বিএনপির ‘ঢাউস’ কমিটিতে ঠাঁই পাচ্ছেন আরও অন্তত ৩০০ নেতা। সবাইকে খুশি রাখার নীতি গ্রহণ করেছে দলটি। পদবঞ্চিত ক্ষুব্ধ নেতাদের কেউই বাদ থাকছেন না। এর মধ্যে ২৫টি বিষয়ভিত্তিক উপকমিটিতেই জায়গা হচ্ছে প্রায় আড়াইশ নেতার। ঘোষিত কমিটিতেই ৮টি পদ এখনো শূন্য। এক নেতার এক পদের বিধান কার্যকর হলে নির্বাহী কমিটিতে সম্পাদক-সহসম্পাদক পদে আরও অন্তত ৪০ নেতা যুক্ত হবেন। এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির আকার বাড়ানোর চিন্তাভাবনা চলছে। সব মিলিয়ে বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে ৩০০ নেতা অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। একইভাবে কমিটিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে। দলীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো এ তথ্য জানায়। জানা গেছে, কমিটিতে যাচাই-বাছাইসহ শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দায়িত্ব দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দুই সপ্তাহের মধ্যেই কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করা হবে। সেই সঙ্গে দ্রুত মন্ত্রণালয়ভিত্তিক উপকমিটি গঠনের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। কমিটিতে অসঙ্গতিগুলো চিহ্নিত করে তার দ্রুত প্রতিকার করতে বলা হয়েছে। জানা যায়, স্থায়ী কমিটির শূন্য দুই পদে আবদুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ ও মো. শাহজাহানের নাম শোনা যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ বলছেন আবদুল আউয়াল মিন্টুর নামও। এ চারজনের মধ্যে প্রথম দুজন সিনিয়র ভিত্তিতে আর মো. শাহজাহানের নাম এসেছে দলীয় সুশৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের কারণে। এরই মধ্যে বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন মেজর (অব.) হাফিজ। অবশ্য তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, পদের জন্য তিনি রাজনীতি করেন না। বিএনপিই তার শেষ ঠিকানা। জানা যায়, বিএনপির ঘোষিত নির্বাহী কমিটির ১৮০ সদস্যের মধ্যেও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সেখান থেকে বয়োবৃদ্ধ ও অসুস্থদের একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাদের বুঝিয়ে সম্মানজনকভাবে বিদায় দেওয়া হবে। সেখানেও বেশ কিছু নির্বাহী কমিটির সদস্য যুক্ত হতে পারেন। বঞ্চিত কোনো যোগ্য নেতার হতাশ হওয়ার প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি থেকে শুরু করে সিনিয়র সব নেতাকেই কমিটির বিভিন্ন স্থানে রাখার প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানা গেছে। নির্বাহী কমিটি ঘোষণার পর বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে পদবঞ্চিত বেশ কয়েকজন নেতা দেখা করেছেন। কমিটিতে তাদের সম্পৃক্ততা না থাকায় অবাক হন বিএনপি-প্রধান। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তাকে বেগম জিয়া নির্দেশ দেন তাদের তালিকা তৈরি করে রাখতে। যে কোনো সময় তাদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বিএনপির এক সিনিয়র নেতা জানান, চলতি মাসেই বিএনপির কমিটিতে শৃঙ্খলা আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। জানা যায়, স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল ও ছাত্রদলের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া জেলা ও মহানগর পর্যায়ে বিএনপি ও অন্য অঙ্গসংগঠনের যোগ্য নেতাদেরও পৃথক তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এসব নেতা থেকে যারা নির্বাহী কমিটিতে যাওয়ার যোগ্য, তাদের নেওয়া হবে। বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, বেগম খালেদা জিয়া পবিত্র হজে যাওয়ার আগেই যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের কমিটিও দিয়ে যাবেন। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হজে যাবেন তিনি। ওই তিন কমিটিতেও জায়গা হবে তরুণ নেতাদের। আবার মহানগর বিএনপিতেও রাখা হবে বিএনপির বঞ্চিত নেতাদের একটি অংশকে। জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ের নেতারা কেন্দ্রে থাকলে ওইসব শূন্যপদেও নতুন নেতৃত্ব আসবেন। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিএনপির বিভিন্ন পদে আরও নেতার অন্তর্ভুক্তি হওয়ার সুযোগ আছে। কমিটির বাইরে যারা রয়েছেন তাদের সংখ্যা খুব একটা বেশি না। হয়তো অনেকেই প্রত্যাশা অনুযায়ী পদ পাচ্ছেন না, কিন্তু বিএনপির কমিটিতে থাকতে পারছেন।’ তবে বিএনপির মধ্য সারির এক নেতা জানান, সামনে এমন পরিস্থিতি হবে, সেখানে কর্মী পাওয়াই দায় হয়ে যাবে। কারণ, বিএনপিতে এখন সবাই নেতা। আন্দোলনের মাঠে কিংবা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে কর্মী খুঁজতে হবে। দুইশ থেকে আড়াইশ সদস্যের নির্বাহী কমিটি হলে দল আরও অনেক শক্তিশালী হতো। এবারই প্রথম বিএনপির গঠনতন্ত্রে ‘এক ব্যক্তির এক পদ’ ধারা সংযোগ করা হয়। দলীয় কাউন্সিলে তা পাসও হয়। এতে স্থায়ী কমিটি ও নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তারা দল ও সহযোগী সংগঠনের অন্য কোনো পদে থাকতে পারবেন না। একইভাবে জেলা, উপজেলা, থানা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে যারা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে থাকবেন তারা দলের অন্য কোনো পর্যায়ের পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না। তবে অনিবার্য কারণে চেয়ারপারসন ব্যতিক্রম অনুমোদন করতে পারবেন। সেটা হবে সাময়িক প্রয়োজনে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান জানান, ‘বিষয়ভিত্তিক ২৫ থেকে ২৬টি কমিটি করা হবে। সেখানে সদস্যসংখ্যা কত হবে তা এখনো চূড়ান্ত নয়। তবে এসব কমিটিতে বেশ কিছু নেতা যুক্ত হবেন। এক নেতার এক পদ কার্যকর হবে। কিছু নেতাকে হয় জেলায় থাকতে হবে, নতুবা নির্বাহী কমিটি ছাড়তে হবে। সুতরাং কমিটিতে আরও বেশ কিছু নেতার যুক্ত হওয়ার সুযোগ আছে।’
নতুন কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন জানান, ‘চেয়ারপারসন আমাকে যে পদ দিয়েছেন তাতে কিছু বলার নেই। পদের রাজনীতি করি না। শহীদ জিয়ার সঙ্গে আমি রাজনীতি করে আসছি, ভবিষ্যতেও করব।’ ক্ষুব্ধ হলেও তারা পদত্যাগ করছে না : এদিকে কমিটি ঘোষণার পরপরই সিনিয়র পর্যায়ের অর্ধশত নেতা ক্ষুব্ধ হন। অনেকেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। শেষ পর্যন্ত তারা পদত্যাগ করছেন না বলে জানা গেছে। দলীয় নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলেই তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।বাংলাদেশ প্রতিদিন
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৮:২৮ পি,এম ১৩ আগস্ট ২০১৬,শনিবার
ইব্রাহীম জুয়েল
–