রাজবাড়ীতে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোনো জাদুঘর নেই। এ আক্ষেপে বাড়ির উঠানেই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে জাদুঘর গড়ে তুলেছেন গোয়ালন্দের মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা গিয়াস। জাদুঘরটিতে সংরক্ষিত মুক্তিযুদ্ধসংশ্লিষ্ট পাঁচ শতাধিক আলোকচিত্র।
গোয়ালন্দ উপজেলা শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার পশ্চিমে ছোট ভাকলা ইউনিয়নের কাশিমা গ্রামে গোলাম মোস্তফা গিয়াসের বাড়ি। এ বাড়ির উঠানেই আড়াই শতক জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি সংরক্ষণ জাদুঘর। ২০০৯ সালের ১৯ মে একটি চৌচালা টিনশেড ঘরে এ জাদুঘর স্থাপনের কাজ শুরু হয়। ২০১৩ সালের ৮ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধকালীন গোয়ালন্দ অঞ্চলের মুজিব বাহিনীর প্রধান মুক্তিযোদ্ধা ফকির আবদুল জব্বার জাদুঘরটি উদ্বোধন করেন। ঘরের দেয়ালে ঠাঁই পেয়েছে রাজবাড়ী ও গোয়ালন্দে স্বাধীনতা সংগ্রাম, জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচিতি, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্মারক, ভারতের কল্যাণী ক্যাম্প, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, পাকিস্তানি সেনাপতির আত্মসমর্পণসহ পাঁচ শতাধিক আলোকচিত্র। এছাড়া এ জাদুঘরে যুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহূত উপকরণ, মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ, সংবাদপত্রে প্রকাশিত যুদ্ধের ইতিহাস ও তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদনের কপি সংরক্ষণ করা হয়েছে। উদ্বোধনের পর থেকেই প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত জাদুঘরটি সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ অসংখ্য মানুষ জাদুঘরটি দেখতে আসে।
জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা গোলাম মোস্তফা গিয়াস জানান, অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ভুলতে বসেছে। তাই নতুন প্রজন্মকে জানাতে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে এ জাদুঘর। জাদুঘরটি পরিদর্শনে কোনো প্রবেশ ফি লাগে না।
তিনি বলেন, একদিন আমরা থাকব না। তখন যেন মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের ভুলে না যায়, সেজন্য আমার এ উদ্যোগ।
জাদুঘরটি দেখতে এসেছিল চৌধুরী আব্দুল হামিদ একাডেমির ১০ম শ্রেণীর ছাত্র সোহান। সে বলল, বাবা-চাচাদের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের কথা শুনে এসেছি। তাই মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আরো জানতে এখানে এসেছি।
ছোট ভাকলা ইউনিয়নের কাশিমা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, নতুন প্রজন্মের অনেকেই জানে না, মুক্তিযুদ্ধ কী? এখানে এসে তারা জানতে পারবে স্বাধীনতার জন্য এ দেশের মানুষ কতটা ত্যাগ স্বীকার করেছিল।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু নাসার উদ্দিন বলেন, এ মহতী উদ্যোগ এ অঞ্চলের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে সহায়তা করবে। সম্প্রতি রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন প্রতিটি উপজেলায় তিনটি বিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জাদুঘর আমাদের কাজে লাগবে। জাদুঘরটির উন্নয়নে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৮:০০ পিএম, ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭, শনিবার
এএস