ক্ষুদ্র মুদি দোকানি বাবার একার উপার্জনে সংসারে নিত্য টানাপোড়েন লেগেই থাকে। ফলে মাধ্যমিক পরীক্ষার আগেই ঠিক হলো রুনা লায়লার (২১) বিয়ে।
পড়াশোনা করে স্বাবলম্বী হতে প্রত্যয়ী রুনা বাবা-মাকে অনেক বুঝিয়ে বন্ধ করলেন সে বিয়ে। কিন্তু বিনিময়ে কাঁধে নিতে হলো সংসারের বোঝা।
সেই ঘটনাই বদলে দিলো রুনাকে। আর দশটা গ্রাম্য কিশোরীর খোলস থেকে রুনা হয়ে উঠলেন এলাকার ‘দর্জি আপা’, শিশুদের শিক্ষক, সংসারের অবলম্বন।
এখন রুনাকে নিয়ে গর্ব করেন তারা বাবা-মা। শূন্য থেকে শুরু করা রুনা এখন শুধু উদাহরণই নয়, অনেকের কাছেই প্রেরণা। কিন্তু রুনার শিক্ষক কিংবা দর্জি আপা হয়ে ওঠার পেছনের গল্পটাও ভীষণ সংগ্রামের।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোঘলহাট ইউনিয়নের শিবেরকুটি গ্রামের মুদি দোকানি গোলজার আলীর মেয়ে রুনা। সম্প্রতি ওই গ্রামে গিয়ে রুনা ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো রুনার আজকের রুনা হয়ে ওঠার গল্প।
রুনা বর্তমানে স্থানীয় আদর্শ ডিগ্রি কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। তবে এলাকায় দর্জি আপা বলেই সমধিক পরিচিত তিনি।
রুনা জানান, অভাবের কারণে মাধ্যমিক পরীক্ষার আগেই তার বিয়ে ঠিক করে পরিবার। অনেক বুঝিয়ে বিয়ে বন্ধ করলেও মাধ্যমিক পরীক্ষার খরচ জোগানো ছিল তার জন্য কঠিনতর চ্যালেঞ্জ। এ বাধা কাটিয়ে উঠতে রুনা গ্রামের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের গৃহশিক্ষক হয়ে ওঠেন।
মাধ্যমিক পাসের পর স্থানীয় শিবেরকুটি সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির সহায়তায় বিনামূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ নেন তিনি। পরে ওই সমিতির মাধ্যমে সহজ শর্তে ঋণ নিয়ে একটি সেলাই মেশিন কেনেন রুনা।
এরপর থেকে বাড়িতে বসে শুরু করেন সেলাইয়ের কাজ। সেইসঙ্গে কলেজে ভর্তি হয়ে চলতে থাকে পড়াশোনা। সেলাইয়ের কাজ করেই সংসার নির্বাহে বাবাকে সাহায্যের পাশাপাশি ছোট দুই ভাইয়ের স্কুল-কলেজের খরচও যোগান দিতে শুরু করেন রুনা।
রুনা জানান, সকাল থেকে বিকেল অবধি কলেজ ও পড়াশোনা নিয়েই থাকেন তিনি। বাড়ি ফিরে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সেলাইয়ের কাজ করেন। গ্রামের নানান বয়সী শিশু ও নারীদের পোশাক তৈরি করেন রুনা। ফলে কলেজছাত্রী থেকে রুনার দর্জি আপা হিসেবেই পরিচিতি বেশি।
নিজের এ অবস্থানে আসা প্রসঙ্গে রুনা জানান, আত্মবিশ্বাস থাকলে কোনো বাধাই আসতে পারে না। অভাবের কারণে লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কিন্তু একটি সেলাই মেশিন তাকে এখন স্নাতক পড়ার সুযোগ দিয়েছে। এখন তিনি দর্জির কাজ করে প্রতি মাসে প্রায় ৪ হাজার টাকা উপার্জন করছেন।
ওই গ্রামের সালমা, হালিমা, নাজমা বেগম জানান, রুনা খুবই পরিশ্রমী মেয়ে। দিনে কলেজ ও রাত জেগে প্রদীপ জ্বালিয়ে দর্জির কাজ করেন। ফলে গ্রামের সবাই রুনাকে পছন্দ করেন।
রুনার বাবা গোলজার আলী জানান, আগে পড়াশোনার খরচ চাইলে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেবেন বলে ভাবতেন। এখন রুনা অভাবের সংসারে তাকে প্রয়োজনীয় অর্থ যোগান দিচ্ছে।
জানা গেলো, রুনা লায়লাই নন, সীমান্তবর্তী ধরলা নদীর চরাঞ্চলের অনেক বেকার নারীই এখন দর্জির কাজ করে আত্মনির্ভরশীল হচ্ছেন। এদের একজন ফারজানা আক্তার, তিনি দর্জির কাজ করে সংসারের হাল ধরেছেন। আরেক নারী বৃষ্টি রানী দর্জির কাজ করে সন্তানদের পড়াশোনা করাচ্ছেন।
এদের মতো মোঘলহাট এলাকার ধরলাপাড়ের অর্ধশত নারী শিবেরকুটি সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতিতে সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠেছেন।
এ বিষয়ে শিবেরকুটি সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতির সভাপতি জহুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, তারা সমিতির সদস্যদের ঋণ ও পরিবারের বেকার নারী বা মেয়েদের বিনামূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ এবং সেলাই মেশিন দেন। এতে নারীরা ঘরে বসে উপার্জনের মাধ্যমে সংসারে স্বচ্ছলতা আনছেন। সেইসঙ্গে কমছে নারী নিযার্তনের হার। (উৎস বাংলানিউজ)
করেসপন্ডেন্ট : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১২:৫০ পিএম, ২৯ নভেম্বর ২০১৬, মঙ্গলবার
ডিএইচ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur