চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক :
এমনিতেই মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিনিয়ত বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। এরই মধ্যে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এর ফলে বাড়িওয়ালাদের ভাড়া বাড়ানোর পালা যেন এসে গেছে। কিন্তু হুট করে আয় বাড়ার কোন সুযোগ নেই। ফলে বাড়িওয়ালাদের চাপে পিষ্ট হবেন সাধারণ ভাড়াটিয়ারা।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর নোটিশ যেন সময়ের ব্যাপার মাত্র। অথচ গত জানুয়ারিতে নতুন ভাড়া কার্যকর করেছেন ঢাকার বেশির ভাগ বাড়িওয়ালা। মাত্র আট মাসের ব্যবধানে আবারো নতুন করে ভাড়া বাড়ানোর সুযোগ নিবেন বাড়িওয়ালারা।
জানা গেছে, গ্যাসের দাম গড়ে ২৬ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং বিদ্যুতের দাম দুই দশমিক ৯৩ শতাংশ বেড়েছে। এর ফলে গ্যাসের মাসিক বিল এখন এক চুলার জন্য ছয়শ এবং দুই চুলার জন্য সাড়ে ছয়শ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। একইভাবে বাড়ছে বিদ্যুতের দাম। নতুন মূল্যহার আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
রাজধানীর মনিপুরি পাড়াতে সাড়ে ১১শ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক শামীম আহমেদ। ভাড়া দিচ্ছিলেন ২১ হাজার টাকা। গত ৪ ডিসেম্বর বাড়ির মালিক তাকে জানিয়ে দেন, জানুয়ারি থেকে ভাড়া তিন হাজার টাকা বাড়বে। সে অনুযায়ী তিনি ২৪ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে সে বাসায় অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ফলে জানিনা বাসা ভাড়ায় নতুন করে আরো কত টাকা বেশি গুণতে হবে।
অধিকাংশ বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে থোক ভাড়া নির্ধারণ করে দেন বাড়িওয়ালারা। তাই গ্যাস ও বিদ্যুতের নতুন দামে থোক হারে আবারও তারা অতিরিক্ত ভাড়া ধার্য করে দেবেন ভাড়াটিয়াদের।
১৯৯১ সালের `বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন` অনুযায়ী দুই বছরের আগে বাসাভাড়া বাড়ানোর নিয়ম নেই। ভাড়া বাড়ানোর প্রতিকার চেয়ে ভাড়াটিয়ারা আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু বাড়িভাড়ার চুক্তিপত্র থাকে না বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। এমনকি বাড়ির মালিক যে ভাড়া বাড়ানোর কথা মৌখিকভাবে বলেন, এর কোনো প্রমাণও থাকে না।
এক মাসের নোটিশে ভাড়া বাড়ানো হয় আবার এক মাসের নোটিশে বাসা ছেড়ে দিতে হয়- আর তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে বাড়ির মালিকের মর্জির ওপর। কত টাকা ভাড়া বাড়বে তাও ভাড়াটিয়ার সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে মালিকের ইচ্ছার ওপর। ভাড়া বাসার চাহিদা যেহেতু কখনোই কমে না, তাই বাড়িওয়ালারাও ভাড়াটিয়াদের ওপর ইচ্ছামতো চালাতে পারেন `ভাড়া নির্যাতন`। এ `নির্যাতন` মুখ বুজে সহ্য করা অথবা প্রতিবছর বাসা পাল্টানো ছাড়া ভাড়াটিয়াদের আর যেন কিছুই করার থাকে না। আবার বাসা পাল্টিয়েই বা যাবেন কোথায়? ভাড়া তো বাড়ে প্রায় সবখানেই।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাব মতে, ঢাকায় গত ২৪ বছরে (১৯৯০-২০১৩) বাসাভাড়া বেড়েছে প্রায় ৩৭২ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১৪ সালে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বাড়ি ভাড়া বেড়েছে। এর আগে ২০১৩ সালে ১০ দশমিক ৯১ শতাংশ এবং ২০১২ সালে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।