পারবেন না। এ ব্যাপারে বেগম জিয়ার দিকনির্দেশনা আসছে। বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে তৃণমূলের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করতেই দীর্ঘদিন ধরে নিয়ন্ত্রণে থাকা নিষ্কিয় নেতাদের কেন্দ্রে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়ে আসার পরিকল্পনা বিএনপি-প্রধানের। আবার কেউ কেউ নিজের পছন্দের নেতাকে জেলার নেতৃত্বে রেখে কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করার তৎপরতা চালাচ্ছেন। কোনোভাবেই জেলার সমর্থন হাতছাড়া করতে চান না তারা।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও তৃণমূল বিএনপি পুনর্গঠনের সমন্বয়ক মো. শাহজাহান বলেন, ‘বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নেতাদের আর একাধিক পদে থাকার সুযোগ নেই। কমিটিতে অনেক ত্যাগী নেতাকে জায়গা করে দিতেই এ বিধান চালু করা হয়েছে। তৃণমূলে অনেক যোগ্য নেতা রয়েছেন। তাদেরও জায়গা দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, অনেক নেতাকে কেন্দ্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা জরুরি। সবকিছু বিবেচনায় এক নেতার এক পদে থাকার বিধান চালু করা হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই কেন্দ্রীয় দায়িত্ব পাওয়া নেতারা জেলায় অন্যকে জায়গা করে দেবেন। তবে তারা সিদ্ধান্ত না নিলে হাইকমান্ড তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে।

নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৪:১০ পি,এম ১১ অক্টোবর ২০১৬,মঙ্গলবার
ইব্রাহীম জুয়েল

Share