বয়স বাড়লে ত্বকে বলিরেখা পড়া, ত্বক ঝুলে পড়া বা চামড়া কুঁচকে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা হয়। তবে এসব এড়িয়েও অনেকে দিব্যি বয়সকে ধীর গতির করে নিজেকে আকর্ষণীয় রাখতে পারেন।
বয়স ধরে রাখা খুব জাদুকরি কিছু নয়। জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন আনলে সহজে বয়স ধরে রাখা যায়। কীভাবে বয়স ধরে রাখবেন?
এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. ফারিয়াল হক। বর্তমানে তিনি বনানি প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট, বনানিতে চর্ম ও যৌন বিভাগে পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : বয়স ধরে রাখার জন্য কী কী প্রক্রিয়া রয়েছে বা বাংলাদেশে আপনারা কী কী কাজ করছেন?
উত্তর : আসলে বয়সকে ধরে রাখা যায় না। এটা সম্ভব নয়। সময়কে তো আমরা বেঁধে রাখতে পারব না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু ক্ষয় হবে। কিন্তু আমরা যেটি করতে পারি প্রক্রিয়াটিকে ধীর করতে পারি। এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের উপাদান রয়েছে। প্রথম হলো, ডায়েট। খাদ্যাভ্যাসে আমরা কিছু পরিবর্তন আনতে পারি, যেগুলো নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করব। এরপর ঘুম ও ব্যায়াম। এরপর রয়েছে কিছু ত্বক পরিচর্যাকারী প্রক্রিয়া। এ সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষের আসলে ধারণা খুব কম।
প্রশ্ন : আপনি প্রথমে বলেছেন খাদ্যাভ্যাসের কথা। কী কী ধরনের খাবার আসলে খেতে হবে?
উত্তর : কিছু খাবার কমিয়ে আনতে হবে। সেগুলো হলো, চিনি ও লবণ। এ দুটোকে অবশ্যই কমিয়ে আনতে হবে। চিনি সাধারণত অনেক দ্রুত গ্লাইকেশনে সাহায্য করে। এতে আমাদের বয়স বাড়ার প্রক্রিয়াটা খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে। লবণটা খুব তাড়াতাড়ি চোখের নিচে পানি জমা, ফোলাভাব ইত্যাদি সমস্যাকে তরান্বিত করে। এ জন্য এ দুটোকে আমাদের কমিয়ে আনতে হবে।
আর খেতে হবে কী কী? সবই খেতে হবে। এর মধ্যে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবারগুলো বেশি খেতে হবে। যেমন শাক-সবজি, আর রঙিন ফলমূল। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। তবে একটি জিনিস আমরা ভুল করি। হঠাৎ করে হয়তো ওজন কমাচ্ছি, ফল খাচ্ছি, পানি খাচ্ছি, সবজি খাচ্ছি। কিন্তু আমরা ডিমকে এড়িয়ে চলি। মাংসটা এড়িয়ে চলি। এটা সবচেয়ে ভুল।
ত্বকের জন্য কোলাজেন তৈরি হওয়া খুব জরুরি। আর কোলাজেনটা তৈরি হয়ই প্যাপটাইস থেকে। প্যাপটাইটস দুধে থাকে, মাংসে থাকে। তাই এগুলো কখনো বাদ দেওয়া যাবে না। আমরা ডায়েট অবশ্যই করব, কিন্তু এর মধ্যে সবকিছু থাকতে হবে। এরপর ব্যায়াম করতে হবে। যেভাবেই হোক, সারা দিনে নিজের জন্য আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা ব্যায়াম খুব জরুরি। আমাদের শরীরে যে অক্সিডেন্ট ঢুকছে, আমরা যে খাচ্ছি, এগুলো বের করে দেওয়ার জন্য অক্সিজেন জরুরি। ঘাম হওয়া জরুরি।
আমরা এখন সবাই কিন্তু গাড়িতে বসে আছি, জ্যামে বসে আছি। এসি ছাড়ছি। আসলে ঘাম হওয়াটা খুব জরুরি।
প্রশ্ন : দৈনন্দিন ত্বকের যত্ন কীভাবে করতে পারি?
উত্তর : আমরা সবাই কম বেশি জানি, ক্লিনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিং। একজন সাধারণ মানুষও সেটা বোঝে। আমি নিয়মিত যে পণ্যগুলো ব্যবহার করছি, এর মধ্যে পাঁচটি উপাদান থাকতে হবে, অ্যান্টিঅ্যাজিংয়ের ক্ষেত্রে। এই পাঁচটি উপাদানকে আমি নাম দিয়েছি অ্যান্টিঅ্যাজিং সুপারস্টার। বিভিন্ন গবেষণায় দেখেছি, বিভিন্ন দেশে আমি প্রশিক্ষণ নিয়েছি, দেখেছি প্রত্যেকটি মডার্ন দেশে এই পাঁচটা জিনিসের প্রতি তারা খুব জোর দেয়।
বিশেষ করে অ্যান্টি অ্যাজিংয়ের ক্ষেত্রে। এর মধ্যে আমাদের দেখতে হবে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ভিটামিন সি যেটি, সেটি। আমরা যদি একটি ভিটামিন সি সিরাম নিয়মিত ব্যবহার করতে পারি, তাহলে সেটি আমাদের জন্য উপকারী হবে। দ্বিতীয় হলো, রেটিনলস। আমরা যে ধরনের ক্রিমগুলো ব্যবহার করছি ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম হিসেবে সেটির মধ্যে অবশ্যই যেন রেটিনল থাকে।
এটি আমাদের বয়স বাড়ার প্রক্রিয়াটাকে অনেক কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। কারণ, রেটিনল কোলাজেন বাড়াতে সাহায্য করে। তাই এ ক্ষেত্রে রেটিনলটা ক্রিমের মধ্যে থাকাটা জরুরি। তৃতীয় আমি বলব, প্যাপটাইটস। আমরা যেই ধরনের ক্রিম বা ফেসওয়াস ব্যবহার করছি না কেন, এর মধ্যে যেন হেক্সা পেপটাইটস, পেন্টা পেপটাইস এই ধরনের জিনিসগুলো থাকে।
সাধারণত আমরা কী করি? হয়তো অনলাইনে কোনো পণ্য পছন্দ হচ্ছে কিনে ফেলছি। কিন্তু উপাদানগুলো দেখছি না। এখন সবার ইউটিউব রয়েছে। সবার একটু একটু করে জানার চেষ্টা করা উচিত।
প্যাপটাইস যদি আমাদের দৈনন্দিন মেকআপের মধ্যে থাকে, এগুলো অ্যান্টিঅ্যাজিংয়ে সাহায্য করে। এটি গেল তিন নম্বর। চার নম্বর হলো, হাইলোরোনিক এসিড। এটি আমাদের ত্বকে, শরীরে এমনি তৈরি হয়। এটি যদি আমরা বাইরে থেকে দিতে থাকি, তাহলে অনেক ক্ষেত্রে বয়সটা বাড়ার গতিকে ধীর করে। এবং শেষে হলো সানস্ক্রিন। সানস্ক্রিন তো অবশ্যই আমাদের ব্যবহার করতে হবে। সূর্য থেকে সুরক্ষা অবশ্যই দরকার।
প্রশ্ন : কার জন্য কোন ধরনের উপাদান ব্যবহার করা উচিত, সেটি আপনারা কীভাবে বোঝেন? উত্তর : ত্বক অনুযায়ী ও বয়স অনুয়ায়ী আমরা পরামর্শ দেই। এগুলো তো আমাদের প্রতিদিনের যত্ন। এ ছাড়া আমাদের কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে।
প্রশ্ন : রোগীরা কোন কোন সমস্যা নিয়ে আপনাদের কাছে যায়?
উত্তর : আমাদের দেশে ইদানীং দেখা যাচ্ছে, ৩৫-এর ওপর হয়ে গেলে, বলিরেখাগুলো খুব তাড়াতাড়ি চলে আসে। আমরা তো এখন প্রতিদিন অনেক মেকআপ করছি। ফাউন্ডেশন দিচ্ছি, পাউডার দিচ্ছি। অনেক ধরনের মেকআপ আমাদের করতে হচ্ছে। এগুলোর কিন্তু একটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এর কারণে কম বয়সেই বলিরেখা চলে আসছে। একজন ৩৫ বছরের ছেলে বা মেয়ের যদি বলিরেখা দেখা দেয়, তাহলে দেখা যায়, তাকে তার বয়সের তুলনায় অনেক বয়স্ক দেখাচ্ছে। এই ক্ষেত্রে আমাদের খুব চমৎকার একটি চিকিৎসা রয়েছে।
প্রশ্ন : বলিরেখা কমানোর চিকিৎসা কী?
উত্তর : এটি হলো বোটক্স। এটি খুব জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি। বোটক্স অ্যান্টিঅ্যাজিংয়ের জন্য সবচেয়ে প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি। আমরা যেই ওষুধটা ইনজেকশনের মাধ্যমে দেই, ইনজেকশন খুব ছোট ইনসুলিন সিরিঞ্জের মতো। এটি ছোট একটি সুঁই দিয়ে করা হয়। ত্বকে অ্যানেসথেটিক ক্রিম লাগিয়ে নিয়ে আমরা এটি দেই। যেই মেডিসিনটা আমরা দেই, এটি কেবল বিশুদ্ধ প্রোটিন। সাধারণত আমরা বলি, এটি চার থেকে ছয় মাস থাকবে। পঁয়ত্রিশের পরে কেউ বলিরেখা নিয়ে এলে আমরা এটি পরামর্শ দেই। সাধারণত বলি বছরে দুবার দিতে। দুবারের বেশি করা লাগে না।
প্রশ্ন : রোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে কী কী দেখেন?
উত্তর : রোগীর বলিরেখা অবশ্যই ডায়নামিক হতে হবে। ধরুন, আমি ভ্রু কুঁচকাচ্ছি, আমার অনেক বলিরেখা পড়ছে। তখনই যদি আমরা বোটক্স শুরু করে দেই, তার যেই বলিরেখাটা স্থায়ী হয়ে যেত, সেটি স্থায়ী হবে না। যদি আমরা আগে শুরু করে দেই প্রক্রিয়াটা, তাহলে তিনি ৫০-৬০ বছর পর্যন্ত অনেক তরুণ থাকবেন।
প্রশ্ন : যাদের ক্ষেত্রে স্থায়ী হয়ে যায়, তাদের জন্য আশার কোনো কথা রয়েছে কী?
উত্তর : আশার কথা রয়েছে। আমরা এই ক্ষেত্রে ত্বকটা দেখি। ত্বকটা যদি একটু টাইট থাকে, এরপর আমরা বয়সটা দেখি। ত্বকের নিচে চর্বির পরিমাণটা দেখি। এখানে অনেক পর্যবেক্ষণের বিষয় রয়েছে। সেগুলো দেখে আমরা পর্যবেক্ষণ করি। এটি ১০ থেকে ১৫ মিনিটের একটি প্রক্রিয়া। খুবই সস্তায় আমরা করি। অনেক সফলভাবে আমরা করছি।
প্রশ্ন : ক্র্যাশ ডায়েটের কারণে অনেক সময় দ্রুত বলিরেখা পড়ছে, চুল পড়ছে তাদের ক্ষেত্রে কী পরামর্শ?
উত্তর : একটি জিনিস দেখুন, আমাদের নানি- দাদিদের কিন্তু এত সমস্যা ছিল না। আমাকে ডায়েট করতে হবে, আমাকে শুকাতে হবে। আমাদের এখন কিন্তু সন্তুষ্টি খুব কম। কেউই আমরা সন্তুষ্ট নই। তখনকার সময়ের কথা যদি চিন্তা করেন, তখন সবাই বিশুদ্ধ দুধ খেত। বিশুদ্ধ ঘি খাচ্ছে। খাঁটি ঘি, খাঁটি মাছ সবকিছুই খাচ্ছে। ওই যে বললাম প্রধান উপাদান যেগুলো সেগুলো কিন্তু বাদ দেওয়া যাবে না। দুধ, ঘি, তেল সবই খেতে হবে।
যদি আমরা একে বাদ দিয়ে দেই, আমাদের ত্বকের নিচে যে চর্বি থাকে, সেটি যদি বজায় না থাকে, তখন সেই উজ্জ্বলতাটা আসবে না। যতই শুকিয়ে যান না কেন শুকনা লাগছে আপনাকে, হয়তো বা স্লিম লাগছে, কিন্তু উজ্জ্বলতা কিন্তু দেবে না। উজ্জ্বলতার জন্য অবশ্যই পেপটাইটস খেতে হবে।
পরামর্শগুলো এনটিভির সৌজন্যে ভিডিওতে দেখুন-
লাইফস্টাইল ডেস্ক, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫