নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে বিয়ের সর্বনিন্ম বয়স যথাক্রমে ২১ এবং ১৮ বছর নির্ধারণসহ বাল্য বিয়ে নিরোধে প্রয়োজনীয় বিধান করে (২৭ ফেব্রুয়ারি) সংসদে বাল্য বিবাহ নিরোধ বিল ২০১৭ পাস করা হয়।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন।
বিলে বিধিমালা দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতি বাল্য বিয়ে প্রতিরোধের জন্য জাতীয়, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিরোধ কমিটি গঠন ও এর কার্যাবলী নির্ধারণের বিধান করা হয়েছে।
বিধিমালায় স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা এবং স্থানীয় পর্যায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তির সমন্বয়ে এ কমিটি গঠনের বিধান করা হয়েছে।
বিলে বাল্য বিয়ে বন্ধে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা এবং স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধির সাধারণ ক্ষমতা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, উপজেলা মহিলা ও শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, উপজেলা প্রাথমিক বা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি কোনো ব্যক্তির লিখিত বা মৌখিক আবেদন অথবা অন্য কোনো মাধ্যমে বাল্য বিয়ের সংবাদ পেলে তিনি উক্ত বিয়ে বন্ধ করবেন। অথবা বিধিমালার দ্বারা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
বিলে স্ব-উদ্যোগে বা কোনো অভিযোগের ভিত্তিতে অথবা অন্য কোনো মাধ্যমে তথ্যের ভিত্তিতে নিশ্চিত হয়ে আদালত কোনো বাল্য বিয়ের ওপর নিয়েছে।
বিলে আদালতের নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গকারীকে ৬ মাসের কারাদন্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত এবং অনাদায়ে আরো ১ মাসের কারাদন্ডে দন্ডিত করার বিধান করা হয়েছে।
বিলে বাল্য বিয়ের ক্ষেত্রে মিথ্যা অভিযোগ জনিত অপরাধে অনধিক ৬ মাস কারাদন্ড বা অনধিক ৩০ হাজার টাকা অর্থদন্ডবা উভয় দন্ডে দন্ডিত এবং অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ১ মাস কারাদন্ডে দন্ডিত করার বিধান করা হয়েছে।
বিলে বাল্য বিয়ে করলে প্রাপ্ত বয়স্ক নারী বা পুরুষ, যিনি দায়ী হবেন তাকে অনধিক ২ বছর কারাদ- বা অনধিক ১ লাখ টাকা অর্থ দ- বা উভয় দ-ে দ-িত এবং অর্থদ- অনাদায়ে আরো ৩ মাস কারাদ-ে দ-িত করার বিধান করা হয়েছে।
তবে অপ্রাপ্ত বয়স্ক নারী বা পুরুষের ক্ষেত্রে অনধিক ১৫ দিনের আটকাদেশ বা অনধিক ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় ধরনের শাস্তিযোগ্য করার বিধান করা হয়েছে।
বিলে বাল্য বিয়ে সংশ্লিষ্ট পিতা-মাতাসহ অন্যান্য ব্যক্তির ক্ষেত্রে বাল্য বিয়ের জন্য অনধিক ২ বছর ও অন্যুন ৬ মাস কারাদ- বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-িত এবং অর্থদ- অনাদায়ে আরো ৩ মাস কারাদ-ে দ-িত করার বিধান করা হয়েছে।
বিলে বাল্য বিয়ে সম্পাদন বা পরিচালনাকারীর ক্ষেত্রে অনধিক দু’বছর ও অন্যুন ৬ মাস কারাদ- বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদ- অথবা উভয় দ-ে দ-িত এবং অর্থদ- অনাদায়ে আরো ৩ মাস কারাদ-ে দ-িত করার বিধান করা হয়েছে।
বিলে বাল্য বিয়ে নিবন্ধকের ক্ষেত্রে লাইসেন্স বাতিল, তাকে অনধিক ২ বছর ও অন্যুন ৬ মাস কারাদ- বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-িত এবং অর্থদ- অনাদায়ে আরো ৩ মাস কারাদ-ের বিধান করা হয়েছে।
এ বিলের অন্যান্য বিধানে যা কিছুই থাকুক না কেন, কোন বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্ত বয়স্ক কোনো নারীর সর্বোত্তম স্বার্থে, আদালতের নির্দেশ এবং পিতা-মাতার সম্মতিক্রমে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে বিবাহ সম্পাদিত হলে তা এ আইনের অধীন অপরাধ বলে গণ্য হবে না বলে বিলে বিশেষ বিধান করা হয়েছে।
এ ছাড়া বিলে বাল্য বিয়ে বন্ধে উদ্যোগী হতে শর্তে বাল্য বিয়ের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি, বয়সের প্রমাণের দলিল, ক্ষতিপূরণ প্রদান, অপরাধের আমলযোগ্যতা, জামিন যোগ্যতা এবং অ-আপোষ যোগ্যতা, বিচার পদ্ধতি, সরেজমিনে তদন্ত, মোবাইল কোর্ট আইনত ২০০৯ এর প্রয়োগ, অপরাধ গ্রহণ ও আমলের সময়সীমাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিধান করা হয়েছে।
জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম, সেলিম উদ্দিন ও বেগম রওশন আরা মান্নান বিলের ওপর জনমত যাচাই,বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাব আনলে তা’কন্ঠ ভোটে নাকচ হয়ে যায়।
নিউজ ডেস্ক
।। আপডটে,বাংলাদশে সময় ০৬ : ১৩ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সোমবার
এজি/এইউ