ঈদুল ফিতরের দিন শুক্রবার (১৪ মে) সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব বাস টর্মিনালে অবস্থান ধর্মঘট পালন করবেন পরিবহন শ্রমিকরা। আন্তঃজেলা বাস চলাচলের অনুমতি দেওয়ার দাবিতে এই কর্মর্সচি ঘোষণা করেছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব ও ঢাকা জেলা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
১৩ মে বৃহস্পতিবার রাতে খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে ঈদের সময় আন্তঃজেলা বাস চলাচলে নিষেধাজ্ঞা— এমন দুর্বিসহ দিন কখনোই আসেনি। উল্টো যেসব গাড়ি সারা বছর বা বছরের বেশিরভাগ সময় চালানো যায়নি, বা মালিকরা চালাননি, সেসব গাড়িও ঈদের সময় চালানো হয়েছে। মানুষকে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ করার সুযোগ করে দিতে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এ বছর করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে এটি করা হলেও কোনও লাভ হয়নি। কারণ, মানুষকে ঘরে আটকে রাখা যায়নি। মানুষ বিভিন্ন উপায়ে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে বাড়িতে গেছে, ঠেকানো যায়নি। যা সারা দেশবাসীর সঙ্গে সরকারের নীতি নির্ধারকরাও অসহায়ের মতো শুধুই দেখেছে।’
বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির এই নেতা বলেন, ‘আমি সরকারকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম— করোনা সংক্রমণ যাতে না বাড়ে, সে বিষয়টিকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে গাড়ি এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাবে। রাজধানী ঢাকা থেকেও একইভাবে গাড়িগুলো পরিচালনা করা হবে। সামাজিক দূরত্ব মানার বিষয়টিও নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু সরকার আমাদের কথা শুনলেন না। আমাদের আন্তঃজেলা গাড়িগুলো চালানোর অনুমতি দিলেন না। তাতে কী হলো? মানুষকে ঘরে আটকে রাখা গেলো না। যেভাবে মানুষজন একজনের কাঁধে চড়ে আরেকজন গেছেন, তাতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের কোনও সুযোগই ছিল না। এতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও করছেন সরকার সংশ্লিষ্টরা। অপরদিকে আমরা যারা এই সেক্টরের সঙ্গে জড়িত, তাদের জন্য এই ঈদেকে দুর্বিসহ করে তোলা হলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে লজ্জা নেই। আজ আমাদের অনেকের ঘরেই ভাত খাওয়ার চাল নেই, ঈদের নতুন কাপড় দূরে থাক, এটিই বাস্তবতা।’
পরিবহন মালিক নেতা খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করে টিকে থাকার জন্য সরকারের কাছে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা চেয়েছিলাম। সরকার দেয়নি। শ্রমিকদের জন্য ওএমএস’র চাল চেয়েছিলাম, তাও দেয়নি। সর্বশেষ বাস টার্মিনালে শ্রমিকদের কাছে বিক্রির জন্য ১০ টাকা কেজি দরের চালও চেয়েছিলাম, তাও দেয়নি।’
তিনি জানান, মালিক ও শ্রমিকদের জন্য এসব দাবিদাওয়াসহ আন্তঃজেলা বাসগুলো চালানোর অনুমতি পেতে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বৈঠক করেছি, দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। কোনও কাজ হয়নি। সরকারের কাছ থেকে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের জন্য শুধু ‘সরকার চেষ্টা করছে’— এই তিনটি শব্দের আশার বাণী ছাড়া আর কিছুই পাইনি।
তিনি জানান, আমাদের পিঠও দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাই আবারও আন্তঃজেলা বাস চলানোর সুযোগ দেওয়ার দাবিতে ঈদের দিন শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত দেশের সব বাস টার্মিনালে মালিক-শ্রমিকরা মিলেমিশে অবস্থান ধর্মঘট পালন করবো।
ঢাকা ব্যুরো চীফ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur