গতকালের মতো আজ সোমবারও বায়ুদূষণে শীর্ষস্থানে চলে এসেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। সকাল ৮টায় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) ঢাকার স্কোর ছিল ২৬২। ২৪৩ নিয়ে স্কোর ভারতের দিল্লি দ্বিতীয়, ১৯০ নিয়ে চীনের উহান তৃতীয়, ১১৫ নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল ১৫তম স্থানে রয়েছে।
অপরদিকে আজ ১ স্কোর নিয়ে ভালো শহরের শীর্ষে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ও ৩ স্কোর নিয়ে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের পোর্টল্যান্ড দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
গতকাল রবিবার ২৩৯ স্কোর নিয়ে শীর্ষ দূষিত শহরের তালিকায় প্রথম স্থানে চলে আসে ঢাকা। ৩৯ স্কোর কম অর্থাৎ ২০০ স্কোর নিয়ে চীনের চ্যাংদু দ্বিতীয়, ১৯৯ নিয়ে ভারতের মুম্বাই তৃতীয়, ১৮৫ নিয়ে পাকিস্তানের লাহোর চতুর্থ স্থানে অবস্থান করছে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ারের তথ্য অনুযায়ী, এর আগে গত ২০ জানুয়ারি থেকে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯ দিনের ৮ দিনই বিশ্বের দূষিত শহরের শীর্ষে ছিল ঢাকা। সারা বিশ্বের বায়ুমান নির্ণয় করে থাকে সুইজারল্যান্ডের এ প্রতিষ্ঠানটি।
তাদের মান অনুযায়ী, একিউআই ৫০-এর মধ্যে থাকলে সেই বাতাসকে বলা হয় ভালো। ১০০ পর্যন্ত সহনীয়। ১০১ থেকে ২০০-এর মধ্যে হলে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য ‘অস্বাস্থ্যকর’ উল্লেখ করা হয়। ২০১ থেকে ৩০০-এর মধ্যে থাকা একিউআই স্কোর ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’।
আর ৩০১ থেকে ৪০০-এর মধ্যে থাকা একিউআই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বা বিপজ্জনক বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের একিউআই নির্ধারণ করা হয় দূষণের পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে। সেগুলো হলো বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), এনও২, সিও, এসও২ এবং ওজোন (ও৩)।
ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যয়নকেন্দ্র (ক্যাপস) বলছে, ২০২২ সালের কোনো মাসেই ঢাকার বায়ুমান ১০১ স্কোরের নিচে ছিল না; গড় বায়ুমান ছিল ১৫৪.৯৭ একিউআই অর্থাৎ ‘অস্বাস্থ্যকর’।
২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রতি মাসে বায়ুর গড় স্কোর ছিল ১৯৪.৮৩ থেকে ২২১ একিউআইয়ের মধ্যে অর্থাৎ মানুষের সহনশীল মাত্রার চেয়ে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’। ২০২২ সালে বর্ষাকালে বায়ুর মান ছিল ১০৫ একিউআইয়ের ওপরে অর্থাৎ অস্বাস্থ্যকর।
অন্যদিকে ২০২২ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে বায়ুর মান ছিল যথাক্রমে ১৭৬.২৩ ও ২৪৪.৪৪ একিউআই এবং চলতি জানুয়ারি মাসে দুই দিন ছিল ৩১৭.৪৪ ও ৩০২.৫৪ একিউআই এবং এক দিন ৪০৪.৪৪ একিউআই হয়, যা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’। আর এ মাসের ১৭ দিনের বায়ুর মান ছিল ২০০ ওপরে।
এদিকে বায়ুদূষণ রোধে আদালত বারবার আদেশ দেওয়া সত্ত্বেও তা বাস্তবায়ন না করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, বায়ুদূষণে মানুষকে মেরে ফেলা হচ্ছে।
এ সংক্রান্ত মামলার শুনানিকালে গতকাল রবিবার বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
আদালতে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী আমাতুল করিম। আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
এদিন শুনানিকালে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে আইনজীবী আমাতুল করিম প্রতিবেদন তুলে ধরে আদালতকে বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশের পরেই উচ্চ পর্যায়ে মিটিং হয়েছে এবং তারা বেশকিছু কার্যক্রম শুরু করেছেন। যার ফলে এই মুহূর্তে পরিবেশ সূচক (ইনডেক্সে) অনুসারে ঢাকার অবস্থান ২৪ নম্বরে রয়েছে।’
এ সময় আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘এই সূচক তো ঠিক নেই। সকালে একরকম থাকে বিকালে আরেক রকম হয়। এটা তো সময় সময় পরিবর্তন হয়।’ এ সময় আদালত বলেন, ‘সূচকে ১ নম্বরে থাকুক আর ২৪ নম্বরে থাকুক, সব মিলিয়ে পরিবেশের সূচকে আমাদের অবস্থান তো ভালো না।’
আদালত আরও বলেন, ‘মিটিং করে কী লাভ, যদি পরিবেশ দূষণ না কমে। এসব বন্ধ করুন। বায়ুদূষণে মানুষকে মেরে ফেলছেন।’
পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, ‘আপনাদের অনেকের স্ত্রী-সন্তান বিদেশে থাকেন, আপনাদের তো সমস্যা নেই। আমাদের তো এখানে থাকতে হয়। এই দূষণে আমাদের তো সমস্যা হয়।’
এর আগে ২০২০ সালে বায়ুদূষণ রোধে ৯ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। পরবর্তীকালে ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে উচ্চ আদালতের যেসব নির্দেশনা রয়েছে- তা বাস্তবায়নের নির্দেশনা চেয়ে গত ৩০ জানুয়ারি হাইকোর্টে আবেদন করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
বার্তা কক্ষ, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩