সিটিজেন টিভির চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য শফিকুর রহমানকে গভীর রাতে বাসা থেকে তুলে নিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ার লিখে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে। গতকাল বৃহস্পতিবার এমপি শফিকুর রহমান এক লিখিত বক্তব্যে এমন অভিযোগ করেন। তিনি জানান, রাত ১টার দিকে এক ব্যক্তি তাকে বাসা থেকে তুলে বেনজীরের কাছে নিয়ে যান।
শফিকুর রহমান চাঁদপুর-৪ আসনের এমপি ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি।
২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে সরকারের অনুমোদন পায় স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল সিটিজেন টিভি। তবে এখনো এই টেলিভিশন সম্প্রচারে আসেনি।
লিখিত বক্তব্যে মুহম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমি সিটিজেন টিভির চেয়ারম্যান (মালিক)। প্রথমদিকে আমার কোনো শেয়ারহোল্ডার ছিল না।
একা অনএয়ারে আসার মতো টাকাও আমার ছিল না। আমার এক দূরসম্পর্কের আত্মীয় রুট গ্রুপের মালিক রাজ্জাকুল হোসেন টুটুল অনুরোধ করেন, তাকে সঙ্গে নিলে অনএয়ারে আসার জন্য বাড়িভাড়া, অফিস স্টাফসহ ৩০-৪০ লাখ টাকা যা খরচ হয়, তিনি করবেন। আমি তার প্রস্তাবে রাজি হই এবং তাকে সঙ্গে নিই। তবে আজকাল করে বছর চলে যায়।
এরই মধ্যে সরকারের অন্যান্য যা অনুমোদন দরকার তা করে ফেলি।’
তিনি বলেন, ‘হঠাৎ এক রাতে সাড়ে ১২টা থেকে ১টার মধ্যে একজন আমার বনানীর বাড়িতে আসেন। সিটিজেন টিভি স্পোর্টস দিয়ে শুরুর কথা বলে আমাক তুলে নিয়ে ওয়েস্টিন হোটেলের নিচতলায় বেনজীরের কাছে নিয়ে যান। বেনজীর, টুটুল ছাড়াও অচেনা চেহারার আরো দু’জন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। যাদের দেখে মনে হলো সশস্ত্র।
বেনজীর একটা হলুদ কাগজ আমার হাতে দিয়ে স্বাক্ষর করতে বলেন। আমি কাগজের লেখা পড়তে শুরু করলে বেনজীর বাধা দিয়ে বলেন, সিটিজেন টিভি হবে স্পোর্টস ওরিয়েন্টেড। অচেনা দু’জনকে দেখিয়ে জানান তারা স্পোর্টসের লোক। তাদের সঙ্গে একটু চুক্তিতে আসতে হবে। এই কাগজ সেই চুক্তিপত্র। এক পর্যায়ে তারা ধমকের সুরে কথা বলেন। রাত ২টার দিকে আমি স্বাক্ষর দিতে বাধ্য হই।’
লিখিত বক্তব্যে শফিকুর রহমান বলেন, ‘টেলিভিশন চালুর বিষয়ে টুটুলকে বারবার তাগাদা দিলে তিনি বলেন- বেনজীর সব করবেন। তার কাছে কিছু নেই। তখন আমি আরজেএসসিতে গিয়ে সিটিজেন টিভি এভাবে পাই যে, আমার নামে ৩০ শতাংশ শেয়ার, বেনজীরের দুই মেয়ের নামে ১৫ শতাংশ করে ৩০ শতাংশ, টুটুলের নামে ১৫ শতাংশ এবং আরেকজনের নামে ২৫ শতাংশ। এ অবস্থায় ৪ থেকে ৫ বছর চলে গেছে। আমি কিছু করতে পারছি না। ওরাও আইন অনুযায়ী আমাকে বাদ দিয়ে চালু করতে পারেননি। তাগাদা দিলে নানা অজুহাত দেখাতে থাকেন।’
অনুমোদনের সাত বছর পার হলেও এখানো সম্প্রচারে আসেনি সিটিজেন টিভি। তবে এই টিভি চ্যানেলের নামে ২০২১ সালে এক্সিম ব্যাংকে একটি শর্ট নোটিশ ডিপোজিট (এসএনডি) অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। সেখানে এই চ্যানেলের রেজিস্ট্রেশন দেখানো হয় ২০১৭-২০১৮ সাল। আর টিভি চ্যানেলের চেয়ারম্যান হিসেবে দেখানো হয় মুহম্মদ শফিকুর রহমানকে। পরিচালক হিসেবে নাম রয়েছে বেনজীরের বড় মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের।
সিটিজেন টিভি অনুমোদনের অন্যতম শর্ত ছিল– এক বছরের মধ্যে সম্প্রচারে আসতে হবে। পূর্ণাঙ্গ সম্প্রচারে যাওয়ার আগে এবং পূর্ণাঙ্গ সম্প্রচারে যাওয়ার পর দুই বছর পার না হওয়া পর্যন্ত কোনো শেয়ার হস্তান্তর করা যাবে না।
এ বিষয়ে শফিকুর রহমান বলেন, আমি যে কাগজে সই করেছি, সেটি শেয়ার হস্তান্তরের কাগজ, তা আমাকে জানানো হয়নি। আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে লিখে নেওয়া হয়। তারা আমার সঙ্গে ‘মাস্তানি’ করেছেন।
এ বিষয়ে বেনজীর আহমেদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গত ২২ এপ্রিল দুর্নীতি দমন কমিশন বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জীশান মীর্জা, দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে। এর মধ্যে দুদকের তথ্যের ভিত্তিতে আদালত গত ২৩ মে বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি, বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৩টি হিসাব জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দেন। এরপর গত ২৬ মে ১১৯টি জমির দলিল, ২৩টি কোম্পানির শেয়ার ও গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন। এ ছাড়া দুবাই, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রে তার কোনো সম্পদ আছে কিনা গোয়েন্দা তথ্য চেয়ে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে বিএফআইইউ। (কালের কন্ঠ)
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur