Home / বিশেষ সংবাদ / বাম পা দিয়ে লিখে রুবেলের সাফল্য
বাম পা দিয়ে লিখে রুবেলের সাফল্য

বাম পা দিয়ে লিখে রুবেলের সাফল্য

বাম পা দিয়ে জে,এস,সি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে সাটুরিয়ার রুবেল মিয়া জিপি এ ২.৯০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লি গ্রামের রিক্সা চালক হবি মিয়ার ছেলে রুবেল মিয়া তিল্লি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে চলতি ২০১৫ সনের অনুষ্ঠিত জেএসসি পরীক্ষা অংশগ্রহন করে।

জন্মের পর থেকেই হাত না থাকায় সে পা দিয়ে লিখে তার শিক্ষা জীবন শুরু করে। বড় হয়ে সে শিক্ষক হতে চায়। বাম পা দিয়েই লিখে রুবেল তার শিক্ষা জীবন শুরু করে।

জন্মের পর থেকেই রুবেল মিয়ার হাত নেই, তাতে কি মা- বাবার উৎসাহ ও নিজের অদম্য ইচ্ছা শক্তি দিয়েই তার পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন। রুবেল মিয়া বড় হয়ে একজন শিক্ষক হতে চান। পি, এস,সির পর আজ সে জেএসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।
রুবেলের বাবা হবি মিয়া জানান, আমি পেশায় একজন রিক্সা চালক, দুই মেয়ে এক পুত্র সন্তান রুবেল কে নিয়ে আমার সংসার, আমার এক মেয়ে বিয়ে দিয়েছি, ছেলে রুবেল ও আরেক মেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে, রুবেল তার ইচ্ছা শক্তি দিয়েই তার শিক্ষা জীবন শুরু করে।

বুধবার জে,এস,নি পরীক্ষার রেজাল্ট বেরুয়েছে সে পাশ করছে এতেই আমি খুশি। অভাবের সংসার ঠিকমত বই কিনে দিতে পারি নি ওর সহপাঠীদের সহযোগীাতায় এবং রুবেল প্রচন্ড ইচ্চা শক্তি দিয়ে আজ এ পর্যন্ত পৌছেতে পেরেছে, তিনি আরো জানান, রুবেলের আশা বড় হয়ে একজন শিক্ষক হবে, কিন্তু আমি জানি না ওর আশা আমি পূরন করে দিতে পারব কি না।

তিল্লি উচ্চ বিদ্যালয় পড়া শুনা করনে অদম্য রুবেল, এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল হাসান ভুইয়া জানান, অদম্য ইচ্ছা শক্তিতে বলীয়য়ান হয়ে রুবেল মিয়া বাম পা দিয়েই দিচ্ছে জেএসসি পরীক্ষা দিয়েই আজ সে উত্তীর্ন হয়েছে তার রোল নম্বার ৩০০২৮৪, রেজি: ১৫১০৫০২৭৬৪ তার আকাশ এখানেই সীমীত নয়। দূরে আরো দূরে যেতে চায়। শিক্ষক হয়ে প্রজন্মের পর পজন্ম ধরে আলো ছড়িয়ে দিতে চায় সবখানে।

তিনি আরো জানান, মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লি ইউনিয়নের তিল্লি গ্রামের হবি মিয়া (৪০) ও ছখিনা বেগম (৩০) তাদের অভাবের সংসারে একটি মেয়ে সন্তানের জন্মের পর রুবেল ১৯৯৮ সালে জন্ম গ্রহন করে, রুবেলের বাবা হবি মিয়া রিক্সা চালান আর মা ছখিনা বেগম অন্যের বাড়াীতে ঝিয়ের কাজ করেন, জন্ম থেকেই তার দু হাত নেই। রুবেল বড় হবার পর তিল্লি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন, সে সময় থেকেই তার দু পা দিয়ে তার শিক্ষা জীবন শুরু হয়।

পরে তিল্লি প্রাথমিক পরীক্ষায় পিএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে জিপিএ ৪.৩৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে আমার বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে২০১৫ সনের জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে সে উত্তীর্ন হয়েছে। আমারা তাকে নিয়ে গর্বিত। রুবেল পা দিয়েই খাতা ভাজ, মার্জিন সহ সব কাজ সুন্দর করে করতে পারেন।

তবে রুবেলের অভাবের সংসারে বাবা রিক্সা চালান আর মা ঝি এর কাজ করে। ৫ জনের সংসারে তার পড়া লেখার খরচ বহন করা তার পরিবারের কষ্ট সাধ্য হয়ে যাচ্ছে। আমারা বিদ্যালয় থেকে সিমাবদ্ধতার মধ্যে যতটুকু পারব সহোযুগিতা করব। কিন্তু রুবেলের শিক্ষা জীবনের পাশে আসার জন্য সমাজের বিত্তবানদের কাছে তিনি আহবান জানান।

আজ বৃহস্পতিবার পরীক্ষার ফল প্রকাশ হওয়ার পর রুবেলের সাথে কথা হয়, রুবেল জানান, আমার জন্মের পর থেকে হাত নেই, মা- বাবার উৎসাহে প্রথমে আমি পড়া শুনা শরু করি, আমার স্কুলের শুরু থেকে আমার সহপাঠি রাজিব, গোবিন্দ, সাহাজু, শিউলি আক্তার সহ সব বন্দু ও বান্দবী ও শিক্ষকরা খুব সহযোগীতা করেছে।

আমার সহপাঠীরা আমার জামা পড়িয়ে দেয়, চুল আচরানো, টিফিনের সময় আমাকে নিয়মিত খাইয়ে দেয়, আমাকে ওরা ওদের টিফিনের টাকা বাচিয়ে পড়া লেখার অনেক খরচ বহন করে দেয়, আমি ওদের ঋন কোন দিন শোধ করতে পারবনা । তাই আমি পড়া লেখা শেষ করে শিক্ষক হতে চাই। আমার মত গরীব ছাত্র- ছাত্রীদের বিনা পয়সায় পড়া লেখা করাতে চাই।

রুবেলের ইউনিয়ন তিল্লি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ জানান, রুবেল শারিরীক প্রতিবন্ধী হয়েও তার অদম্য ইচ্ছা শক্তি দিয়ে পড়া শুনা করছে পা দিয়ে, তাকে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে চলে পিএসসি পরীক্ষায় ৪.৩৩ পেয়ে উত্তীর্ন হলে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে উপবৃত্তি পেলেও তাকে কোন প্রতিবন্ধি ভাতার আওতায় আনা হয়নি, এবং সে আজকে জেএসসী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। রুবেল যেন প্রতিবন্ধি ভাতা পান তার ব্যাবস্থা করে দেবো উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয় থেকে।

নিউজ ডেস্ক ।। আপডেট : ০৮:১০ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫, বৃহস্পতিবার

ডিএইচ