পান শব্দটি বাঙালি সংস্কৃতির সাথে খুব ভালোভাবে জড়িয়ে আছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পান একটি অতি পরিচিত খাবার। সাধারণত অতিথি আপ্যায়ন কিংবা কোন বৈঠকে বা আলোচনা শুরুতে পানের ব্যবহার দেখা যায়।
সাধারণত গ্রামের বিয়ে বাড়ি, বিচার অথবা বৈঠকগুলোতেই আগের ন্যায় পানের ব্যবহার হয়ে থাকে।
পান গাছের পাতাকেই ‘পান’ বলা হয়। এ পাতা চিবিয়ে খাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে বহুকাল থেকে।
সাধারণত বয়স্করাই পান খেয়ে থাকেন। শহরের ও গ্রামে সমানতালে পান দোকান থাকলেও গ্রামাঞ্চলেই বেশী সংখ্যক পান খেতে দেখা যায়। পানের সাথে সুপারি, চুন ও নানান রকমের জর্দা (তামাক জাতীয় দ্রব্য), খয়ের ইত্যাদি একসাথে মিশিয়ে খাওয়া হয়।
অধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এদেশের মানুষের খাবারেও এসেছে ভিন্নতা। আর এর থেকে বাদ যায়নি চির চেনা পান শব্দটি।
আধুনিকতার সাথে সখ্যতা রেখে খাবার পানের রুপও বদলে যাচ্ছে। বর্তমানে শহরগুলোতে সেকেলে (পানের সাথে শুধুমাত্র চুন সুপারী আর জর্দা) পানের পরিবর্তে বাজারে এসেছে ভিন্ন স্বাধের উপাদান। হরেক রকমের মসলার সাথে যুক্ত হয়ে পানের নতুন নাম ‘শাহী পান’ ‘মিষ্টি পান’ ‘তবক পান’ ইত্যাদি।
বিভিন্ন স্বাধের মসলার মিশ্রিত এসব শাহী পান নতুন প্রজন্মের অনেকেই খেয়ে থাকেন। তবে সেটা বেশিরভাগ সখের বসে। এ শাহী পান এখন ইলিশের শহর চাঁদপুরেও দেদারছে বিক্রি হচ্ছে।
এদের একজন ‘শাহী পান’ বিক্রেতা বাবুল ঢালীর সাথে আলাপ হয় চাঁদপুর টাইমসের সাথে। একথালা পনের উপর নির্ভর করেই চলছে তার ৬ সদস্যের সংসার। শহরের জনবহুল স্থানগুলোতেই শাহী পান ওয়ালা বাবুল ঢালীর বিচরণ। স্থানীয় অনেক বয়োবৃদ্ধরা বলে থাকে ‘বাবুল ঢালীর পাতা চাবাইলেই শান্তি…’
তবে বাবুল ঢালীকে সবচেয়ে বেশী দেখা যায়, জেলার একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র বড়স্টেশন মোলহেড (মোহনায়) এলাকায়।
পান বিক্রেতা বাবুল ঢালীর বসবাস শহরের পুরাণবাজার এলাকাতে। প্রায় ৩০ বছর যাবত তিনি মিষ্টি পান বিক্রি করে আসছেন। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ১২ বছর, চিটাগাং ৩ বছর। এছাড়াও তিনি দেশের অনেক জেলাতেই পান বিক্রি করেছেন। বড় একটি থালায় (মেলামাইনের তৈরী) করে পান নিয়ে তিনি শহরের জনবহুল স্থানে ঘুড়ে বেড়ান। এছাড়া বিভিন্ন অভিজাত পরিবারের বিয়ের অনুষ্ঠানে পানের অর্ডার নিয়ে থাকে।
বিয়ের অনুষ্ঠানে মিষ্টি পান নিয়েই বাবুল ঢালি দেশে বহু জেলা ঘুরে বেড়িয়েছেন।
বাবুল ঢালী চাঁদপুর টাইমসকে জানায়, ‘প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫শ’ টাকা বিক্রি করেন। খরচ বাদে তার লাভ হয় গড়ে ৩শ’ টাকা। ৪ ছেলে ও এক স্ত্রীসহ এতেই তার দিন কেটে যায়।
এ ৩শ’ টাকায় স্ত্রী সন্তানের ভরণ-পোষণ ও লেখা-পড়ারা খরচ কিভাবে চলে? জানতে চাইলে তিনি এক বাক্যে বলে বলেন, ‘আল্লায় চালায়’।
বাবুল ঢালী বলেন, ‘আপনাগো দোয়ায় আল্লার রহমতে ভালোই আছি। পান বেইচ্চা যা পাই তা দিয়াই এতো বছর চলছি, আল্লায় চালাইাতাছে।’
ভভিষ্যৎ নিয়ে কি ভাবছেন এমন প্রশ্নে তিনি জানান, ‘আমারা গরিব মানুষ, আমাগো আর ভভিষ্যৎ? চাইড্ডা ডাইল ভাত খাইয়া বাচঁতে পারলেই আল্লাহর দরবারে লাখো শুকরিয়া।’
প্রতিবেদক- আশিক বিন রহিম