বিশেষ সংবাদ

বাসায় কোয়ারেন্টাইনে যেভাবে থাকতে হয়

যদি আপনি করোনাভাইরাসে আক্রান্তের ঝুঁকিতে কিংবা সন্দেহের তালিকায় থাকেন, আপনাকে বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে (নিজের বাসার নির্দিষ্ট একটি ঘরে নিজেকে আলাদা করে রাখা) থাকতে হবে। করোনাভাইরাস যেন না ছড়িয়ে পড়ে সেজন্য ঝুঁকিপূর্ণ বা সন্দেহভাজনকে এভাবে ঘরে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হচ্ছে। সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও এটি পালন করা হচ্ছে। দেশে বিশেষ করে, বিদেশফেরত সবাইকে ঘরে বা স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

কিন্তু কোয়ারেন্টাইনে থাকার সময় আপনার কী করা উচিত? সেইসঙ্গে আপনার পরিবারের অন্য সদস্যদের কী করণীয় থাকবে? তা জানিয়ে কিছু নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

রোববার সরকারের এক তথ্য বিবরণীতে ওই নির্দেশনার কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, ‘কোয়ারেন্টাইনে বাড়ির অন্য সদস্যদের থেকে আলাদা থাকতে হবে। তা সম্ভব না হলে অন্যদের থেকে অন্তত ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। ঘুমানোর জন্য পৃথক বিছানা ব্যবহার করতে হবে। আলো–বাতাস ঢোকে, এমন ঘরে থাকতে হবে।’

‘সম্ভব হলে পৃথক গোসলখানা এবং শৌচাগার ব্যবহার করতে হবে। সম্ভব না হলে ওই স্থানগুলোতে জানালা খুলে রেখে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যদের সঙ্গে ব্যবহার করতে হয়, এমন স্থানের সংখ্যা কমাতে হবে।’

শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো যাবে?

নির্দেশনায় বলা হয়, ‘বুকের দুধ খাওয়ান এমন মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন। শিশুর কাছে যাওয়ার সময় মাস্ক পরতে হবে এবং ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে। কোয়ারেন্টাইনে থাকা শিশুকে তার জন্য প্রযোজ্যভাবে বোঝাতে হবে। তাদের পর্যাপ্ত খেলারসামগ্রী দিতে হবে। খেলার আগে ও পরে খেলনাগুলো জীবাণুমুক্ত করতে হবে।’

খাওয়া, হালকা ব্যায়াম মেনে চলুন

‘কোয়ারেন্টাইনে কোনো পশুপাখি রাখা যাবে না। বাড়ির অন্য সদস্যদের সঙ্গে একই ঘরে অবস্থান করলে, বিশেষ করে এক মিটারের মধ্যে আসার সময় মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। প্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। মাস্ক পরে থাকার সময় এটি হাত দিয়ে ধরা যাবে না। মাস্ক ব্যবহারের সময় সর্দি, থুতু, কাশি, বমি ইত্যাদির সংস্পর্শে এলে সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক খুলে নতুন মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। ব্যবহৃত মাস্ক ঢাকনাযুক্ত ময়লার পাত্রে ফেলে সাবান–পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুতে হবে।’

‘একজনের ব্যক্তিগতসামগ্রী আরেকজন ব্যবহার করবেন না। কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির থালা, গ্লাস, কাপসহ বাসনপত্র, তোয়ালে, বিছানার চাদর অন্য কেউ ব্যবহার করবেন না। এসব জিনিসপত্র ব্যবহারের পর সাবান-পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।’

‘কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির ব্যবহৃত বা তার পরিচর্যায় ব্যবহৃত মাস্ক, গ্লাভস, টিস্যু ইত্যাদি অথবা অন্য আবর্জনা ওই ঘরে রাখা ঢাকনাযুক্ত ময়লার পাত্রে ফেলতে হবে। এসব আবর্জনা উন্মুক্ত স্থানে না ফেলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। দৈনন্দিন রুটিন, যেমন খাওয়া, হালকা ব্যায়াম ইত্যাদি মেনে চলতে হবে। সম্ভব হলে বাসা থেকে অফিসের কাজ করতে হবে। বই পড়া, গান শোনা, সিনেমা দেখা অথবা ওপরের নিয়মগুলোর পরিপন্থী নয় এমন যেকোনো বিনোদনমূলক কাজে যুক্ত হওয়া যাবে।’

পরিচর্যায় কে থাকবেন?

নির্দেশনায় বলা হয়, ‘পরিবারের কোনো সুস্থ সদস্য অর্থাৎ যাদের দীর্ঘমেয়াদি রোগ যেমন- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার, অ্যাজমা ইত্যাদি নেই, এমন একজন ব্যক্তি পরিচর্যাকারী হিসেবে নিয়োজিত হতে পারেন। তিনি ওই ঘরে বা পাশের ঘরে থাকবেন। অবস্থান বদল করবেন না। কোয়ারেন্টাইনে আছেন, এমন ব্যক্তির সঙ্গে কোনো অতিথিকে দেখা করতে দেয়া যাবে না। পরিচর্যাকারী খালি হাতে ওই ঘরের কোনো কিছু স্পর্শ করবেন না।’

‘কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে বা তার ঘরে ঢুকলে, খাবার তৈরির আগে ও পরে, খাবার আগে, শৌচাগার ব্যবহারের পরে, গ্লাভস পরার আগে ও খোলার পরে বা যখনই হাত দেখে নোংরা মনে হবে, তখনই দুই হাত পরিষ্কার করতে হবে। ঘরের মেঝে, আসবাব, শৌচাগার ও বাথরুম প্রতিদিন অন্তত একবার পরিষ্কার করতে হবে। পরিষ্কারের জন্য এক লিটার পানির মধ্যে ২০ গ্রাম বা ২ টেবিল চামচ ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে তা দিয়ে ভালোভাবে মুছে ফেলতে হবে। ওই দ্রবণ সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে।’

‘কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিকে নিজের কাপড়, বিছানার চাদর, তোয়ালে ইত্যাদি গুঁড়া সাবান বা কাপড় কাঁচার সাবান ও পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে বলতে হবে। কাপড় ভালোভাবে শুকাতে হবে। নোংরা কাপড় একটি লন্ড্রি ব্যাগে আলাদা রাখতে হবে। মলমূত্র বা নোংরা লাগা কাপড় ঝাঁকানো যাবে না এবং নিজের শরীর বা কাপড়ে যেন না লাগে, তা খেয়াল করতে হবে।’

উপসর্গ বাড়লে হটলাইন দ্রুত যোগাযোগ

‘কোয়ারেন্টাইনের সময় ফোন, ইন্টারনেটের সাহায্যে যোগাযোগ রাখতে হবে। কোয়ারেন্টিনে থাকার সময় কোনো উপসর্গ যেমন ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি জ্বর, কাশি, সর্দি, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি দেখা দিলে অতি দ্রুত আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করে পরবর্তী করণীয় জেনে নিতে হবে।’

চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কোয়ারেন্টাইন শেষ করুন

‘চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কোয়ারেন্টাইন শেষ হবে। চিকিৎসকের সিদ্ধান্তমতে একজন থেকে অন্যজনের কোয়ারেন্টাইনের সময়সীমা আলাদা হতে পারে। তবে এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এ সময়সীমা ১৪ দিন’,- বলা হয় ওই নির্দেশনায়।

বার্তা কক্ষ,১৬ মার্চ ২০২০

Share