সামাজিকভাবে ও বন্ধুদের মাঝে একটি অতি প্রচলিত প্রবাদ হলো “বাসর রাতে বিড়াল মারা”। বিয়েরঠিক আগে কিংবা বয়ঃসন্ধির পর থেকেই সকল পুরুষ মানসিক প্রস্তুতি নিতে থাকে বাসর রাতে ছল- ছাতুরী করে কিংবা আঁচাড় দিয়ে অথবা গলা টিপে; যেভাবেই সম্ভব বিড়াল মারতে হবে।
প্রসঙ্গতঃ বিড়াল মারা বলতে স্ত্রীকে বশ করা (আরো সোজা কথায় স্ত্রীর সাথে বাসর রাতে শাররীক মিলন করা) বুঝায়। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ছেলেকে তার সমবয়সী বিবাহিত বন্ধুরা বিড়াল মারার নানান বুদ্ধি ফ্রি তে দান করে থাকে। অপর দিকে মেয়ের বড় বোন/ভাবী/দাদী শ্রেনীর আত্মীয়রা বিড়ালনা মেরে বাঘ/স্বামী মহাশয়কে কি করে ধরাশায়ী করা যায় তার কুট-কৌশল শিক্ষা দিয়ে থাকেন।
কথার ধরনে অবশ্যই অনুমান করতে পারছেন এটি যেন একপ্রকার যুদ্ধ-যুদ্ধ পরিস্থিতি! (অন্য বিষয় উত্থাপনের আগেএটা বলে নিতে চাই – পুরুষের পুরুষত্ব যাচাইয়ের জন্যবিয়ের রাতে শাররীক মিলন প্রয়োজনীয়। ভারতের কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে আইন করা হয়েছে – বাসর রাতে নারী শাররীক মিলনে বাধ্য থাকবে – বাসররাতে মিলন না করা সেইদেশে দন্ডনীয় অপরাধ!)
এবার বিষয়টির সাথে সম্পর্কিত কিছু কথাঃ
মেয়েটিঃ আমাদের দেশে এখনো এ্যরেঞ্জ ম্যারেজ এর প্রচলন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিদ্যমান। মা- বাবা একটি মেয়ে এবং ছেলের জোড়া ঠিক করে দেন। এরকম বিয়েতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্বামী এবং স্ত্রীর পরিচয় মাত্র বিয়ের এক সপ্তাহ আগে থেকেসর্বোচ্চ তিন মাস পর্যন্ত হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে আরোও কম সময়ের পরিচয়ও হতে পারে। ধরুন আপনারা একদম অপরিচিত দুইজন মানুষ একটি ঘরে প্রথমবার একত্র হয়েছেন বাসর ঘরে।
কি করে আপনি আশা করতে পারেন জীবনের এ পর্যায় পর্যন্ত (ধরলাম ২২বছর বয়সে মেয়েটির বিয়ে হয়েছে) আসতে গত ২২ বছর যে পুরুষটির সাথে তার দেখা হয়নি পরিচয় হয়নি তার সাথে সে একা থাকতে কি একেবারে স্বাভাবিক আচরন করতে পারবে????
আপনাদের কাছে প্রশ্ন থেকেই গেলো এবার আসা যাক জড়তা একদিনেকেটে যাওয়ার মত নির্লজ্জতা (স্বাভাবিক অর্থে)
বাঙালী মেয়েদের হয়ে গেছে বলে আমি মনে করিনা। এমনকি ছেলেটি যদি পূর্ব পরিচিতও হয় -তবুও লজ্জা হারাতে সময়তো দরকার হবেই!
ছেলেটিঃ যার জন্য এত আয়োজন, এতজন সমাগম – সে হলো বর।বিয়ে কোন পান্তা ভাত খাওয়ার মত সহজ বিষয় নয়।
আগের দিন রাতে রান্নাকরে রাখা হলো; আর সকালে ঘুমথেকে উঠেই তৈরি খাবার খেতেবসে গেলেন! বিয়ের জন্যলম্বা একটা মানসিক এবং শাররীক ধকল শেষে আসে সেই কাঙ্খিত বাসর রাত।
পরিশ্রান্ত শরীর-মনে একজন মানুষ চাইলেই বিড়াল মারা বাঘ হতে পারবে না। তাই সময় ক্ষেপন অতি জরুরী একটি বিষয়।
মনে করি ছেলেটি যুদ্ধ ঘোষনা করেই দিল – বিড়াল আমি মারবই!! একটি মেয়ে যে আপনার ঘরে সারা জীবনের জন্য আসছে তাকে কি আপনি প্রতিপক্ষ হিসেবে নেবেন, নাকি বন্ধু হিসেবে?? বাসররাত একটি মিষ্টি রাত। মেয়েটিকে আপনার মিষ্টতা বুঝতে দিন – কথা বলুন, দুজনের ভাল লাগা মন্দ লাগাশেয়ার করুন। তাকে স্বাভাবিক হতে দিন। এবং যুদ্ধ না করে মনের সাথে মনের মিলন ঘটান, তারপর শরীরের সাথে শরীর মিলনের চিন্তা।সূত্র- একজন লেখকের ব্লগ থেকে