রাজনীতি

হতাশা ও ক্ষোভ নিরসনে উদ্যোগ নিচ্ছে বিএনপি

হতাশা ও ক্ষোভ নিরসনে উদ্যোগ নিচ্ছে বিএনপি । তা্ই নবগঠিত নির্বাহী কমিটি নিয়ে বিএনপিতে সৃষ্ট হতাশা ও ক্ষোভ নিরসনে উদ্যোগ নিচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড। এ লক্ষ্যে স্থায়ী কমিটির দুটি, বিষয়ভিত্তিক ২৫০সহ নতুন করে কমপক্ষে তিনশ’ নেতা পদ পাচ্ছেন। এক নেতার এক পদ নিশ্চিত করা হবে।

কিছু পদ ফাঁকা করার লক্ষ্যে পুরনো নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে নিষ্ক্রিয়, বয়স্ক ও অসুস্থদের বাদ দেয়া হবে। এছাড়া ২৫টি বিষয়ভিত্তিক কমিটি গঠন করা হবে। বিক্ষুব্ধ নেতাদের পদ দিয়ে শান্ত করার লক্ষ্যে এসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, এক নেতার এক পদ কার্যকর হলে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কমপক্ষে ৬২ পদ শূন্য হবে। বর্তমানে স্থায়ী কমিটির দুটি, ছাত্র ও যুববিষয়ক সম্পাদকসহ মোট ৮টি পদ ফাঁকা আছে। এর সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক ২৫ কমিটির প্রতিটিতে ১০ জন করে মোট ২৫০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পুরো প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা গেলে আরও ৩২০ নেতাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব দেয়া সম্ভব। এতে দলের বিরাজমান ক্ষোভ, হতাশা ও অসন্তোষ নিরসন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, যোগ্য এবং ত্যাগীদের সমন্বয়েই কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিএনপির মতো একটি বড় দলে অনেক যোগ্য ও ত্যাগী নেতা থাকায় সবাইকে পদ দেয়া সম্ভব হয়নি। প্রত্যাশিত পদ না পেলে কষ্ট পাবে এটাই স্বাভাবিক।

তিনি বলেন, বর্তমান কমিটিতে কিছু পদ ফাঁকা আছে। এক নেতার এক পদ কার্যকর করা গেলে আরও কিছু পদ ফাঁকা হবে। এসব ফাঁকা পদ সমন্বয় করা হলে যাদের মন খারাপ বা ক্ষোভ কিংবা হতাশা আছে তা দূর করা সম্ভব হবে। স্থায়ী কমিটির শূন্য দুই পদেও চেয়ারপারসন শিগগিরই নিয়োগ দেবেন বলে আশা করেন দলটির এই নীতিনির্ধারক।

জানা গেছে, কমিটিতে পরিবর্তন-পরিমার্জন নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। তবে পুরো প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে সময় নেবেন খালেদা জিয়া। স্থায়ী কমিটির শূন্য দুই পদে পর্যায়ক্রমে নিয়োগ দেয়া হতে পারে। কারা আসছেন ওই পদে এই নিয়ে চলছে নানা হিসাবনিকাশ। এখন পর্যন্ত ওই দুই পদের জন্য ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও আবদুল আউয়াল মিন্টু এগিয়ে রয়েছেন। তবে দুই পদের বিপরীতে অন্তত অর্ধডজন যোগ্য নেতা থাকায় বিপাকে আছেন দলের হাইকমান্ড।

দলে শৃংখলা এবং গতি আনতে স্থায়ী কমিটির আকার বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অনেকে। স্থায়ী কমিটির আকার বাড়িয়ে ১৯ থেকে ২১ করা হলে সিনিয়র নেতাদের ক্ষোভ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। সেক্ষেত্রে দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ ও শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের মধ্য থেকে দু’জনকে স্থায়ী কমিটিতে জায়গা দেয়া হতে পারে। তবে স্থায়ী কমিটির পদ সংখ্যা না বাড়ালে নোমান, মিন্টু, হাফিজ ও খোকা এ চারজনের মধ্য থেকে শূন্য দুই পদে নিয়োগ দেয়া হবে।

সূত্র জানায়, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যানদের স্থায়ী কমিটিতে জায়গা দেয়া হলে শূন্য ওই পদে যোগ্যদের স্থান দেয়া হবে। সেক্ষেত্রে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে ভাইস চেয়ারম্যান করা হবে। ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন বর্তমানে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, জয়নাল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভুঁইয়া এবং মিজানুর রহমান মিনু।

সূত্র জানায়, কমিটি ঘোষণার পর শুরু হয়েছে কাদা ছোড়াছুড়ি। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে নানা কৌশলের আশ্রয় নেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি মোবাশ্বের আলম ভুঁইয়াকে নির্বাহী কমিটির পদ দেয়াকে কেন্দ্র করে দেখা দেয় অস্থিরতা। দলের একটি অংশের নেতারা বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি শুরু করেন। তারা চেয়ারপারসনের কাছে গিয়ে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নানা কথা বলেন।

বিষয়টি স্পষ্ট করতে সংশ্লিষ্টদের ডাকেন খালেদা জিয়া। জানতে চান, কেন তাকে (মোবাশ্বের) পদ দেয়া হয়েছে। এ সময় খালেদা জিয়া কিছুটা ক্ষুব্ধ ছিলেন। পরে ওই নেতা জানান, লন্ডনে অবস্থানরত সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশেই মোবাশ্বের আলম ভুঁইয়াকে নির্বাহী কমিটির সদস্য করার সিদ্ধান্ত হয়। তারেকের কথা শোনার পর খালেদা জিয়া বলেন, আপাতত প্রয়োজন নেই। পরে দেখা যাবে।

এদিকে পদবঞ্চিত ও ক্ষুব্ধরা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছেন। কমিটি ঘোষণার পর তারা দফায় দফায় বৈঠক করেন। কমিটি নিয়ে নেপথ্যে যারা ভূমিকা রেখেছেন তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বা সুবিধামতো জায়গায় লাঞ্ছিত করার চিন্তাভাবনা করছেন। বিষয়টি দলের হাইকমান্ডের নজরেও পৌঁছেছে। কমিটি নিয়ে কোনো ঝামেলার সৃষ্টি করা হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। কমিটি ঘোষণার পর কে কী করছেন কে কোথায় বৈঠক করছেন সেই ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে কয়েক নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দলের হাইকমান্ডের এমন কঠোর অবস্থান বুঝতে পেরে ক্ষুব্ধ কয়েক নেতা আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন।

সূত্র জানায়, কমিটি ঘোষণার পর গণমাধ্যমে দেয়া সিনিয়র নেতাদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন খালেদা জিয়া। বিষয়টি নিয়ে এক ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। ওই ভাইস চেয়ারম্যান খালেদা জিয়াকে বলেন, কমিটি ঘোষণার পর তিনি ক্ষুব্ধ ও হতাশ এসব কথা গণমাধ্যমে বলেননি। তার সঙ্গে যোগাযোগ না করেই এসব লেখা হয়েছে। খালেদা জিয়ার এমন কঠোর অবস্থানের পর ক্ষুব্ধ সিনিয়র নেতারা গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলছেন। ওইসব নেতার সমর্থক এবং শুভাকাক্সক্ষীরাও আপাতত তাদের নীরব থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন।

তবে ক্ষুব্ধ সিনিয়র অনেক নেতা চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা না করলেও শুক্রবার আরাফাত রহমান কোকোর কবর জিয়ারতকালে আবদুল আউয়াল মিন্টু, আমানউল্লাহ আমান, নাজিমউদ্দিন আলমসহ কয়েকজন কুশল বিনিময় করেন।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যুগান্তরকে বলেন, মনোক্ষুণ্ণ হওয়া ঠিক হবে না। এ দলে অনেকেই অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কিন্তু তাদের অনেককে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি। এখন ধৈর্য ধরতে হবে। অবশ্যই তাদের মূল্যায়ন করা (যুগান্তর)

নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১:২৮ পি,এম ১৪ আগস্ট ২০১৬,রবিবার
ইব্রাহীম জুয়েল

Share