বিএনপির নতুন কমিটিতে থাকছেন যারা
সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে চূড়ান্তের পথে বিএনপির নির্বাহী ও স্থায়ী কমিটি। চলছে শেষ মুহূর্তের যাচাই-বাছাইয়ের কাজ। সব ঠিক থাকলে অল্প সময়ের মধ্যেই কমিটি ঘোষণা হতে পারে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটিতে নতুন মুখ আসছে পাঁচজন। ব্যাপক পরিবর্তন আসছে কেন্দ্রীয় দফতরেও। বিগত সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখায় গুরুত্বপূর্ণ সম্পাদকীয় পদেও নতুন মুখ আসতে পারে। পাশাপাশি সম্পাদক, সহসম্পাদক ও নির্বাহী কমিটির সদস্যপদে জায়গা পাচ্ছেন অন্তত চল্লিশজন ছাত্রদলের সাবেক নেতা। স্থায়ী কমিটি ও নির্বাহী কমিটির বাদ পড়া সিনিয়র নেতাদের জায়গা হচ্ছে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদে। এ ছাড়া তিন দফায় ঘোষিত নির্বাহী কমিটির ৪১ পদের কয়েকটিতে পরিবর্তন আসছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, কমিটি গঠন একটি সাধারণ কাজ নয়। শুধু বললেই কমিটি হয়ে যায় না। এ জন্য অনেকের পরামর্শ নিতে হয়। নানা বিষয় চিন্তা করতে হয়। এই বিশাল কর্মযজ্ঞ শেষ করতে গিয়ে একটু সময় লাগছে। আর চার মাস তো এত বেশি সময়ও নয়। তিনি বলেন, চেয়ারপারসন কমিটি গঠনের কাজ প্রায় শেষ করে এনেছেন। দ্রুত সময়েই তিনি তা ঘোষণা করতে পারেন। যোগ্য, ত্যাগী এবং আন্দোলনে যারা রাজপথে ছিলেন তারাই নতুন কমিটিতে জায়গা পাবেন। সূত্র জানায়, ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হতে দলের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা জোর তদবির চালাচ্ছেন। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্য খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন, ড. আর গনি ও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী মারা যাওয়ায় তিনটি পদ শূন্য হয়। এম শামসুল ইসলাম, বেগম সরোয়ারী রহমান দীর্ঘদিন অসুস্থ। এ কারণে এই দু’জন বাদ পড়ছেন। সব মিলিয়ে স্থায়ী কমিটিতে নতুন মুখ আসছে পাঁচজন। এদের মধ্যে নতুন মুখ হিসেবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আগেই চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাকি চারটি পদের বিপরীতে প্রায় এক ডজন নেতা দৌড়ঝাঁপ করছেন। চার পদের বিপরীতে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা ও সাবেক যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিনের নাম প্রায় চূড়ান্ত। তবে স্থায়ী কমিটিতে জায়গা পেতে শেষ মুহূর্তে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ও সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান। দলের একটি সূত্র জানায়, খোকার জায়গায় নোমানকে স্থায়ী কমিটিতে জায়গা দিতে দলের শক্তিশালী একটি গ্রুপ লবিং করে যাচ্ছে। যুক্তি হিসেবে তারা দেখাচ্ছে, খোকা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন। সুস্থ হওয়ার পরও তার দেশে ফেরা অনিশ্চিত। ফিরলেও কারাগারে যেতে হতে পারে। তাই নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এমন একটি পদে সক্রিয় কাউকে আনাই ভালো। তবে খোকার পক্ষেও রয়েছে শক্ত লবিং। এদিকে দলের কয়েক নেতা ও বুদ্ধিজীবীরা স্থায়ী কমিটির পদসংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। যাতে যোগ্যরা নীতিনির্ধারণী ফোরামে জায়গা পান। তবে এ ব্যাপারে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। জানা গেছে, দলের গুরুত্বপূর্ণ দফতরেও পরিবর্তন আসছে। দীর্ঘদিন দফতরের দায়িত্ব পালন করে আসছেন রিজভী আহমেদ। বর্তমানে তিনি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব। দফতরে পদবিন্যাসেও কিছুটা পরিবর্তন আসছে। যুগ্ম মহাসচিব পদমর্যাদায় একজনকে দফতর সম্পাদক করা হবে। এ ক্ষেত্রে তালিকার শীর্ষে আছেন শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। তবে বর্তমান আন্তর্জাতিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপনের নামও রয়েছে ওই পদে। এই দু’জনের একজনকে এ পদে আনা হচ্ছে এটা নিশ্চিত। এর বাইরে একজন দফতর ও তিনজন সহদফতর সম্পাদক করা হবে। দফতর সম্পাদক হিসেবে সাবেক ছাত্রনেতা এবিএম মোশাররফ হোসেন ও সহদফতর সম্পাদক পদে তাইফুল ইসলাম টিপু, রিয়াজউদ্দিন নসু, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীমের নাম শীর্ষে রয়েছে। এ ছাড়া হাসান মামুন, বেলাল আহমেদ ও আমিরুজ্জামান খান শিমুলের নামও রয়েছে সম্ভাব্য তালিকায়। সূত্র জানায়, বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ সম্পাদকীয় পদ ছাত্রবিষয়কের দায়িত্ব পাচ্ছেন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল। সহসম্পাদক হচ্ছেন বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ। আইন সম্পাদক হিসেবে অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার আর উপজাতীয় সম্পাদক দীপেন দেওয়ান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে কবি আবদুল হাই শিকদারের নাম শোনা যাচ্ছে। ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের নাম আছে মুক্তিযোদ্ধা সম্পাদক পদে। সূত্র জানায়, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু, মিজানুর রহমান মিনুকে ভাইস চেয়ারম্যান করা হচ্ছে। মোহাম্মাদ শাহজাহান স্থায়ী কমিটি থেকে বাদ পড়লে তার জায়গা হতে পারে ভাইস চেয়ারম্যান পদে। আর রিপন দফতর না পেলে পাবেন ভাইস চেয়ারম্যানের পদ। এ ছাড়া সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকার, জয়নুল আবদিন ফারুক, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবদীন, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, আবদুস সালাম, খালেদা রাব্বানী, ফজলুল হক আছফিয়া ভাইস চেয়ারম্যান হচ্ছেন। বর্তমানে ভাইস চেয়ারম্যানদের অনেকেই থাকবেন একই পদে। স্থায়ী কমিটি থেকে বাদ পড়া এম শামসুল ইসলাম ও বেগম সরোয়ারি রহমানের জায়গা হচ্ছে উপদেষ্টা পরিষদে। এ ছাড়া বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদের অনেকেই একই পদে থাকবেন। তরুণ দু’জন মহিলা নেত্রীকেও উপদেষ্টা পরিষদে দেখা যেতে পারে। নির্বাহী কমিটিতে সহসম্পাদক ও সদস্যপদে নতুন মুখ হিসেবে ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের মধ্যে প্রায় চল্লিশজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। রদবদল : তিন দফায় ঘোষিত ৪১ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাহী কমিটির কয়েকটি পদে রদবদল হচ্ছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক পদের সব কটিতে পরিবর্তন আসছে। বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেনকে চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি করে এ পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে। আবু বক্কর ইতিমধ্যে সহসাংগঠনিক পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসছে। ফজলুল হক মিলনকে এ পদ থেকে সরিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান করা হতে পারে। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আসছেন ঢাকা বিভাগীয় বর্তমান সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ। ফরিদপুর বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম ইতিমধ্যে ইস্তফা দিয়েছেন। ওই পদে যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা খন্দকার মাশুকুর রহমান ও মাহবুবুল হাসান ভুঁইয়া পিংকুর নাম আলোচনায় রয়েছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহ বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেছ আলী মামুনের পরিবর্তে আসছে নতুন মুখ। উৎস : যুগান্তর।
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১২:৩৫ পি,এম ০৩ আগস্ট ২০১৬,বুধবার
কেএমআইজে